ইতিহাসের পাতায় এমন কিছু গল্প লুকিয়ে থাকে, যেখানে ব্যক্তির জীবনের চেয়েও বড় হয়ে ওঠে একটি জাতির করুণ পরিণতি। উইলিয়াম ল্যানি—যিনি ইতিহাসে ‘কিং বিলি’ নামে পরিচিত—ছিলেন তেমনই একজন মানুষ। তিনি কোনো যুদ্ধে নিহত হননি, কিন্তু তার গোটা জাতিকেই প্রায় মুছে ফেলা হয়েছিল পৃথিবীর মানচিত্র থেকে। মৃত্যুর পরেও শান্তিতে ঘুমোতে দেওয়া হয়নি তাকে; তার দেহ নিয়ে চলেছিল গবেষণা, আর তাকে দাফন করতে লেগেছিল দীর্ঘ ১২২ বছর।

আজও তার নাম ইতিহাসে বেঁচে আছে, কারণ তিনি ছিলেন তাসমানিয়ার শেষ পূর্ণ রক্তের আদিবাসী পুরুষ । অর্থাৎ, তার বাবা-মা দুজনেই ছিলেন তাসমানিয়ার স্থানীয় পালাওয়া জাতির মানুষ। তার রক্তে ছিল না কোনো ইউরোপীয় মিশ্রণ। তাই তার নাম উইলিয়াম ল্যানি হলেও, ইতিহাসে তিনি পরিচিত কিং বিলি নামে।
ইউরোপীয় উপনিবেশকারীরা, অর্থাৎ ব্রিটিশরা, মানুষকে বিচার করত কেবল গায়ের রঙ আর জাতি দিয়ে। এই ভয়ংকর বর্ণবাদী মানসিকতাই একসময় ল্যানির পুরো জাতি অর্থাৎ পালাওয়া জনগোষ্ঠীকে বিলুপ্তির পথে নিয়ে যায়। ১৮০৩ সালে যখন ব্রিটিশরা এই দ্বীপে আসে, তখন তারা ঘোষণা দেয় যে এই দ্বীপে কোনো মানুষ নেই— অর্থাৎ যে জমিতে কেউ নেই, সেটি দখল করা যায়। সেই মানসিকতা থেকেই তারা শুরু করে ‘কালো যুদ্ধ’। হাজার হাজার তাসমানিয়ার পুরুষকে হত্যা করা হয় এবং নারী ও শিশুদের বন্দি করে ফ্লিন্ডার্স দ্বীপে পাঠানো হয়।
শিশু অবস্থায় থাকায় উইলিয়াম ল্যানি সেই গণহত্যা থেকে বেঁচে যান। বড় হয়ে তিনি দেখতে পান, তার জাতি প্রায় বিলুপ্ত এবং তাদের মধ্যে একমাত্র পূর্ণ রক্তের পুরুষ তিনিই।
তবে মাত্র ৩৪ বছর বয়সে যক্ষ্মায় মারা যান উইলিয়াম ল্যানি। কিন্তু মৃত্যুর পর শুরু হয় আরও এক নির্মমতা। হোবার্টের মেডিকেল কলেজ এবং জাদুঘরের মধ্যে তার দেহ নিয়ে রীতিমতো লড়াই শুরু হয়। তথাকথিত ‘গবেষণার নামে’ রাতে কেটে নেওয়া হয় তার খুলি, হাত-পা এবং শরীরের অন্যান্য অংশ। তার দেহাংশ শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে ইউরোপের গবেষণাগারে পড়ে থাকে। তাসমানিয়ার আদিবাসীরা দীর্ঘকাল ধরে লড়াই চালিয়ে যান তার দেহের অবশিষ্ট অংশ ফিরিয়ে আনার জন্য।
ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেওয়ার পর দেশের যেসব অঞ্চলে আঘাত হানবে ‘মন্থা’
অবশেষে ১৯৯১ সালে, অর্থাৎ মৃত্যুর ১২২ বছর পর, উইলিয়াম ল্যানির দেহাংশ ফিরিয়ে আনা হয় তাসমানিয়ায়। সেই মাটিতেই তাকে দাফন করা হয়, যেখান থেকে মুছে দেওয়া হয়েছিল তার পুরো জাতিটিকে। ইতিহাসের নির্মমতার সাক্ষ্য বহনকারী ‘কিং বিলি’র গল্পটি আজও বেঁচে আছে এক জাতির যন্ত্রণাদায়ক সংগ্রামের প্রতীক হয়ে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



