দেড় হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রায় আম পাড়া শুরু, প্রথম চালান ইতালিতে
জুমবাংলা ডেস্ক : দেড় হাজার কোটি টাকার আম বাণিজ্যের লক্ষ্যমাত্রায় রাজশাহীতে বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে ‘ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার’। এ দিন থেকেই গাছের পরিপক্ব গুটিআম পাড়া যাবে। তবে বেশিরভাগ গাছেরই আম পরিপক্ব হয়নি।
বৃহস্পতিবার ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার শুরু হলেও আগের দিন বুধবারই বাঘা উপজেলার এক বাগানের ৩০০ কেজি গুটিআম নামানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার এই আম ইতালি পাঠানো হয়েছে।
বাঘা উপজেলার পাকুড়িয়া গ্রামের আমচাষি শফিকুল ইসলামের বাগান থেকে স্থানীয় গুটি জাতের ‘চোরুষা’ নামের এই আম নামানো হয়। ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠান বৃহস্পতিবার কার্গো বিমানে করে এই আম ইতালি পাঠায়।
রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুল ইসলাম জানান, তারা এই বাগানের আম দেখেছেন। আমগুলো পরিপক্ব ছিল।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জেলায় চলতি মৌসুমে দেড় হাজার কোটি টাকার আম বাণিজ্যের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। এটি গত বছরের চেয়ে ৫০০ কোটি টাকা বেশি।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য মতে, এর আগে এক মৌসুমে আমের ব্যবসা ৭০০ থেকে ৮০০ কোটি টাকার মধ্যে থেকেছে। গত বছর এক হাজার কোটি টাকার মতো আমের বাণিজ্য হয়। এটি এবার দেড় হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে এমনই প্রত্যাশা কৃষি বিভাগের। আর আমের জিআই স্বীকৃতির আম বাণিজ্যে নতুন মাত্রা যোগ করেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
রাজশাহী জেলায় গত মৌসুমে ১৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছিল। এটি চলতি মৌসুমে বেড়ে ১৯ হাজার ৫৭৮ হেক্টরে উন্নীত হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে দুই লাখ ৫৮ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এদিকে বুধবার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে জেলার আম সংগ্রহ, পরিবহণ, বিপণন ও বাজারজাত মনিটরিং সংক্রান্ত সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে আম পাড়ার তারিখ নির্ধারণ করা হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার থেকেই পরিপক্ক হলে গুটি জাতের আম নামাতে পারবেন চাষিরা।
তবে এ দিন রাজশাহীর কোনো বাজারেই আম উঠতে দেখা যায়নি। বেশিরভাগ গাছেরই আম পরিপক্ব না হওয়ায় আম পাড়া উৎসব শুরু হয়নি। মৌসুম শুরুর প্রথম দিন রাজশাহীর বানেশ্বরের বৃহত্তর আমের হাটেও আম ওঠেনি।
রাজশাহী চাঁপাই এগ্রো ফুড প্রোডিউসারের প্রতিষ্ঠাতা আনোয়ারুল হক এবার ৫০ বিঘা জমিতে আমচাষ করেছেন। রাজশাহী নগরীর জিন্নানগর এলাকাতেও তার আমবাগান আছে। ‘ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার’ শুরু হওয়ায় বৃহস্পতিবার সকালে তিনি বাগানে গিয়ে কিছু আম নামান। কিন্তু একটি আমও পাকা দেখতে পাননি তিনি। আনোয়ারুল জানান, আম পাকতে আরও সময় লাগবে।
তিনি বলেন, আর কয়দিন পরে আম পাড়ার সময় ঠিক করে দিলে সমস্যা ছিল না। গুটি জাতের আমের কেবল আঁটি হয়েছে। এসব আম পরিপক্ব হতে আরও কমপক্ষে দুই সপ্তাহ সময় লাগবে। ১০ দিনের আগে আম নামানোই যাবে না। কিন্তু আম পাড়ার সময় শুরু হওয়ায় কেউ কেউ অপরিপক্ব আম নামাতে পারেন। শুরুতে এরা বাজারে ভালো দাম পাবেন। কিন্তু আমরা যারা আম পরিপক্ব না হওয়া পর্যন্ত নামাবো না, তারা পরে বাজারে গিয়ে দাম পাব না। কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হব।
জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, কৃষি বিভাগ, ফল গবেষক এবং চাষিদের নিয়ে আলোচনা করেই আম পাড়ার দিন ঠিক করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে আম পাড়া শুরু হলেও কেবল পরিপক্ব আমই নামানো যাবে। যে চাষির আম পাকেনি, তিনি নামাবেন না। যখন পাকবে তখন নামাবেন।
জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, উন্নতজাতের অন্য আমগুলোর মধ্যে লক্ষণভোগ বা লখনা ও রাণীপছন্দ ২০ মে এবং হিমসাগর বা খিরসাপাত ২৫ মে থেকে পাড়া যাবে। এছাড়া ৬ জুন থেকে ল্যাংড়া, ১৫ জুন থেকে ফজলি ও ১০ জুন আম্রপালি এবং ১০ জুলাই থেকে আশ্বিনা ও বারি আম-৪ পাড়া যাবে। আর ১০ জুলাই থেকে গৌড়মতি আম এবং ২০ আগস্ট ইলামতি আম আসবে বাজারে।
এছাড়া বারোমাসি হিসেবে পরিচিত কাটিমন ও বারি আম-১১ সারা বছরই সংগ্রহ করা যাবে। তবে নির্ধারিত সময়ের আগে আম বাজারে পেলে ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন। তবে কারও বাগানে নির্ধারিত সময়ের আগেই আম পাকলে তা প্রশাসনকে অবহিত করতে হবে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, রাজশাহীতে এবার আমের খুবই ভালো ফলন আছে। গত বছর আমের মণপ্রতি তিন হাজার ২০০ থেকে চার হাজার টাকাতেও বিক্রি হয়েছে। এবারো চাষিরা ভালো দাম পাবেন এমনটাই আশা করছি। আর মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য রোধে গণমাধ্যম একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সবকিছু অব্যাহত থাকলে কৃষকরাও ন্যায্য দাম পাবেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।