জুমবাংলা ডেস্ক : ক্রমাগত হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের কারণে দেশজুড়ে যে পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে, সরকার তা নিয়ন্ত্রণে সক্ষমতা প্রকাশ করতে না পারলে রাষ্ট্র ও সরকারের স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়বে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিএনপি।
গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার ছয় মাস উপলক্ষে গত পাঁচই ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যার পর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের ভাঙাচোরা বাসভবনে ফের হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়।
এরপরই দেশজুড়ে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে হামলা শুরু হয়।
দেশের এই চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতির প্রায় দুই দিন পার হয়ে যাওয়ার পর গতকাল মধ্যরাতে, আনুমানিক তিনটায় ওই বিবৃতি দেয় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল– বিএনপি।
তারা তাদের বিবৃতিতে বলেছে, এই পরিস্থিতিতে উগ্র নৈরাজ্যবাদী গণতন্ত্র বিরোধী দেশি বিদেশি অপশক্তির পাশাপাশি পরাজিত ফ্যাসিস্টদের পুনরুত্থানের সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে, যার উপসর্গ ইতোমধ্যেই দৃশ্যমান।
বিএনপির ভাষ্য, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গত ছয় মাসেও পলাতক স্বৈরাচার এবং তাদের দোসরদেরকে আইনের আওতায় আনতে যথেষ্ট কার্যকর পদক্ষেপ জনসম্মুখে দৃশ্যমান করতে সফল হয়নি বলে জনমনে প্রতিভাত হয়েছে, ফলে জনগণ আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার মতো বেআইনি কর্মকাণ্ডে উৎসাহিত হচ্ছে। একটি সরকার বহাল থাকা অবস্থায় জনগণ এভাবে নিজের হাতে আইন তুলে নিলে দেশে বিদেশে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হতে পারে।’
ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের চেষ্টা শক্তভাবে প্রতিহত করার ঘোষণা সরকারের
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী জনগণের প্রত্যাশা ছিল যে দেশে আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে, কিন্তু বর্তমানে দেশে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ নানান ধরনের দাবিদাওয়া নিয়ে যখন-তখন সড়কে ‘মব কালচারের’ মাধ্যমে জনদুর্ভোগের সৃষ্টি করছে উল্লেখ করে বিএনপি আরও বলে, ‘সরকার যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে মুন্সিয়ানা দেখাতে ব্যর্থ হচ্ছে।’
তবে তাদের মতে, পতিত পরাজিত পলাতক স্বৈরাচার, অর্থাৎ আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসররা জুলাই-অগাস্টের গণঅভ্যুত্থান সম্পর্কে ‘অশালীন এবং আপত্তিকর বক্তব্য’ দিচ্ছে বলেই দেশের জনগণের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ এবং ক্রোধের জন্ম দিয়েছে।
‘তারই ফলশ্রুতিতে গতকাল বুধবার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পতিত স্বৈরাচারের স্মৃতি, মূর্তি, স্থাপনা ও নামফলকসমূহ ভেঙ্গে ফেলার মতো জনস্পৃহা দৃশ্যমান হয়েছে,’ বলছে বিএনপি।
দলটি মনে করে, গণঅভ্যুত্থানে নিহত পরিবারগুলোকে রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা করা, আহতদের যথাযথ চিকিৎসা ও পুনর্বাসন, পলাতক স্বৈরাচার এবং তার দোসরদের বিচার নিশ্চিত করা, সেইসাথে তাদের উসকানিমূলক তৎপরতা রোধ করাটা সরকারের অগ্রাধিকার হওয়ার কথা। কিন্তু এসব বিষয়ে সরকারের দৃশ্যমান এবং উল্লেখযোগ্য কোনও অগ্রগতি নেই।
‘এখনও প্রশাসনকে পতিত ফ্যাসিস্ট শাসকের দোসরমুক্ত করা হয়নি, বিচার বিভাগে কর্মরত ফ্যাসিবাদের দোসররা এখনও বিদ্যমান, পুলিশ প্রশাসনে গণঅভ্যুত্থানবিরোধী সক্রিয় সদস্যরা এখনও কর্মরত। এমতাবস্থায় সরকার জনআকাঙ্খা পূরণে সফলতা অর্জন করতে পারবে কি না তা যথেষ্ট সন্দেহের উদ্রেক করে,’ বিবৃতি বলেছে বিএনপি।
‘অন্যান্য বিষয়ে অধিক মনোযোগী’ না হয়ে বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করা; বিগত ১৬ বছরে যেসব গণতন্ত্রকামী মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা গায়েবি মামলা হয়েছে, সেগুলোর সুরাহা করা এবং যথাশীঘ্র সম্ভব নির্বাচনের আয়োজন করার কথাও উল্লেখ করে তারা।
সামাজিক মাধ্যমে শেখ হাসিনার ভাষণ প্রচারের ঘোষণা আসার পর গত দুইদিনে শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবনসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ঘর-বাড়ি ভাঙা হয়েছে। শেখ পরিবারের সদস্যদের নামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামফলক ও স্থাপনা ভাঙা হয়েছে।
সে বিষয়টি উল্লেখ করে বিএনপি বলে, ‘পতিত ফ্যাসিস্ট এবং স্বৈরাচারের স্মৃতিচিহ্ন নিশ্চিহ্ন কিংবা নির্মূলের মধ্যেই ফ্যাসিবাদের মূলোৎপাটন নিহিত নয়। বরং, ফ্যাসিবাদবিরোধী আদর্শিক চিন্তা, শক্তি ও প্রভাবের আদর্শিক রাজনীতি প্রতিষ্ঠা এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী গণঐক্যকে দৃঢ় ভিত্তি দেয়া এবং জাতীয় ঐক্যের রাজনৈতিক সংস্কৃতির চর্চাই উত্তম পন্থা।’
সবশেষে দলটি পরিস্থিতির উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার ব্যাপারে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলে, ‘অন্যথায়, দেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির প্রসার ঘটবে। তাই, কঠোরভাবে আইনশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করে রাষ্ট্র ও সরকারের ভূমিকা দৃশ্যমান করা এখন সময়ের দাবি।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।