ক্ষুদ্র এবং মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্যই এসএমই লোন। ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এ ঋণ পাওয়া যায়। ব্যবসা সম্প্রসারণে আপনার কাজে লাগবে। ঋণ পাওয়ার নিয়মও খুব একটা কঠিন নয়। এসএমই লোন নিয়ে লিখেছেন সানিয়া স্ট্যালিন ব্যবসা সম্প্রসারণ কিংবা নতুন ব্যবসা শুরুর জন্য প্রদান করা হয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পঋণ বা এসএমই (স্মল অ্যান্ড মিডিয়াম সাইজ এন্টারপ্রাইজেস)লোন।
যেসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্মী এক থেকে ২৫ জন, ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান তাদের চিহ্নিত করে ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হিসেবে। অন্যদিকে কর্মীসংখ্যা ২৫ জনের বেশি হলে সেটি মাঝারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ঋণ পায় এক থেকে ২৫ লাখ টাকা। মাঝারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পেতে পারে পাঁচ লাখ থেকে পাঁচ কোটি টাকা পর্যন্ত।
ঋণ পাবেন কারা: সব বৈধ ব্যবসায়ীই ব্যবসায়িক প্রয়োজনে পেতে পারেন এসএমই লোন। তবে ঋণ পাওয়ার জন্য অবশ্যই প্রতিষ্ঠানের বয়স কমপক্ষে এক থেকে তিন বছর হতে হবে। থাকতে হবে ব্যবসাসংক্রান্ত বৈধ কাগজপত্র। এ ছাড়া ব্যবসায় উদ্যোগটি অর্থনৈতিক ও হিসাব-নিকাশের দিক থেকে হতে হবে স্বয়ংসম্পূর্ণ।
অর্থাৎ মেয়াদ শেষে ব্যবসা থেকেই ঋণ পরিশোধের সামর্থ্য থাকতে হবে। ব্যবসার সঙ্গে ঋণগ্রহীতার থাকতে হবে সরাসরি সংশ্লিষ্টতা। এর বাইরেও ব্যবসায়ীর নিজের বা তাঁর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে থাকতে হবে অন্তত একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট। ঋণ পাওয়ার জন্য বয়স হতে হবে কমপক্ষে ২১, সর্বোচ্চ ৬০ বছর।
কিভাবে করবেন আবেদন: ঋণ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর প্রথমেই যোগাযোগ করতে হবে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে। প্রাথমিক আলোচনা সেরে নিতে হবে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে। কর্মকর্তারা ব্যবসার ধরন, বয়স, আয়-ব্যয় এবং প্রতিষ্ঠানটি ঋণ শোধে সামর্থ্য কি না ইত্যাদি জানতে চাইবে। এরপর ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে যায়। যাচাই করে ব্যবসার পরিধি, জনবল, ব্যবসায়িক কাগজপত্র এবং হিসাবের কাঁচা ও পাকা রসিদ।
ব্যবসায়ী যে অঙ্কের ঋণের জন্য আবেদন করেছেন, আদৌ সেটি তাঁর প্রয়োজন কি না যাচাই করা হয় সেটাও। সব কিছু ঠিক থাকলে ঋণদানের জন্য নির্বাচিত করা হয় ব্যবসায়ীকে। ইস্টার্ন ব্যাংকের হেড অব এসএমই ব্যাংকিংয়ের খোরশেদ আলম জানালেন, ‘প্রক্রিয়াটি অনুসরণ করা হয় ঋণদানের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার জন্যই। ঋণ প্রদান সহায়তার পাশাপাশি পরিশোধের বিষয়টিও এ ক্ষেত্রে বিবেচনায় রাখা হয়।’
যা কিছু প্রয়োজন: ঋণ নেওয়ার জন্য প্রথমেই সংগ্রহ করতে হবে নির্দিষ্ট ব্যাংকের নির্ধারিত আবেদনপত্র। আবেদনপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হবে ব্যবসাসংক্রান্ত বৈধ কাগজপত্র_ট্রেড লাইসেন্স, টিন সার্টিফিকেট এবং ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেটের সত্যায়িত ফটোকপি। যৌথ ব্যবসার ক্ষেত্রে আবেদনপত্রের সঙ্গে থাকতে হবে আইনসম্মত নিবন্ধনকৃত চুক্তিপত্র।
লিমিটেড কম্পানির ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রয়োজন পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন, পরিচালকদের তালিকা ও নিবন্ধনের প্রত্যয়নপত্র এবং সংঘস্মারক ও সংঘবিধি। জমা দিতে হবে ব্যবসায়ীর পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র। ওয়ার্ড কমিশনার বা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের সনদপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি।
