জুমবাংলা ডেস্ক : দুপুরে প্রথম সন্তানের জন্ম দিয়ে রাতে ডেঙ্গুতে মারা গেলেন মা শান্তা সূত্রধর। সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কন্যাসন্তানের জন্ম দেন তিনি। মেয়ের মুখ দেখে ওই দিন রাতেই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন শান্তা। একই হাসপাতালে ওই দিন বিকালে মারা যান আরেক নারী শাকিলা আকতার (২৬)। এ নিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ১২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হন। এ বছর মোট আক্রান্ত হন ৭১৪ জন। মারা গেছেন ৯ জন।
মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় জানায়, ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া শান্তা নগরের লাভ লেন এলাকার বাসিন্দা। শাকিলার বাড়ি কক্সবাজারের চকরিয়ায়। তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে। তাদের মধ্যে দেড় বছরের দুধের শিশু মিম রয়েছে। এছাড়া বড় ছেলে আট বছরের মোস্তাকিম মাদ্রাসায় পড়ে। মেজ ছেলে মুনতাকিমের চার বছর বয়স।
জানা গেছে, প্রথম মা হতে যাওয়ায় একটু বেশি উচ্ছ্বাস ও উত্তেজনা ছিল শান্তা সূত্রধরের। ধীরে ধীরে প্রসবের সময়টাও এগিয়ে আসছিল। কিন্তু সপ্তাহখানেক ধরে শঙ্কার মেঘ দেখা দেয়। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে তার শারীরিক জটিলতা বেড়ে গেলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন শান্তা। শান্তাকে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল ৭ সেপ্টেম্বর। ডেঙ্গু থাকায় চিকিৎসক এবং স্বজন সবাই দুশ্চিন্তার মধ্যে ছিলেন। সোমবার সেখানে তার অস্ত্রোপচার হয়। এর পরপরই শান্তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানেই রাত ১০টা ৫০ মিনিটে তার মৃত্যু হয়। এর আগে বেলা দুইটার দিকে শান্তা সন্তানের জন্ম দেন। মেয়ে হওয়ায় খুশিও ছিলেন শান্তা। প্রথম বাবা হওয়ার আনন্দে ভাইকে মিষ্টি নিয়ে আসতে বলেন শান্তার স্বামী সাগর দাশ।
শান্তার স্বামী সাগর দাশের মামাতো ভাই আকাশ দে বলেন, বাচ্চা হওয়ার পর আমাকে ফোন করে দাদা মিষ্টি নিয়ে যেতে বলেন। পরে আমি হাসপাতালে গিয়ে বউদির সঙ্গে কথা বলি। তিনি তখন ওয়ার্ডে ছিলেন। তখনো কথা বলছিলেন। সন্ধ্যা থেকে তাঁর অবস্থা খারাপ হতে থাকে। একপর্যায়ে তাকে আইসিইউতে নিয়ে যাওয়া হয়। ওখানেই রাতে মারা যান।
তিনি আরও বলেন, বউদির নবজাতক কন্যাটি এখন সুস্থ আছে। তবে বুকের দুধের জন্য কান্নাকাটি করছে। মায়ের অনুপস্থিতিতে এই সন্তানকে কীভাবে বড় করবেন, তা নিয়ে চিন্তিত স্বজনেরা। তবে এক স্বজনের বুকের দুধ দেয়া হয়েছে। কিন্তু অনেক কান্নাকাটি করছে মেয়েটি।
অন্যদিকে, চার দিন ধরে ডেঙ্গুর সঙ্গে যুদ্ধ করে একইদিন শাকিলা আকতার মারা যান। মৃত্যুর আগে খুব করে সন্তানদের দেখতে চেয়েছিলেন তিনি। বিশেষ করে দেড় বছরের দুধের শিশু মিমকে। কিন্তু সন্তানেরা ছিল গ্রামের বাড়ি কক্সবাজারের চকরিয়ায়। সাত দিন ধরে শাকিলা আকতার জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন। বাড়িতেই আক্রান্ত হন। তিন দিন আগে চকরিয়ায় একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল তাকে। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে শাকিলাকে সোমবার সকালে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
শাকিলার বোন মারুফা ও ভাই ইসমাইল বলেন, বোনের পেটে পানি জমে গিয়েছিল। চকরিয়ায় পারেনি। তাই চট্টগ্রামে নিয়ে গিয়েছিলাম। সেখানেই মারা যায় সে। তার বাচ্চাগুলো এখনো খুব ছোট। ছোট দুটি বাচ্চা বুঝতে পারছে না মা নেই। বড়টা কিছুটা বোঝে। দুধের শিশুটিকে নিয়েই এখন স্বজনদের যত চিন্তা। সন্তানেরা এখন বাবা সাইফুলের কাছে রয়েছে। সাইফুল একটি আসবাবের দোকানে কাজ করেন। ছোট মেয়েটি বুকের দুধের জন্য কান্নাকাটি করছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।