বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক: পাকা কলার প্রতি লোভ নেই, বাংলাদেশে এমন মানুষের সংখ্যা বিরল। তবে দিন দিন দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠছে কলা। সেই সঙ্গে বাড়ছে কলাম দাম। এমন সময়ে ফুল থেকে টিস্যু কালচার পদ্ধতি ব্যবহার করে পাঁচ ধরনের উন্নত জাতের কলা উদ্ভাবন করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন। দীর্ঘ পাঁচ বছরের গবেষণায় এই সফলতা পেয়েছেন বলে জানান তিনি।
তিনি জানান, উদ্ভাবিত নতুন জাতের কলা অধিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন। উচ্চ ফলনশীল ও কম সময়ে ফলন পাওয়া যায়। ইতিমধ্যে দেশজুড়ে রাবির এই গবেষকের চারা নিয়ে চাষাবাদ শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্ট চাষিরা বলছেন, প্রচলিত সাধারণ কলার চেয়ে নতুন জাতের কলা চাষে ৩০-৪০% বেশি লাভ পাওয়া যায়।
এছাড়া টিস্যু কালচার চারা লাগালে সনাতন পদ্ধতির চেয়ে ২-৩ মাস আগে কলা সংগ্রহ করা যায়। টিস্যু কালচার কলা দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ এবং রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব।
অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘২০১৭ সালে টিস্যু কালচারের মাধ্যমে কলার চারা উদ্ভাবনের জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেন। গবেষণার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ও রাবি প্রশাসন তাদের ৪ লাখ টাকা দেয়। তারা কলার স্যুট টিপ বা ফুলের টিস্যু নিয়ে প্রথমে জীবাণুমুক্ত করেন। পরে ল্যামিনার ফ্লো-র ভেতর নিয়ে টিস্যুকে কাচের পাত্রে নির্দিষ্ট তাপমাত্রা ও নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে উদ্ভিদের বিভিন্ন রকমের হরমোন ও প্রয়োজনীয় কৃত্রিম খাবার ব্যবহার করে ৫-৬ মাস ধরে মাইক্রোস্যুট তৈরি করেন। পরে ওই মাইক্রোস্যুটগুলোতে হরমোন ব্যবহার করে শিকড় তৈরি করেন। এরপর ল্যাব থেকে বের করে পলি হাউজের ভিতর সিডলিং ট্রে-তে কোকোপিট ভরে তার উপর বসানো হয়। এর এক মাস পরে চারাগুলোকে মাটির পলিব্যাগে স্থানান্তর করা হয়। পলি হাউজের ভিতরে মাটির ব্যাগে চারাগুলোকে ২-৩ মাস ধরে বিশেষ পদ্ধতিতে বাইরের আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাওয়ানো হয়। একপর্যায়ে মাঠে রোপনের উপযুক্ত হলে সেগুলো চাষিদের নিকট হস্তান্তর করা হয়। অর্থাৎ, ইন-ভিট্রো মাইক্রোপ্রোপাগেশন পদ্ধতিতে বিভিন্ন জাতের কলার টিস্যু কালচার চারা উৎপাদনে সাফল্য অর্জন করেছেন তারা।
জানা যায়, পৃথিবীর গ্রীষ্ম ও উপ-গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশে কমবেশি কলার চাষ হয়। খাদ্য শস্যের মধ্যে উৎপাদনের দিক থেকে বিশ্বে কলার অবস্থান চতুর্থ। দক্ষিণ আমেরিকার দেশসহ ভারত ও ফিলিপিন শীতপ্রধান দেশে কলা রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে। কিন্তু বাংলাদেশের কলা ফেটে যাওয়া, কলার গায়ে কালো দাগ পড়া, কলার ইউনিফরমিটি না থাকা, কলা এক ব্যাসের না হওয়ায় একসঙ্গে না পাকা, কলাতে মাত্রারিক্ত কীটনাশকের উপস্থিতির কারণে রপ্তানির শর্তপূরণ করতে পারে না। তবে রাবিতে উদ্ভাবিত টিস্যু কালচার পদ্ধতির কলা ল্যাবরেটরীতে তৈরি বলে ১০০% রোগ-জীবাণু মুক্ত হয়। কীটনাশক কম ব্যবহার হয়।
অধ্যাপক আনোয়ার বলেন, ‘আমাদের মূল লক্ষ্য- অল্প খরচে দেশের ১৮ কোটি মানুষকে স্বল্প মূল্যে অধিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন নির্ভেজাল কলা খাওয়ানো। এ জন্য সারা দেশের কৃষকদের পাঁচ জাতের চারা স্বল্পমূল্যে-বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে। এই সময়ের মধ্যে কৃষকদের কাছ থেকে অভাবনীয় সাড়া মিলেছে। বেসরকারি উদ্যোগে দেশজুড়ে টিস্যু কালচার ল্যাবে চারা উৎপাদন করা সম্ভব। তবে টিস্যু কালচার চারা তৈরির পদ্ধতিসমূহ এখনো প্যাটেন্ট হয়নি।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, ‘টিস্যু কালচারের মাধ্যমে রাবির গবেষকদের উদ্ভাবিত উন্নত জাতের কলার চারা ইতিমধ্যেই সারাদেশে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকায় এই কলার চাষ হচ্ছে। এই কলার প্রধান বৈশিষ্ট্য কলার মোচা একসঙ্গে বের হওয়ায় উচ্চ ফলনশীল ও স্বাভাবিকের চেয়ে পরিপক্ব হতে সময় কম লাগে। সারা বছর এই কলার চারা রোপন করা যায়। সারাদেশে টিস্যু কালচার চারা সরবরাহ সম্ভব হলে দেশে কলা চাষে বিপ্লব ঘটবে।
গোটা পৃথিবী কী লুকিয়ে আপনার শরীরেই? প্রশ্ন উঠছে যে ছবি থেকে
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।