![](https://i0.wp.com/inews.zoombangla.com/wp-content/uploads/2022/07/%E0%A6%A6%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A7%9C%E0%A6%BF-%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A6%BE.jpg?resize=788%2C354&ssl=1)
ফারুক তাহের : এক সময় অখণ্ড বাংলার রাজধানী ছিল গৌড়ে। বর্তমান চাপাইনবাবগঞ্জ ও আশপাশের এলাকা নিয়েই ছিল প্রাচীন গৌড়। স্বাধীন বাংলার সুলতান আলাউদ্দিন হুসাইন শাহ-এর রাজত্বকালে ১৫০২ খ্রিস্টাব্দে সুলতানের আদেশে সেই গৌড়ের শিবগঞ্জের ফিরোজপুরে নির্মিত হয় এক সুবিশাল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। নাম হয় দরসবাড়ি মাদ্রাসা।
আরবিতে দরস অর্থ পাঠ। উচ্চারণ বিকৃতির কারণে তা হয়ে গেছে দারাস। বাংলার প্রথম যুগের মুসলিম স্থাপত্যকীর্তির এক অনন্য নিদর্শন এই দারাসবাড়ি মাদ্রাসা এবং সন্নিকটেই রয়েছে আরেক ঐতিহাসিক ইসলামী স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শন দারসবাড়ি মসজিদ।
ঐতিহাসিকদের মতে, দারাসবাড়ি মাদ্রাসার পাঠক্রম ও অন্যান্য দিক বিবেচনায় এটি ছিল একটি আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সমতুল্য। বিভিন্ন জনপদ থেকে শিক্ষার্থীরা এসে এখানে জ্ঞানার্জনের জন্য সমবেত হতেন এবং এটি পুরোটাই ছিল আবাসিক। এখানে মুহাম্মদ বিন ইয়াজদান বখশ নামের এক বুজুর্গ অলি নিজ হাতে বুখারী শরীফ লিপিবদ্ধ করেন এবং তিনিই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশাল গ্রন্থাগার গড়ে তোলেন।
দারাসবাড়ি মসজিদ এবং মাদ্রাসার এই গৌরবময় ইতিহাস ও ঐতিহ্য মাটিচাপা ছিল দীর্ঘকাল। গাছগাছালিতে ঘেরা এই ভূখণ্ড ছিল এক ভূতুড়ে পরিবেশ। দিনের বেলাতেও ভয়ে কেউ ঘেঁষত না ওই দিকটায়। সত্তরের দশকের শুরুর দিকে খনন কাজের মাধ্যমে আবিস্কৃত হয় ইতিহাসের এক নিগূঢ় তথ্যসমৃদ্ধ দারাসবাড়ি মাদ্রাসা ও মসজিদের।
এটি মূলত একটি আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় কমপ্লেক্স। এই ইসলামী স্থাপত্য নিদর্শনটি ছিল বর্গাকৃতির। সোনামসজিদ স্থল বন্দরের দিকে সামান্য সামনে গিয়ে সড়কের পশ্চিম পাশে অবস্থিত প্রাচীন এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ধ্বংসাবশেষ।
এই ঐতিহাসিক স্থাপনার সবগুলো বাহুর দৈর্ঘ্য ৫১.৫২ মিটার। কমপ্লেক্সের মাঝামাঝি অংশে ৩৭.৫ মিটার পরিমাপের বর্গাকার চত্বরের পশ্চিম বাহু ছাড়া অপর তিন বাহুতে এক সারি করে প্রকোষ্ঠ এবং তিন বাহুর মধ্যবর্তীতে ছিল তিনটি নামাজের জায়গা বা ইমামের কক্ষ। তিনটি কক্ষেই রয়েছে আলাদা আলাদা তিনটি অবতল মেহরাব। স্থাপনাগুলোর দেওয়াল পোড়ামাটির ফলক ও নকশায় অলংকৃত।
![](https://i0.wp.com/inews.zoombangla.com/wp-content/uploads/2022/07/%E0%A6%A6%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A7%9C%E0%A6%BF-%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A7%A7.jpg?resize=788%2C354&ssl=1)
দারাসবাড়ি কমপ্লেক্সে আরো ৩৭টি কক্ষ ছিল। ছিল ওয়াক্তিয়া মসজিদ একটি, অফিস একটি। ছিল তিনটি প্রবেশপথ। বাহ্যিকভাবে দারসবাড়ি ইসলামি কমপ্লেক্স বা বিশ্ববিদ্যালয়ের কক্ষ সংখ্যা ৪০টি হওয়ার কারণে, দারসবাড়িকে চল্লিশ ঘর বা চল্লিশ বাড়িও বলা হতো।
দারাসবাড়ি মাদ্রাসার কাঠামোর অংশবিশেষ এখনো টিকে রয়েছে। ভগ্ন দেওয়ালের এক তৃতীয়াংশ ও ভূগর্ভস্থ ভীত প্রমাণ করছে, একদা এ অঞ্চলে ছিল সুশিক্ষিত আধুনিক মুসলিম সভ্যতার সূতিকাগার। ভূকম্পন, অন্য কোনো প্রাকৃতিক বা রাজনৈতিক কারণে হারিয়ে গেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পাঁচ শতাব্দী প্রাচীন ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থিত্ব।
পাঁচ শতাব্দীরও অধিক পুরনো এই প্রাচীন চাঁপাইনবাবগঞ্জের দারাসবাড়ি ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাটিচাপা ধ্বংসাবশেষের ওপর নতুন আরেক দারাসবাড়ি মসজিদ ও মাদ্রাসা নির্মাণের দাবি তুলেছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা মনে করেন, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আবারও নতুন জীবন পেতে পারে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পাঁচ শতাব্দী প্রাচীন ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থিত্ব। কেননা, ইউনেসকো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যখ্যাত ৭ম শতাব্দী থেকে আনুমানিক ১২০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত টিকে থাকা নালন্দা মহাবিহার ছিল ভারতের অন্যতম প্রাচীন ও উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ১৯৫১ সালে নালন্দা মহাবিহার ফিরে পায় তার হারানো ঐতিহ্য ও সজীবসত্তাগত অস্থিত্ব। ২০০৬ সালে নালন্দা মহাবিহার একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতি পায়। অর্থাৎ শিবগঞ্জের দারাসবাড়িতে একটি ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা এখন সময়ের দাবি।
লেখক: আবাসিক সম্পাদক, জুমবাংলা.কম
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।