জুমবাংলা ডেস্ক : সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে রাজনৈতিক ‘তকমা’ পাওয়া প্রশাসনের অন্তত দেড় হাজার বঞ্চিত কর্মকর্তা তাদের প্রাপ্য সম্মান ফিরে পাচ্ছেন। বছরের পর বছর ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) থেকে মনঃকষ্ট নিয়ে অবসরে গেছেন তাদের অনেকে। যোগ্যতা থাকার পরও বছরের পর বছর পদোন্নতিবঞ্চিত হয়ে প্রশাসনে ‘বনসাই’ কর্মকর্তা হিসেবে জুনিয়রদের অধীনে কাজ করেছেন তাদের অনেকে। রাজনৈতিক মতভিন্নতার কারণে ‘বিভাগীয় মামলা’ হজমও করতে হয়েছে তাদের। কালের কণ্ঠের করা প্রতিবেদন থেকে বিস্তারিত-
অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এই দেড় হাজার কর্মকর্তাকে সামাজিক সম্মান ফিরিয়ে দিয়ে আর্থিক সুবিধাসহ ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দিতে সরকার এ নিয়ে গঠন করেছে পর্যালোচনা (রিভিউ) কমিটি। ওই কমিটি চলতি সপ্তাহেই এসংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দেবে বলে কালের কণ্ঠকে নিশ্চিত করেছেন রিভিউ কমিটির একাধিক সদস্য।
তারা জানান, ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে অবসরে যাওয়া অন্তত এক শ জন কর্মকর্তাকে সচিব, প্রায় এক হাজার কর্মকর্তাকে অতিরিক্ত সচিব এবং চার শ কর্মকর্তাকে যুগ্ম সচিব পদমর্যাদা দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এসব কর্মকর্তা আর্থিক সুবিধাও পাবেন।
২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট পর্যন্ত যেসব কর্মকর্তা পদোন্নতিসহ নানাভাবে হয়রানি ও বঞ্চনার শিকার হয়ে অবসরে গেছেন, তাদের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে রিভিউ কমিটি এ সুপারিশ করবে।
এর আগে কমিটির প্রধান সাবেক অর্থসচিব মো. জাকির আহমেদ খান বলেছিলেন, ‘আমরা সরকারের বেঁধে দেওয়া সময়সীমার মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেব। রাজনৈতিক কারণে যাদের বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছিল, যারা দীর্ঘদিন ওএসডি থেকে অবসরে গেছেন, বছরের পর বছর ‘গুরুত্বহীন’ পদে ফেলে রাখা হয়েছিল, ছোট অপরাধে বিভাগীয় মামলা দেওয়া হয়েছিল, তাদের গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে কমিটি।’
সেই হিসাবে আগামী ১৫ ডিসেম্বর কমিটির তিন মাস সময়সীমা পূর্ণ হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কমিটির একাধিক সদস্য বলেন, প্রতিবেদন চূড়ান্ত করতে রাত-দিন কাজ করছে কমিটি। প্রতিবেদন প্রায় চূড়ান্ত। চলতি সপ্তাহের যেকোনো দিন সরকারের কাছে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।
কমিটি সূত্রে জানা গেছে, বঞ্চিত কর্মকর্তাদের মধ্যে অন্তত এক শ জনকে সচিব মর্যাদা দেওয়া হবে। সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের (এসএসবি) মতো করে তাদের বিষয়ে অনুসন্ধান করা হয়েছে।
সেই ক্ষেত্রে তাদের এজেন্সি প্রতিবেদন, বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদন (এসিআর), এসিআরে প্রাপ্ত নম্বর, সার্ভিস রেকর্ড, শিক্ষাগত যোগ্যতা, বিভাগীয় মামলা, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলা, প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের (এটি) মামলা এবং শৃঙ্খলার মামলা আছে কি না তা যাচাই করা হয়েছে। অর্থাৎ সাধারণ একটি এসএসবিতে যা কিছু দেখা হয়, সেভাবে যাচাই-বাছাই করে তাদের পদোন্নতির সুপারিশ করা হচ্ছে। একইভাবে বাকিদের বিষয়েও যাচাই-বাছাই করা হয়েছে।
