মাহামুদুল হাসান: দুর্নীতি প্রতিরোধে আরও একটি অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী। বুধবার (১১ ডিসেম্বর) ভূমি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ব্যবস্থাপনা বিভাগ ও সেটেলমেন্ট বিভাগের তৃতীয় ও দ্বিতীয় শ্রেণি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত ৫৪৮ জন গণকর্মচারীর পদোন্নতি এবং পরবর্তী পদায়ন ও বদলি লটারির মাধ্যমে নির্ধারণ করার কার্যক্রম উদ্বোধন করে তিনি এ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।
লটারির মাধ্যমে পদায়ন প্রসঙ্গে ভূমিমন্ত্রী বলেন, ‘তদবির–বাণিজ্য ও এ–সম্পর্কিত দুর্নীতি রোধ করে ভূমি খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে লটারির মাধ্যমে পদায়ন ও বদলি কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি কোনো কোনো জায়গা থেকে অভিযোগ শোনা গেলে আমি এ প্রক্রিয়ায় নতুন পদোন্নতিপ্রাপ্তদের বদলি করতে বলি। আমরা এমন কিছু করতে চাইছি যেন পদায়ন, বদলি ও অন্যান্য দাপ্তরিক কার্যক্রমের প্রক্রিয়ায় প্রশ্নাতীত স্বচ্ছতা থাকে। অনেক সময় এমন জায়গা থেকে তদবির আসে যে আমাদের বিব্রত হতে হয়। সে জন্য আমি সচিবকে এ নির্দেশ প্রদান করি।’
সাইফুজ্জামান চৌধুরী লটারির মাধ্যমে পদায়ন ও বদলি কার্যক্রম উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আশা ব্যক্ত করে বলেন, ‘ভবিষ্যতের জন্য একটি পাথেয় সৃষ্টি হচ্ছে আজ। আজ একটা স্ট্যান্ডার্ড সৃষ্টি হলো। আমরা একটি সিস্টেম ডেভেলপ করতে চাইছি। বিভাগীয় অভিযোগে যাঁদের সাজা হয়েছে, তাঁদের পদোন্নতির জন্য বিবেচনা করা হয়নি।’
মন্ত্রী বলেন, আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড দিয়ে একটা মেসেজ দিচ্ছি, পরিবর্তনের বার্তা দিচ্ছি। আমরা যেটা বলি সেটা করার চেষ্টা করি। আর যেটা পারবো সেটাই বলি। কারণ, সবকিছুই নিয়ম-নীতির মধ্যেই চলতে হয়। এটাকে মাথায় রেখেই কাজগুলি করছি।
এর আগে গত ১০ অক্টোবর ভূমি সংক্রান্ত সেবা পাওয়ার পাশাপাশি অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ জানানোর জন্য ভূমি সেবা হটলাইন (১৬১২২) চালু করে তিনি দুর্নীতি প্রতিরোধে একটি মাইলফলক স্থাপন করেন।
রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে হটলাইন উদ্বোধন করার পর ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, স্বচ্ছ, দক্ষ, আধুনিক, জবাবদিহিতামূলক ও টেকসই ভূমি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ভূমির সর্বোচ্চ ব্যবহার এবং ভূমি সংক্রান্ত জনবান্ধব সেবা নিশ্চিত করা সরকারের লক্ষ্য। ভূমি সেবা সহজ করা, সেবা গ্রহীতাদের সব জটিলতা আইনগতভাবে নিরসন এবং ভূমি সংক্রান্ত সকল ধরনের দুর্নীতি প্রতিরোধের লক্ষ্যে এই হটলাইন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। হটলাইনে কল করে সহজেই সেবা প্রার্থীরা ভূমি বিষয়ক বিভিন্ন সমস্যার সমাধান পাবেন। এ ছাড়া হটলাইনের মাধ্যমে ভূমি সেবা গ্রহীতাগণ ভূমি সেবা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্য ও পরামর্শসহ দেশে বিদ্যমান ভূমি সংক্রান্ত আইন ও বিধিবিধান সম্পর্কে জানতে পারবেন।
ভূমি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভূমি সেবা হটলাইন ১৬১২২ এর কার্যক্রম প্রতি কর্মদিবসে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলবে। হটলাইন সেবা পেতে নিয়মিত কল চার্জ প্রযোজ্য হবে। হটলাইনের মাধ্যমে জরুরী অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ, দ্রুততম সময়ের মধ্যে অভিযোগ নিষ্পত্তি ও সেবাগ্রহীতার নিকট হতে অভিযোগ গ্রহণ করা হবে। হটলাইন ব্যবহারকারীর নাম, ঠিকানা বা পরিচয় কোনও অবস্থাতেই প্রকাশ করা হবে না।
