গ্রেপ্তার অভিযানে কোণঠাসা হেফাজতে ইসলামের বিভক্ত দুটি পক্ষ সরকারের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে পরিস্থিতি সামাল দিয়ে সংগঠন নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে। ১৬ দিনের ব্যবধানে সদ্য বিলুপ্ত কমিটির আমির জুনাইদ বাবুনগরীর অনুসারী নেতারা দুই দফা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে তাঁর বাসায় দেখা করেছেন। প্রয়াত আমির আল্লামা আহমদ শফীর অনুসারী ও কমিটির বাইরে থাকা নেতারাও একবার সাক্ষাৎ করেন। এর বাইরে পুলিশের গোয়েন্দাদের সঙ্গেও আলাপ করে সমঝোতার চেষ্টা করছে উভয় পক্ষ।
বৈঠক ও সংগঠন সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, গ্রেপ্তার অভিযান বন্ধ করা এবং কওমি মাদরাসা খোলাসহ প্রায় একই রকম দাবি করেছে দুই পক্ষ। সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ড আর চালানো হবে না বলে আশ্বাস দিয়ে ফের বড় কমিটি গঠন করতে চাইছে নিয়ন্ত্রণকারীরা। অন্যদিকে শফীপন্থীরা চাইছে বাবুনগরীপন্থীদের বাদ দিয়ে আগের কমিটির আদলেই কমিটি গঠন করতে। উভয় পক্ষই তৃণমূলের হেফাজতকর্মীদের সমর্থন পেতে একই কৌশল নিয়েছে। তারা সমঝোতার মাধ্যমে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে চাইছে। তবে কর্মীরা নেতাদের গ্রেপ্তার অভিযান বন্ধেই বেশি চাপ দিচ্ছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে কমিটি ভেঙে দেওয়ার পর থেকে সংগঠনের নেতৃত্ব নিয়ে নানা গুঞ্জন চলছে।
সূত্রগুলো জানায়, সমঝোতার জন্য উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলে সরকার হেফাজতকে চাপে রেখেছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলের নেতাদের বাদ দিয়ে কমিটি গঠন, কওমি মাদরাসায় রাজনীতি নিষিদ্ধ করা এবং কওমি মাদরাসা নিয়ন্ত্রণে হেফাজত নেতাদের নিয়ন্ত্রণ বন্ধ করার শর্ত দেওয়া হয়েছে। কমিটি ভেঙে দেওয়া ও কওমি মাদরাসায় রাজনীতি বন্ধের উদ্যোগ নেওয়ার পর আলোচনা এগিয়ে নিতে চাইছে হেফাজতের বাবুনগরীপন্থীরা। তবে এই পক্ষে মামুনুল হকের খেলাফত মজলিসসহ কয়েকটি ইসলামী দলের নেতারা এখনো সক্রিয়। এরই মধ্যে চার শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য পক্ষটির নিয়ন্ত্রক আল্লামা শফীর দুই ছেলে, ইসলামী ঐক্যজোটের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মাওলানা আবুল হাসানাত আমিনীসহ দলের কয়েকজন নেতা। সাম্প্রতিক অভিযানে এই পক্ষেরও অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ফলে এই পক্ষের সঙ্গে আগের মতো সমঝোতা করলেও রক্ষা করা যায় কি না সেটি নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। এ কারণে কোনো পক্ষকেই পুরোপুরি আস্থায় না আনতে পারলেও বিকল্প বানিয়ে রাখা হচ্ছে। এরই মধ্যে হেফাজতের ৮৩ হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ২২১টি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলার তদন্তের মাধ্যমে হেফাজতকে চাপে রেখে সংস্কারের চেষ্টা চলছে। সংগঠনটিকে অরাজনৈতিক করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হেফাজতে ইসলামের একাধিক নেতা জানান, উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে সংগঠনের শীর্ষ পৎসয়ের নেতারা মহা চাপে আছেন। বিভক্ত দুই পক্ষ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মাধ্যমে সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে যোগাযোগ অব্যাহত রাখতে চাইছে। তবে এখনো সরকার থেকে কোনো পক্ষকে ‘সবুজ সংকেত’ দেওয়া হয়নি। অর্থাৎ গ্রেপ্তার হবে না—এমন কোনো আশ্বাস দেওয়া হয়নি। গত সাড়ে ১০ বছরে কেন্দ্রীয় ও অন্যান্য কমিটিতে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ও নিবন্ধনের বাইরে থাকা ইসলামিক বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নানা স্তরের নেতারা হেফাজতে ইসলামে ঢুকে পড়েছেন। বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব করা হয়েছে গত কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব নূরুল ইসলাম জেহাদীকে। তিনি ১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি আসন থেকে ইসলামী ঐক্যজোট থেকে নির্বাচন করে হেরেছিলেন। বিলুপ্ত কমিটির উপদেষ্টা পরিষদের প্রধান মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী আগে ইসলামী ঐক্যজোটের নায়েবে আমির ছিলেন। আহ্বায়ক কমিটি বড় করার কথা থাকলেও সরকারের নজর থাকায় বাবুনগরীপক্ষ রাজনৈতিক লোক কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করতে পারছে না। আবার অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের মনোনীত করে কমিটিতে অন্তর্ভুক্তিও দুরূহ হয়ে পড়েছে। মধ্যম সারিতে অরাজনৈতিক থাকলেও রাজনৈতিক নেতাদের চাপের কারণে তাঁদের নেতৃত্বে আনা হচ্ছে না। একইভাবে আল্লামা শফীপন্থী অংশেও সামনের সারিতে যাঁরা আছেন তাঁদের প্রায়ই রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন। এ কারণেও তাঁরা সরকারের সবুজ সংকেত পাচ্ছেন না।
বিলুপ্ত কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মীর ইদরিস বলেন, ‘রাজনীতিমুক্ত মানুষ খুঁজে বের করা সময়সাপেক্ষ। আসলে রাজনীতির বাইরে তো কেউ নেই। আমরা চাচ্ছি হেফাজতে ইসলামকে কেউ যাতে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করতে না পারে সে বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পাঁচ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটির পরিধি বাড়বে। কমিটির সদস্যরা একসঙ্গে বসে চূড়ান্ত করবেন।’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে তিনি বলেন, গ্রেপ্তার বন্ধ এবং যাঁরা গ্রেপ্তার হয়েছেন তাঁদের মুক্তির দাবি জানানো হয়েছে। তবে মন্ত্রী বলেছেন, নির্দোষ কাউকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, অভিযোগ নেই এ রকম কেউ থাকলে মুক্তি দেওয়া হবে।
এসব বৈঠকে গ্রেপ্তার বা তদন্তে কোনো প্রভাব নেই জানিয়ে ডিবি পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘হেফাজত নেতারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে কী বলেছেন তা আমরা জানি না। তবে যাঁরা জড়িত ছিলেন বা সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাবে শুধু তাঁদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ সৌজন্যে: কালের কণ্ঠ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।