জুমবাংলা ডেস্ক : ছেলেরা রেস্টুরেন্টে খেতে যাওয়ার জন্য বায়না ধরেছিল। বিষয়টি মা নাজিয়া স্বামী আশিককে ফোন করে জানিয়েছিলেন। আশিক ছিলেন অফিসে, বনানীতে। স্ত্রীকে বলেন, ছেলেদের নিয়ে পাশেই কোনও একটি রেস্টুরেন্ট যেতে। নাজিয়া দুই ছেলেকে নিয়ে যান খানাস নামে একটি রেস্টুরেন্টে। সেখানে গিয়ে বার্গার খেয়েছেন সবাই। কিন্তু খাওয়া শেষে রেস্টুরেন্ট থেকে আর বের হয়ে আসতে পারেননি। বেইলি রোডের ভয়াবহ আগুনে মারা গেছেন তিন জনই।
মধ্যরাতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে আহাজারি করছিলেন নাজিয়ার পরিবারের সবাই। দুই সন্তান ও প্রিয়তমা স্ত্রী নাজিয়াকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ স্বামী আশিক।
নাজিয়ার এক স্বজন রিফাত জানান, আশিক-নাজিয়ারা বেইলি রোডের বেইলি রিচ অ্যাপার্টমেন্টে থাকেন। আশিকের জন্ম ও বেড়ে ওঠাও বেইলি রোড এলাকায়। বাসার পাশেই রেস্টুরেন্টে দুই ছেলেকে নিয়ে খেতে গিয়েছিলেন। কিন্তু এই খাওয়া যে শেষ খাওয়া হবে, ঘুণাক্ষরেও কেউ ভাবতে পারেননি।
রিফাত জানান, আগুন লাগার পর নাজিয়া স্বামীর সঙ্গে ফোনে কথাও বলেন। এক পর্যায়ে ছোট ছেলে আয়ানকে হারিয়ে ফেলেন। পরে সবাই দগ্ধ হয়ে মারা যান।
নারায়ণগঞ্জের রিয়া পড়াশোনা করতেন মালয়েশিয়ায়। শনিবার (২ মার্চ) ফিরে যাওয়ার কথা ছিল সেখানে। কিন্তু মালয়েশিয়া ফেরা হলো না তার। আগুনে পুড়ে মারা গেলেন। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে মেয়েকে হারিয়ে আর্তনাদ করছিলেন শিল্পপতি বাবা কুরবান আলী। তিনি নারায়ণগঞ্জের পোশাক কারখানা রিয়া ফ্যাশনের মালিক। মেয়েকে হারিয়ে একেবারে নিস্তব্ধ। পাশে পরিবারের অন্য সদস্যরা বিলাপ করছেন। স্বজনরা জানান, কুরবান আলীর দুই মেয়ে। বড় মেয়ের নামে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। সেই মেয়ে অকালে চলে গেলো।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ৫০ মিনিটের দিকে ভবনের দ্বিতীয় তলায় ‘কাচ্চি ভাই’ নামে একটি রেস্তোরাঁয় আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ১৩টি ইউনিটের চেষ্টায় রাত ১১টা ৫০ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এ আগুনের ঘটনায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে মারা গেছেন ১০ জন। এ ছাড়া ভর্তি রয়েছে আরও অনেকে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে আরও ৩৩ জন মারা গেছেন। তাদের মধ্যে কয়জন নারী, পুরুষ কিংবা শিশু তা এখনও জানার চেষ্টা চলছে। রাতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন এসব তথ্য জানিয়েছেন।
হাসপাতালে আহাজারি, কান্নার রোল
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জেলা প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা হ্যান্ডমাইক নিয়ে স্বজনদের আহ্বান করছিলেন লাশ শনাক্তের জন্য। নাম-পরিচয় লেখা হচ্ছিল জরুরি বিভাগের সামনের একটি বারান্দায়। সেই টেবিল ঘিরে আছেন মৃতদের স্বজনরা। কারও চোখে পানি, কেউবা চিৎকার করে কাঁদছেন। কেউ মেঝেতে বসে আছেন বাকরুদ্ধ হয়ে।
দিদারুল হক নামে ২৩ বছরের এক তরুণ মারা গেছেন এই আগুনে। তার বোন তাসলিমা হক ভাইয়ের লাশ দেখে এসে গগনবিদারি চিৎকার করছিলেন। তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন অন্য স্বজনরা।
এক স্বজন জানান, শান্তিনগরে পরিবারের সঙ্গে থাকতেন দিদারুল। বন্ধুদের সঙ্গে লিপ ইয়ার সেলিব্রেশন করতে রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়েছিলেন। লাশ হয়ে ফিরে এলেন। আগুনে পোড়ার কারণে ভালো করে চেনাও যাচ্ছে না।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।