দুর্নীতি প্রতিরোধ বিষয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ভূমিমন্ত্রী বলেন, ‘আমি ধরবো যেটা সেটা আমার হাত থকে ছুটতে পারবে না। আমি না ধরলে ধরবো না, ধরলে কিন্তু ছাড়বো না। এটা আমার স্টাইল। তবে আমি কাউকে হয়রানি করবো না। আমি চাই সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে, দুর্নীতি দূর করতে।’
ভূমিমন্ত্রীর হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর দুর্নীতি প্রতিরোধের অংশ হিসােবে দেশব্যাপী তিনি ই-মিউটেশন কার্যক্রম চালু করেছেন। চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে দেশের তিনটি পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবান বাদে বাকি ৬১ জেলায় ই-নামজারি বাস্তবায়ন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বর্তমানে ৪৮৫টি উপজেলা ভূমি অফিস, সার্কেল অফিস এবং তিন হাজার ৬১৭টি ইউনিয়ন ভূমি অফিসে ই-নামজারির কার্যক্রম চলছে।
ই-নামজারি প্রক্রিয়া চালু হওয়ার পর থেকে সামাজিক দ্বন্দ্ব-সংঘাত, ফৌজদারি মামলা, ভোগান্তি ও মধ্যস্বত্বভোগীর দৌরাত্ম্য কমছে। এর ফলে নথি হারিয়ে গেলে বা নষ্ট হলেও সমস্যা হবে না। এতে নাগরিকের সময়, খরচ ও যাতায়াত যেমন কমবে তেমনি খতিয়ানের স্থায়িত্ব বাড়বে। ডিজিটাল সেন্টারগুলোর আয় বাড়ছে। সরকারি ও ভিপি জমি (ভেস্টেট প্রোপার্টি) বা সম্পত্তি সুরক্ষা পাবে। বড় কথা হচ্ছে ই-নামজারির ফলে এক জমি একাধিকবার একাধিক ব্যক্তির কাছে বিক্রি, নামজারি ও রেজিস্ট্রেশন বন্ধ হবে।
ভূমি সম্পর্কিত বিভিন্ন লেনদেনের জন্য ই-পেমেন্ট ব্যবস্থা চালুরও উদ্যোগ নিয়েছেন ভূমিমন্ত্রী। এর জন্য একটি পেমেন্ট গেটওয়ে স্থাপন করার বিষয় প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
ভূমিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাকে ভূমি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়ার পর প্রথম দেড় বছর ‘স্বল্পমেয়াদি’, পরবর্তী দেড় বছর ‘মধ্যমমেয়াদি’ এবং শেষ দুই বছরকে ‘দীর্ঘমেয়াদি’ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে পুরো পাঁচ বছরের কর্মপরিকল্পনার ‘ডেডলাইন’ সাজিয়েছি।
তিনি বলেন, ভূমি ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই সম্যক ধারণা কম। যদিও সবার জীবন এবং পরিবারের সঙ্গে বিষয়টি জড়িত। ভূমি সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে ইতোমধ্যে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান চৌধুরী এর আগে একই মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন।
সাইফুজ্জামান চৌধুরী ১৯৬৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের আনোয়ারা থানায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু ও মায়ের নাম নুর নাহার জামান। তার বাবা ছিলেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য। ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতাও ছিলেন তিনি।
মূলত সাইফুজ্জামান চৌধুরী তার বাবার মাধ্যমে রাজনীতিতে সক্রিয় হন। তার বাবা চট্টগ্রামের আনোয়ারা আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন। বাবা মারা যাওয়ার পর ওই আসনে উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। এরপর ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবার নির্বাচিত হন।
সাইফুজ্জামান চৌধুরী ইউসিবিএলের নির্বাহী কমিটি এবং দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শিল্প প্রতিষ্ঠান আরামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি চট্টগ্রাম চেম্বার অব কর্মাস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির তিনবারের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ছিলেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।