জুমবাংলা ডেস্ক: সব ধরনের মাছের দাম কমেছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে। সেই সঙ্গে গত সপ্তাহের তুলনায় পাইকারি এ বাজারে ইলিশের মণ প্রতি দাম কমেছে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা। বাংলানিউজের প্রতিবেদক জাহিদুল ইসলাম মেহেদী-এর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বিস্তারিত।
বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে।
মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পাইকাররা জানান, গভীর সমুদ্রে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরা পড়ায় পাইকারি বাজারে কমতে শুরু করেছে সব ধরনের সামুদ্রিক মাছের দাম। গত সপ্তাহে এক কেজি ওজনের ইলিশের মণ প্রতি দাম ছিল ৫৫ থেকে ৬০ হাজার টাকা। যা বর্তমানে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
জাটকা (ছোট ইলিশ) গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকা মণ, যা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকায়।
পাইকারি মাছের দাম কমলেও খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়েনি। ক্রেতারা খুব একটা খুশি না। ক্রেতারা বলেছেন, দাম ১০০ টাকা বাড়িয়ে ১০ টাকা কমানো হয়। তাছাড়া পাইকারি বাজারে মাছের দাম কমলেও স্থানীয় খুচরা বাজারে ক্রেতাদের কিনতে হয় বেশি টাকা দিয়েই। পাইকারি বাজার থেকে মাছগুলো দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যায়। স্থানীয় বাজারে মাছের দাম একই রকম থাকে।
ক্রেতারা আরও বলেন, বাজারে ঢুকলে হতাশ লাগে, কেনার মতো অনেক কিছুই আছে, কিন্তু পর্যাপ্ত টাকা নেই পকেটে।
বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন পাথরঘাটা ঘাটের আড়তদার সমিতির সভাপতি জমাদ্দার বলেন, বর্ষা মৌসুম শুরু হলে আবার চাঙা হয়ে উঠবে মাছের বাজার। এখন মাছের সরবরাহ বাড়ায় আমদানি-রফতানি বাড়বে বলে আশা করছি।
মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পাইকার কালাম শেখ বলেন, সমুদ্রে মাছ বেশি ধরা পড়ায় দাম কমে গেছে পাইকারি বাজারে। তাই ব্যস্ত সময় পার করতে হচ্ছে আমাদের। গত সপ্তাহের তুলনায় তিনগুণ মাছ কিনতে পারছি। আশা করি, এসব মাছ বিভিন্ন মোকামে পাঠিয়ে ভালো লাভ হবে।
বরগুনা জেলে সমিতির সভাপতি মন্নান মাঝি জানান, গত কয়েকদিন ধরে জেলেদের জালে বেশি মাছ ধরা পড়ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারবেন তারা।
তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি বিভিন্ন জেলায় বন্যা হওয়ার কারণে চাষের মাছ নদীতে মিশে যাচ্ছে, ফলে জেলেদের জালে মাছ ধরা পড়ছে বেশি। এ জন্য দাম কিছুটা কম। এমনি অন্যান্য মাছের দাম বেশিই।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দুর্গোৎসব উপলক্ষে ৪৯ প্রতিষ্ঠানকে ভারতে ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। এর মধ্যে বরিশালের তিনটি প্রতিষ্ঠান রপ্তানি করতে পারবে ইলিশ। দেশের ৪৯ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ভারতে যাচ্ছে দুই হাজার ৪৫০ মেট্রিক টন ইলিশ। রপ্তানির কোনো প্রভাব এখনো পড়েনি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র পাথরঘাটায়।
জেলায় মাছের উৎপাদন ও চাহিদা:
মাছের মোট উৎপাদন ১ লাখ ৯ হাজার ৭০ মেট্রিক টন। মাছের মোট চাহিদা ২৬ হাজার ৯৩৭ মেট্রিক টন। উদ্বৃত্ত মাছের পরিমাণ ৮২ হাজার ১৩৩ মেট্রিক টন।
বিগত পাঁচ বছরে মাছের উৎপাদন:
২০১৫-১৬ অর্থ বছরে অভ্যন্তরীণ ১৭ হাজার ৩০৩ (মেট্রিক টন) ও সামুদ্রিক ৭৪ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন। মোট ৯২ হাজার ০০৩ মেট্রিক টন উৎপাদন।
২০১৬-১৭ অর্থ বছরে অভ্যন্তরীণ ১৭ হাজার ৩৫৩ মেট্রিক টন ও সামুদ্রিক ৭৫ হাজার ১৫০ (মেট্রিক টন)। মোট ৯২ হাজার ৫০৩ মেট্রিক টন উৎপাদন।
২০১৭-১৮ অর্থ বছরে অভ্যন্তরীণ ১৮ হাজার ৩৭১ মেট্রিক টন ও সামুদ্রিক ৮০ হাজার ৯৭ মেট্রিক টন। মোট ৯৮ হাজার ৪৬৮ মেট্রিক টন উৎপাদন।
২০১৮-১৯ অর্থ বছরে অভ্যন্তরীণ ১৯ হাজার ৬৭৪ মেট্রিক টন, সামুদ্রিক ৮৩ হাজার ৫৮২ মেট্রিক টন। মোট ১ লাখ ৩ হাজার ২৫৬ মেট্রিক টন উৎপাদন।
২০১৯-২০ অর্থ বছরে অভ্যন্তরীণ ২১ হাজার ২৪০ মেট্রিক টন, সামুদ্রিক ৯০ হাজার ১২৬ মেট্রিক টন। মোট ১ লাখ ১১ হাজার ৩৬৬ মেট্রিক টন উৎপাদন।
বিগত পাঁচ বছরে ইলিশ মাছের আহরণ:
২০১৫-১৬ সাগরে ৬০ হাজার ৭০ মেট্রিক টন, নদীতে ১৭৩৫ মেট্রিক টন। মোট ৬১ হাজার ৮০৫ মেট্রিক টন উৎপাদন।
২০১৬-১৭ সাগরে ৬২ হাজার ২৭৭ মেট্রিক টন, নদীতে ২ হাজার ৯১ মেট্রিক টন। মোট ৬৪ হাজার ৩৬৮ মেট্রিক টন উৎপাদন।
২০১৭-১৮ সাগরে ৬৬ হাজার ৯১৭ মেট্রিক টন, নদীতে ৪ হাজার ৮২২ মেট্রিক টন। মোট ৭১ হাজার ৭৩৯ মেট্রিক টন উৎপাদন।
২০১৮-১৯ সাগরে ৬৭ হাজার ৩৩ মেট্রিক টন, নদীতে ৪ হাজার ৮৫০ মেট্রিক টন। মোট ৭১ হাজার ৮৮৩ মেট্রিক টন উৎপাদন।
২০১৯-২০ সাগরে ৬৮ হাজার ২৩০ মেট্রিক টন, নদীতে ৫ হাজার ১৫১ মেট্রিক টন। মোট ৭৩ হাজার ৩৮১ মেট্রিক টন উৎপাদন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।