বঞ্চিত কর্মকর্তাদের বিষয়ে যে সুপারিশ করা হবে তার সারসংক্ষেপ যাবে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে। সেখান থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর জারি করা হবে প্রজ্ঞাপন। বঞ্চিতদের ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দিয়ে আর্থিক সুবিধা দিতে সরকারের অতিরিক্ত অন্তত ১০০ কোটি টাকার প্রয়োজন হবে বলে অর্থ বিভাগ ধারণা দিয়েছে।
এর আগে গত ২৪ নভেম্বর বঞ্চিত কর্মকর্তাদের ক্ষতিপূরণের বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান বলেছিলেন, ‘বঞ্চনা নিরসনে কমিটি করা হয়েছে।
তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে যারা অবসরে গেছেন, তাদের কাউকে সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব বা উপসচিব পদে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দিয়ে আদেশ জারি করা হবে। এসব আদেশের ভিত্তিতে দেনা-পাওনা এজি অফিস থেকে পরিশোধ করা হবে। কেউ কেউ কোটি টাকার ওপরও আর্থিক ক্ষতিপূরণ পাবেন।’
জানা গেছে, যোগ্যতা থাকার পরও ‘রাজনৈতিক’ তকমা দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে প্রশাসনে হাজারো কর্মকর্তাকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এই কর্মকর্তাদের বছরের পর বছর ফেলে রাখা হয়েছে ‘গুরুত্বহীন’ পদে। মেধাবী, দক্ষ ও যোগ্য অনেক কর্মকর্তাকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করে ফেলে রাখা হয়েছিল দীর্ঘ সময়।
কাউকে কাউকে দেওয়া হয়েছিল বাধ্যতামূলক অবসর। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেয়। সেই থেকে প্রশাসনে আমূল পরিবর্তন আসতে শুরু করে। শেখ হাসিনার আমলে চুক্তিতে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ বাতিল করে অবসরে থাকা বঞ্চিত যোগ্য কর্মকর্তাদের প্রশাসনে নিয়োগ দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পদোন্নতিবঞ্চিত প্রশাসনে কর্মরত প্রায় ৭০০ কর্মকর্তাকে দেওয়া হয় পদোন্নতি। এরপর অতীতে যারা পদোন্নতিবঞ্চিত হয়েছেন এবং বছরের পর বছর ওএসডি ছিলেন, তাদের ক্ষতিপূরণের দাবি ওঠে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৬ সেপ্টেম্বর সরকারি চাকরিতে বঞ্চিতদের জন্য বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়। সাবেক অর্থসচিব জাকির আহমেদ খানকে প্রধান করে গঠন করা এই কমিটির সদস্য হিসেবে আছেন মন্ত্রিপরিষদ, অর্থ বিভাগ, জনপ্রশাসন ও আইন মন্ত্রণালয়ের চার প্রতিনিধি। তিন মাসের মধ্যে কমিটিকে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
এতে আরো বলা হয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আওতায় ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট পর্যন্ত চাকরিতে নানাভাবে বঞ্চনার শিকার এবং এই সময়ের মধ্যে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের আবেদন পর্যালোচনা করে যথাযথ সুপারিশ প্রণয়ন করা হবে। এর পরই মূলত বঞ্চিত কর্মকর্তাদের আবেদন জমা পড়তে শুরু করে। এরপর দুই দফা বাড়িয়ে গত ৩ অক্টোবর পর্যন্ত বঞ্চিতদের আবেদন নেওয়ার সময়মীমা বেঁধে দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। প্রায় সাড়ে চার হাজার আবেদন জমা পড়লেও কমিটির বিবেচনায় রয়েছে দেড় হাজার আবেদন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।