গোপাল হালদার, পটুয়াখালী: দুই বিঘা জমিতে সারি সারি থাই আপেল কুল গাছ। আকারে ছোট। বড়জোর চার থেকে পাঁচ ফুট। সারাবাগান সবুজ আর লাল রঙে ছেয়ে গেছে। কুলের ভারে প্রথম বছরেই হেলে পড়েছে গাছগুলো। তাই গাছগুলোকে রক্ষা করতে বাঁশ দিয়ে ঠেকা দিয়ে রাখা হয়েছে।
সরজমিনে আজ এই চিত্র দেখা য়ায় বরই চাষি ইদ্রিস-বেল্লালের বাগানে। ইদ্রিসের বাড়ি পটুয়াখালী সদর উপজেলার ছোটবিঘাই ইউনিয়নের বড়বিঘাই ইউনিয়নের দক্ষিণ তিতকাটা গ্রামে। আর বেল্লালের বাড়ি পটুয়াখালী সদর উপজেলার ছোটবিঘাই ইউনিয়নের কাটাখালী গ্রামে। তিনি কুয়েত প্রবাসী। প্রথম বারের মতো থাই আপেল কুল চাষ করে সফল হয়েছেন তারা।
আপেল কুল বাংলাদেশে চাষ হলেও থাই আপেল কুল একেবারেই নতুন জাত। প্রচলিত আপেল কুল বাউকুলের থেকে আকারে বড় থাই আপেল কুল। গাছের ডালে ডালে ধরে।
স্থানীয়রা জানান, ইউটিউবে কৃষিবিষয়ক প্রতিবেদন দেখে থাই আপেল কুল চাষে উদ্বুদ্ধ হন পটুয়াখালী সদর উপজেলার ছোটবিঘাই ইউনিয়নের কাটাখালী গ্রামের কুয়েত প্রবাসী মোঃ বেল্লাল। সিদ্ধান্ত নেন দেশে তিনি এই জাতের আপেল কুল চাষ করবেন। তিনি তার আত্মীয় বড়বিঘাই ইউনিয়নের দক্ষিণ তিতকাটা গ্রামের ইদ্রিসকে ব্যবসায়ী পার্টনার করেন।
দক্ষিণ তুষখালী কাজীর হাট সংলগ্ন রাস্তার পাশে একটি বাগানে চারা রোপণের এক না যেতেই তাদের বাগানে থাই আপেল কুলের বাম্পার ফলন হয়েছে। ২০২২ সালে দুই বিঘা জমিতে ৪০০ থাই আপেল কুল ও কিছু বলসুন্দরী, টক বরই ও আম গাছের চারা রোপণ করেন তারা। রোপণের ১০ মাসের মাথায় চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে গাছে ধরে আপেল কুল। প্রতি গাছে ২০/২৫ কেজি করে ফলন হয়েছে প্রথম বছরেই।
ইদ্রিস-বেল্লালের বাগান দেখতে আসা গাজী সালালউদ্দিন আবিদ জুমবাংলাকে বলেন, ‘বাগানে থাই আপেল কুলের বাম্পার ফলন দেখে আমি নিজেও এই জাতের বরইয়ের বাগান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অন্যান্য ফসলের তুলনায় বরই অধিক লাভজনক। সামান্য কিছু চারাগাছ নিয়ে পরিক্ষামূলক চাষ করে লাভজনক হলে পরবর্তীতে বানিজ্যিকভাবে চাষ করার পরিকল্পনা আছে আমার।’
জুমবাংলার সাথে আলাপকালে ইদ্রিস জানান, ‘আমার আত্মীয় বেল্লালের পরামর্শ অনুযায়ী মাগুরা থেকে ১০০ টাকা দরে ৪০০টি আপেল কুল কিনে নিয়ে আসি। তারপর দুই বিঘা জমিতে চারা রোপন করি। চারা রোপনের ৯ মাসের মধ্যে প্রতিটি গাছে ফল আসতে শুরু করে। প্রতিটি গাছে এখন প্রায় ৩০ থেকে ৪০ কেজির মতো ফল রয়েছে। এছাড়াও বরই বিক্রির পাশাপাশি এই গাছ থেকে কলম তৈরি করে সেগুলো বিক্রি করেও অতিরিক্ত উপার্জন করতে পারছি।’
তিনি আরও বলেন, আপেল কুলের বাগান করতে প্রায় ৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। প্রথম বছরই কমপক্ষে ৮ লাখ টাকার বরই বিক্রি করতে পারবো আশা করি। এতে আমার খরচের টাকা উঠে যাবে। আর পরবর্তী বছরে যা বিক্রি করবো তা পুরোটাই লাভে থাকবে।
ইদ্রিস জানান, আমার বাগানের কুল খুব সুস্বাদু ও মিষ্টি। পাইকাররা বাগান থেকেই কুল কিনে নিয়ে যাচ্ছে। প্রতি কেজি ১৮০ টাকা দরে বিক্রি করছি। আমার থেকে পরামর্শ নিয়ে অনেকেই কুলের বাগান করছে।
পটুয়াখালী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, ইদ্রিস একজন সফল বরই চাষি। আমি খুব শিগগিরই ইদ্রিসের বাগান পরিদর্শন করবো এবং তাকে যে যে পরামর্শ দেওয়া দরকার তা আমি দেব।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।