মহাকাশে নতুন এক বাইনারি ব্ল্যাকহোলের সন্ধান পাওয়া গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি বা ক্যালটেকের একদল গবেষক বিষয়টি নিয়ে পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা শেষে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন। ২৩ ফেব্রুয়ারি অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল লেটারস-এ প্রকাশিত হয় গবেষণাপত্রটি।
মহাশূন্যে দুটি বস্তু যখন একটি অপরটিকে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকে, তখন তাদের বাইনারি বস্তু বলা হয়। নক্ষত্রের বেলায় এমনটা হরহামেশা দেখা যায়। সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোলের জন্য সেটা বিরল ঘটনা। সাধারণত সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোলগুলো কোনো গ্যালাক্সির কেন্দ্রে থাকে। তাই দুটি সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোলের বাইনারি হওয়ার অর্থ হচ্ছে দুটি গ্যালাক্সির একত্র হয়ে যাওয়া। আর এমনটাই ঘটছে প্রায় ১০ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরের গ্যালাক্সিতে। সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল দুটি একে অপরকে ঘিরে ক্রমাগত ঘুরপাক খেয়ে যাচ্ছে। ঘটাচ্ছে চমৎকার সব ঘটনা।
সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল কীভাবে গঠিত হয়। এটা নিয়ে চমৎকার ব্যাখ্যা আছে বিজ্ঞানীদের কাছে। সেটা হলো দুটি ব্ল্যাকহোল একত্র হওয়া। সেটিই ঘটতে যাচ্ছে দূরের এই গ্যালাক্সিতে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের জন্য এটা যে অনেক বড় খবর, তা বলা বাহুল্য।
ব্ল্যাকহোল দুটির মধ্যবর্তী দূরত্ব এখন প্রায় শূন্য দশমিক ৩ আলোকবর্ষ। সহজ করে বললে, সূর্য ও প্লুটোর মধ্যকার দূরত্বের ৫০ গুণ এই দূরত্ব। ব্ল্যাকহোল দুটি পরস্পর দুটি কক্ষপথে একে অপরকে ঘিরে ঘুরছে খুব দ্রুতগতিতে। এগুলোর একটির বাইনারি আবর্তন সম্পন্ন করতে লাগছে পৃথিবীর হিসাবে মাত্র দুই বছর। তবে ব্ল্যাকহোল দুটি একত্র হতে এখনো অনেকটা সময় বাকি। বিজ্ঞানীদের হিসাবে, আগামী ১০ হাজার বছরের মধ্যে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়বে। তৈরি হবে নতুন আরেকটি সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল।
ব্ল্যাকহোল দুটির একটির নাম PKS 2131-021। এর কল্যাণেই বিজ্ঞানীরা ব্ল্যাকহোল দুটির বাইনারি আচরণ শনাক্ত করতে পেরেছেন। গ্রহ বা নক্ষত্রের মতো ব্ল্যাকহোল দেখা যায় না। এগুলোর অস্তিত্ব নিশ্চিত হতে বেশ কাঠখড় পোড়াতে হয়। PKS 2131-021 ব্ল্যাকহোলটি ব্লাজার শ্রেণির। এ ধরনের ব্ল্যাকহোল ক্রমাগত চার্জিত কণার জেট নিঃসরণ করে। এগুলো তৈরি হয় নির্দিষ্ট কিছু ব্ল্যাকহোলের অ্যাক্রিশন ডিস্ক থেকে।
ক্যালটেকের গবেষকেরা মহাবিশ্বের চারপাশে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকা প্রায় ১ হাজার ৮০০ ব্ল্যাজারের উজ্জ্বলতা পর্যবেক্ষণ করছিলেন দীর্ঘদিন ধরে। সেসবের সঙ্গে PKS 2131-021–এর কিছুটা তফাত দেখতে পারেন বিজ্ঞানীরা। তাঁরা দেখেন, উজ্জ্বলতা নিয়মিত বিরতিতে ওঠানামা করে।
গবেষকেরা সন্দেহ করেছিলেন যে এই বিচিত্র আচরণের কারণ বাইনারি ব্ল্যাকহোল। তবে উজ্জ্বলতা বাড়া-কমার এই প্যাটার্ন ভালোভাবে বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত হতে আরও তথ্যের প্রয়োজন ছিল। ক্যালটেকের জ্যোতির্বিজ্ঞানী টনি রিডহেড বলেন, ‘PKS 2131-021–এর উজ্জ্বলতা শুধু পর্যায়ক্রমে নয়, বরং সাইন তরঙ্গের মতো করে পরিবর্তিত হচ্ছিল। এর মানে, এমন একটি প্যাটার্ন আছে, যা সময়ের সঙ্গে আরও স্পষ্ট হয়।’
তাই গবেষকেরা পাঁচটি অবজারভেটরি থেকে সংগৃহীত ৪৫ বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করেন। এ প্রসঙ্গে গবেষণাপত্রটির প্রধান লেখক স্যান্ড্রা ও’নিল বলেন, ‘একসময় আমরা বুঝতে পারি, সম্প্রতি শনাক্ত করা আলোর উজ্জ্বলতা বাড়া-কমার গ্রাফটি ১৯৭৫ এবং ১৯৮৩ সালের মধ্যে পর্যবেক্ষণ করা গ্রাফের সঙ্গে মিলে গেছে। তখন আমরা বুঝতে পারলাম, এখানে খুব বিশেষ কিছু একটা ঘটছে।’
যা–ই হোক, এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য–উপাত্ত বিশ্লেষণ করে গবেষকেরা নিশ্চিত হয়েছেন, তাঁদের ধারণাটিই সত্য। দুটি সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল একে অপরকে প্রদক্ষিণ করে একত্র হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
বাইনারি ব্ল্যাকহোলের কারণে যে মহাকর্ষ তরঙ্গ উৎপন্ন হচ্ছে, সেটা গবেষণার জন্য একটা দারুণ বিষয়। পাশাপাশি ভবিষ্যতের পর্যবেক্ষণ সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল কীভাবে তৈরি হয়, সেটা বোঝার জন্য অনেক তথ্যের জোগান দেবে বলে বিশ্বাস বিজ্ঞানীদের।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।