নিজস্ব প্রতিবেদক : আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া দুই ডেপুটি গভর্নর নূরুন নাহার ও হাবিবুর রহমানের পদত্যাগ দাবিতে ফের উত্তপ্ত আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক।
এ বিষয়ে আজ (২৪ নভেম্বর) সকাল থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তারা দফায় দফা বৈঠক করেছেন। বৈঠকের পর ৪০ সদস্যের একটি দল ডিজি এক ও দুই নাম্বারের সঙ্গে দেখা করে তাদের পদত্যাগের আহ্বান জানান।
এদিকে ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার ও হাবিবুর রহমানের পদত্যাগের দাবিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে দেখা করেন বিক্ষুদ্ধ কর্মকর্তাদের তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া দুই ডেপুটি গভর্নর নূরুন নাহার ও ড. হাবিবুর রহমানকে পদত্যাগের দাবিতে সর্বদলীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারাও। তাদের পদত্যাগের আল্টিমেটামও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের পরেও তিনি পদত্যাগ না করায় কর্মকর্তারা গভর্নরের কাছে দুই ডেপুটি গভর্নরের পদত্যাগের দাবি তুলে ধরেন।
পরে গভর্নর ভবনের সামনে সংক্ষিপ্ত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের অতিরিক্ত পরিচালক নজরুল ইসলাম বলেন, এখনও বাংলাদেশ ব্যাংকে আগের সরকারের নিয়োগ দেওয়া দুইজন ডেপুটি গভর্নর বহাল তবিয়াতে রয়েছেন। তাদের অবিলম্বের পদত্যাগের দাবি জানাচ্ছি। ডেপুটি গভর্নর-১ ও ডেপুটি গভর্নর-২ এর পরিবর্তন আনার দাবি জানানো হয়েছিল আমাদের পক্ষ থেকে। গভর্নর বলেছেন, এই বিষয়ে তিনি ব্যবস্থা নিবেন।
গভর্নর এসময় ব্যাংকারদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘বিষয়টি আমি দেখছি। আর্থিকখাতের সংস্কার কাজ চলমান রয়েছে। এই মুহূর্তে তাদের চাকরিচ্যুত করা হলে আর্থিকখাতে বড় ধরনের সমস্যা তৈরি হতে পারে। পাশাপাশি বহিঃবিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হতে পারে।’
এজন্য তাদের পোর্টফোলিও দেখে কাজের পরিধির কমিয়ে আনা হবে বলেও কর্মকর্তাদের আশ্বাস দেন গভর্নর। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দলীয় রাজনীতি সীমাদ্ধ করতে দলীয় রঙে নির্বাচনের পরিবর্তে ব্যক্তি নির্বাচন মত দেন। একই সঙ্গে অনির্দিষ্টকালের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অনুষ্ঠেয় সব ধরনের নির্বাচন স্থগিত করার কথাও জানিয়েছে গভর্নর।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, মূলত দেশের ব্যাংকখাতের সংস্কার তাদের কারণেই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। নতুন নির্বাচিত নীল দলের প্রেস ব্রিফিং নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে কর্মকর্তারা বলেন, তারা দেশের আর্থিকখাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকে বিতর্কিত করতেই প্রতিবাদ লিপিতে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের কথা বলেছে। অথচ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নিয়োগ দেয়ার আগে প্রত্যেক কর্মকর্তার ব্যাপারে পুলিশ ভ্যারিফিকেশনের মাধ্যমে চূড়ান্ত নিয়োগ দেয়া হয়ে থাকে। এখানে তাদের ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে।
গত ৫ আগস্ট ক্ষমতার পালাবদলের পর সাবেক সরকারের নেতাকর্মী ও ব্যবসায়ীদের লুটপাটের অতিষ্ঠ দেশের আর্থিকখাতে সংষ্কারে দাবিতে শুরু হয় আন্দোলন। ইসলামী ব্যাংকে আন্দোলনের মাধ্যমে সূচনা হয় আর্থিকখাত সংস্কারের আন্দোলন। পরে এই তালিকায় যুক্ত হয় আরও ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এরপর ৬ আগস্ট ইসলামী ব্যাংকে এস আলমের ক্ষমতার বলয় থেকে মুক্ত করার দাবিতে আন্দোলনে নামেন ব্যাংকটি কয়েকশ বঞ্চিত কর্মী। বিক্ষোভের হাওয়া লাগে বাংলাদেশ ব্যাংকেও।
৭ আগ্সট কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, চার ডেপুটি গভর্নর, বিএফআইইউ প্রধান ও পলিসি উপদেষ্টার পদত্যাগে উত্তাল হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ওই সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া ডেপুটি গভর্নরদের চুক্তি বাতিলের দাবি জানানো হয়েছিলো। কিন্তু গত তিনমাসেও বাংলাদেশ ব্যাংকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপাওয়া কর্মরত রয়েছেন বহাল তবিয়তে। ওই সময় গভর্নর, বিএফআইইউ প্রধান, পলিসি উপদেষ্টা ও দুই ডেপুটি গভর্নর পদত্যাগ করেন। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দুই ডেপুটি গভর্ন নুরুন নাহার ও হাবিবুর রহমান থেকে যান। তাদের অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে।
৭ অগাস্ট যেসব দাবি জানানো হয়েছিল, সেসব দাবি পুরোপুরি বাস্তবায়ন এখনো হয়নি। অতিদ্রুত ওই দাবি পুরণ করতে হবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
ঢাকা থেকে ট্রেনে মাত্র ৩ ঘণ্টায় যাওয়া যাবে খুলনায়, ১ ডিসেম্বর উদ্বোধন
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।