জুমবাংলা ডেস্ক : বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ১৬ বছরে বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রায় প্রকল্প নিয়ন্ত্রণ করেছে দেশের দুই আলোচিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা গ্রুপ ও ম্যাক্স গ্রুপ। রাজনৈতিক প্রভাবে তারা বিভিন্ন প্রকল্পের অন্তত ৩০ হাজার কোটি টাকার কাজ কবজা করেছে। রেল ভবনের উচ্চ পদে শক্তিশালী সিন্ডিকেট তৈরি করে কাজ পাওয়ার পর দফায় দফায় প্রকল্পের মেয়াদ ও খরচ বাড়িয়ে লোপাট করেছে অন্তত ১০ হাজার কোটি টাকা। লুটের টাকার বড় অংশ ঠিকাদারি কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি আমদানির নামে ভুয়া এলসি খুলে বিদেশে পাচার করেছেন ওই দুই কোম্পানির পরিচালকরা। খবরের কাগজের করা প্রতিবেদন থেকে বিস্তারিত-
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একাধিক অনুসন্ধানে এসব অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। অনুসন্ধানে অভিযোগসংশ্লিষ্ট তমা ও ম্যাক্স গ্রুপের পরিচালকদের মধ্যে রয়েছেন ম্যাক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ, তার স্ত্রী ও গ্রুপের পরিচালক কানিজ ফাতেমা, তমা গ্রুপের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান ভূঁইয়া, তার মেয়ে ও গ্রুপের পরিচালক রাসনাত তারিন রহমান, ছেলে ও গ্রুপের আরেক পরিচালক মুকিতুর রহমান।
তাদের বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ জানিয়ে কমিশনে শিগগিরই প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। কমিশন অনুমোদন দিলে মামলা হবে। তমা ও ম্যাক্স গ্রুপের পরিচালকরা যেন দেশ ছেড়ে পালাতে না পারেন, সে জন্য ইতোমধ্যে তাদের বিদেশ গমনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নিষেধাজ্ঞার আদেশ জারি করেছেন বিচারিক আদালত।
এ ব্যাপারে দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) আকতারুল ইসলাম জানান, তমা ও ম্যাক্স গ্রুপের দুর্নীতিসংক্রান্ত নানাবিধ অভিযোগের অনুসন্ধান চলছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তারা দুদকের আইন ও বিধি অনুযায়ী অনুসন্ধান শেষে কমিশনে প্রতিবেদন পেশ করে থাকেন। প্রতিবেদনে মামলা করার সুপারিশ থাকলে এবং কমিশন সেটি অনুমোদন করলে পরবর্তী আইনগত প্রক্রিয়া শুরু হবে।
জানা গেছে, রাজবাড়ী-টুঙ্গিপাড়া রেলপথ প্রকল্প, পাবনার ঈশ্বরদী-ঢালারচর রেলপথ, চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত নতুন রেলপথ নির্মাণ, আখাউড়া-লাকসাম রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পসহ বিভিন্ন প্রকল্পের মেয়াদ ও খরচ দফায় দফায় বাড়িয়ে বিপুল অঙ্কের টাকা লোপাটের অভিযোগে তমা ও ম্যাক্স গ্রুপের পরিচালকদের বিরুদ্ধে ২০১৮ সাল থেকেই দুদকে অভিযোগ জমা হয়। কোনো কোনো অভিযোগের অনুসন্ধান শুরু হলেও শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক প্রভাবে ফাইলবন্দি পড়ে থাকে। গত বছর সরকার পরিবর্তনের পর নতুন করে আরও অভিযোগ আসে। সেই সঙ্গে ফাইল অনুসন্ধানের কার্যক্রম নতুন করে শুরু হয়।
এর মধ্যে আখাউড়া-লাকসাম ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্পে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগে তমা ও ম্যাক্স গ্রুপের বিরুদ্ধে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। দেড় বছর অনুসন্ধান করে বিষয়টি ফাইলবন্দি হয়। এর পর সেই ফাইল গত মার্চ মাসে সচল হয় এবং পুনরায় অনুসন্ধানের জন্য দুদকের পরিচালক মো. আবুল হাসনাতের নেতৃত্বে চার সদস্যের বিশেষ টিম গঠন করা হয়। টিমের অপর সদস্যরা হলেন সহকারী পরিচালক আশিকুর রহমান, আল আমিন ও উপসহকারী পরিচালক সাবিকুন নাহার। টিমের সদস্যরা ইতেমধ্যে প্রকল্পসংক্রান্ত নথিপত্র সংগ্রহ করেছেন। নথিপত্রের তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনায় অভিযোগের সত্যতা মিলেছে।
রাজবাড়ী-টুঙ্গিপাড়া প্রকল্প
যৌথভাবে এই প্রকল্পের কাজ পায় ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার ও তমা কনস্ট্রাকশন। কোনো ধরনের সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়া ২০১০ সালে নেওয়া এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ১০১ কোটি টাকা। ২০১৩ সালের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ৫ বছর পর ২০১৮ সালে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়। ওই সময়ের মধ্যে তিনবার সময় বাড়ানোর পাশাপাশি নির্মাণ ব্যয় বাড়ানো হয় ৯৩৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ ১ হাজার ১০১ কোটি টাকার প্রকল্প গিয়ে দাঁড়ায় ২ হাজার ৩৫ কোটি টাকায়। এ প্রকল্পে অন্তত ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা লোপাট হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
পাবনার ঈশ্বরদী-ঢালারচর রেলপথ
২০১০ সালে পাবনার ঈশ্বরদী থেকে ঢালারচর পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ পায় মাক্স গ্রুপ। ৫ বছরের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও সাড়ে তিন বছর সময় বাড়িয়ে ২০১৮ সালে শেষ হয়। শুরুতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৯৮৩ কোটি টাকা। ৩ দফায় ব্যয় বাড়ানো হয় ১ হাজার ৭১৫ কোটি টাকা। প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্পে ট্রেন চলে মাত্র একটি। অথচ এই রুটে ২০ থেকে ২৮টি ট্রেন চলার কথা ছিল।
দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার রেলপথ
বিগত সরকারের সময়ে সবচেয়ে আলোচিত চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত নতুন রেলপথ নির্মাণ। এ প্রকল্পেই বেশি অর্থ লোপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ২০১৬ সালে এই প্রকল্পে ১০১ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৮৩৪ কোটি টাকা। সেই প্রকল্পে সব মিলিয়ে ব্যয় করা হয় ১৮ হাজার কোটি টাকা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।