ব্যবসায়ী বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের যে ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট আছে, জমা দিতে হবে সেই ব্যাংক স্টেটমেন্ট বা হিসাববিবরণীও। জমা দিতে হবে ব্যবসার মাসিক এবং বার্ষিক চূড়ান্ত হিসাবের বিবরণী। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জমির দলিল বা ভাড়ার চুক্তিপত্রও সংযুক্ত করতে হবে আবেদনপত্রের সঙ্গে।
জামানত প্রসঙ্গে: অনেক ব্যবসায়ীরই ধারণা, ঋণ পাওয়ার জন্য জামানত হিসেবে বন্ধক দিতে হয় বাড়ি, জায়গাজমি কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জমির দলিল। এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের ম্যানেজার তানশীর রহমান চৌধুরী বললেন, ‘এ ধারণাটি পুরোপুরি ঠিক নয়। আমরা ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জামানতবিহীন ঋণ দিয়ে থাকি।
তবে এ জন্য প্রয়োজন দুজন জামিনদার, যাঁরা ঋণগ্রহীতার হয়ে ব্যাংককে গ্যারান্টি প্রদান করেন। কোনো কারণে গ্রহীতা ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে জামিনদার ঋণের দায় নিতে বাধ্য থাকবেন। জামিনদাদের একজন হবেন পরিবারের সদস্য স্বামী বা স্ত্রী। অন্যজন প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি। তিনি হতে পারেন ব্যাংকার, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা বা প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী।’
ব্যাংক অ্যাকাউন্ট: ‘ঋণ পেতে ওই ব্যাংকে একটি অ্যাকাউন্ট থাকা খুবই সহায়ক। ব্যক্তিগতভাবে আমরা যেমন পরিচিতজনদের ঋণ দিতে দ্বিধা করি না, তেমনি নিজের ব্যাংকের গ্রাহককে ঋণ দেওয়াও আমাদের জন্য বেশ সহজ।’ বললেন স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং হেড অব এসএমই লোন সৈয়দ মোহাম্মদ মামুন।
তিনি আরো বলেন, ‘নিজের ছাড়াও অন্য যেকোনো ব্যাংকের গ্রাহকদেরও আমরা ঋণ প্রদান করি। তবে ঋণ পেতে ব্যাংক অ্যাকাউন্টটি সচল হতে হবে। অর্থাৎ থাকতে হবে নিয়মিত ব্যবসায়িক লেনদেন। কারণ এই ব্যাংক স্টেটমেন্ট থেকেই আমরা ব্যবসার পরিধি সম্পর্কে ধারণা লাভ করি।’
মাসিক সুদ ও ঋণ শোধ প্রক্রিয়া: ব্যাংক জামানতবিহীন ঋণ প্রদান করে এক থেকে ২৫ লাখ টাকা। ৯ মাস থেকে শুরু করে পাঁচ বছর মেয়াদি এসব লোনের আসল অঙ্ক মাসিক কিস্তিতে বা চাইলে মেয়াদ শেষে এককালীনই পরিশোধ করা যায়। তবে সুদ পরিশোধ করতে হয় প্রতি মাসে। ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঋণভেদে সুদের হার ৯ থেকে ১৮ শতাংশ। ২৫ লাখ থেকে ৫০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয় জামানতসহ। সে ক্ষেত্রে জামানত রাখতে হয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা কোনো স্থাবর সম্পত্তি।
পেতে পারেন নতুনরাও: ঋণ নেওয়ার জন্য ব্যবসার বয়স এক থেকে তিন বছর হতে হয়। এই নিয়মের মধ্যে নতুনরা না এলেও যাদের ম্যানুফ্যাকচারিং বিজনেস অর্থাৎ উৎপাদনমুখী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, ঋণ দেওয়া হয় তাঁদেরও। এ ক্ষেত্রে যাচাই করা হয়_বিজনেস প্রজেক্ট প্রোফাইল, ব্যবসায়িক খাতে সম্ভাবনা এবং ব্যবসার বর্তমান অবস্থা।
ঢাকার বাইরেও ঋণ দিয়ে থাকি: খোরশেদ আলম হেড অব এসএমই ব্যাংকিং, ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড আমরা এসএমই ঋণ দিয়ে থাকি ঢাকা এবং ঢাকার বাইরেও। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোন্নয়ন এর লক্ষ্য। ঋণ পেতে পারেন ব্যবসায়ীরা। তবে এ জন্য ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে তাঁকে দক্ষ হতে হবে।
দুঃখজনক হলেও সত্যি, এখনো অনেক ব্যবসায়ীই জানেন না, ব্যবসার বৈধতার জন্য ট্রেড লাইসেন্স প্রয়োজন। এ ছাড়া অনেকেই ব্যবসার লাভ-ক্ষতির বিবরণী বা চূড়ান্ত হিসাব লিখিত আকারে সংরক্ষণ করেন না। অথচ এটা খুব জরুরি। ব্যবসায়িক লেনদেন ব্যাংকের মাধ্যমে হলে ঋণ পেতেও সুবিধা হয়। তথ্যসূত্র: লিংকডইন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।