নিজ দলের রাজনৈতিক সমাবেশে পদদলনের ঘটনায় ৪০ জনের মৃত্যুর পর দক্ষিণী সিনেমার সুপারস্টার থেকে রাজনীতিক বনে যাওয়া থালাপতি বিজয় এখন ব্যাপক আলোচনায়।
গত শনিবার তামিলনাড়ুর কারুর জেলায় বিজয়ের আয়োজিত এক নির্বাচনী সমাবেশে ভিড়ের চাপে তীব্র ধাক্কাধাক্কি শুরু হলে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর রাজ্যে শুরু হয়েছে পাল্টাপাল্টি দোষারোপের রাজনীতি। বিরোধীরা বলছে, যথেষ্ট পুলিশ মোতায়েন না করায় ভিড় নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছিল প্রশাসন। অন্যদিকে পুলিশ দাবি করেছে, বিজয়ের দল তামিলাগা ভেট্রি কাজহাগাম (টিভিকে) জনসমাগমের ব্যাপকতা অনুমান করতে পারেনি এবং যথাযথ নিরাপত্তা নেয়নি।
৫১ বছর বয়সী বিজয় কয়েক দশক ধরে তামিল সিনেমার অন্যতম জনপ্রিয় মুখ। বক্স অফিসে ধারাবাহিক সাফল্য তাকে ভারতের ধনী তারকাদের একজন করে তুলেছে। অভিনেতা জোসেফ বিজয় চন্দ্রশেখর শৈশবে অভিনয় শুরু করেন এবং ১৯৯২ সালে ‘নালাইয়া থীর্পু’তে নায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। যদিও ছবিটি ব্যবসায়িকভাবে ব্যর্থ হয়েছিল, তবে এখান থেকেই গড়ে ওঠে তার ‘‘সমস্যার সমাধানকারী’’ ইমেজ।
এরপর রোমান্টিক ও কমেডি ছবির পাশাপাশি একাধিক অ্যাকশন হিট উপহার দেন তিনি—যেমন ঘিলি (২০০৪), পোক্কিরি (২০০৭), থুপ্পাক্কি (২০১২) এবং কাত্থি (২০১৪)। নাচের ভঙ্গি ও নায়িকাদের সঙ্গে রসায়ন তাকে ‘‘ইলায়া থালাপাথি’’ বা ‘‘তরুণ সেনাপতি’’ নামে ভক্তদের কাছে বিশেষ জনপ্রিয় করে তোলে। তার সিনেমা মুক্তি মানেই হলে উৎসবমুখর পরিবেশ। এমনকি সমালোচকদের কাছে ব্যর্থ বিবেচিত বিস্ট (২০২২) এবং দ্য গ্রেটেস্ট অব অল টাইম (২০২৪)–ও বক্স অফিসে দারুণ ব্যবসা করেছে।
বিজয়ের রাজনীতিতে আসার আলোচনা নতুন নয়। ২০২১ সালের স্থানীয় নির্বাচনে তার ফ্যান ক্লাব ভালো ফল করেছিল, তখন থেকেই জল্পনা তুঙ্গে ওঠে। অবশেষে তিনি ঘোষণা করেছেন, আগামী বছর মুক্তি পেতে যাওয়া জানা নায়াগান হবে তার শেষ চলচ্চিত্র।
দক্ষিণ ভারতে সিনেমার তারকাদের রাজনীতিতে আসা পুরোনো প্রথা। এমজি রামাচন্দ্রন (এমজিআর) ও জয়ললিতা এর সফল উদাহরণ। তবে কমল হাসান কিংবা রজনীকান্তের মতো তারকাদের রাজনৈতিক যাত্রা ততটা সফল হয়নি। সমালোচকদের মতে, জনপ্রিয়তা থাকলেও তৃণমূল পর্যায়ের অভিজ্ঞতার অভাবেই ব্যর্থ হয় এসব উদ্যোগ।
গত বছর দল গঠনের পর থেকেই বিজয়ের সমাবেশে বিপুল জনসমাগম হচ্ছে। যদিও বিরোধীরা তার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।
ভারতে রাজনৈতিক সমাবেশে পদদলনের ঘটনা নতুন নয়। বিজয়ের সমাবেশে দুর্ঘটনার পর তার ভক্তরা অভিযোগ করেছেন, কর্তৃপক্ষ নিরাপদ ভেন্যুর অনুমতি দেয়নি। তবে কর্মকর্তারা বলছেন, ভেন্যুটি বিজয়ের দলের পছন্দেই ঠিক করা হয়েছিল।
বিজয়ের গ্রেপ্তারের দাবি উঠলেও তার বিপুল জনপ্রিয়তা বিবেচনায় রাজ্য সরকার এখনো সতর্ক অবস্থানে। মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্টালিন এক সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিশন গঠন করেছেন, যা দুই মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে। বিজয়ের দলও মাদ্রাজ হাইকোর্টে মামলা করে কেন্দ্রীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছে।
তবে সমালোচনার বিষয় হচ্ছে—এখনও পর্যন্ত বিজয় স্বশরীরে নিহতদের দেখতে যাননি। যদিও এক বিবৃতিতে তিনি গভীর শোক প্রকাশ করে ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তার ঘোষণা দিয়েছেন। তবু এই দুর্ঘটনা তার জনপ্রিয়তা ও রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষায় কী প্রভাব ফেলবে, সেটিই এখন সবার নজরে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।