হিটলার এ. হালিম : দেশের ইন্টারনেটে গত বছরের অক্টোবর মাস থেকে কিছুটা ধীরগতি ভর করেছে। দেশের দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের (সি-মি-উই-৫) বর্তমান সক্ষমতার (অ্যাক্টিভেট ক্যাপাসিটি)শেষ হয়ে যাওয়া এবং দেশে গুগলের গ্লোবাল ক্যাশ সার্ভারের মধ্যে অবৈধগুলো জব্দ করায় (নতুন নিয়মের ফলে) মূলত সংকটের শুরু। এই সংকট এখনও কাটেনি। আরও প্রায় এক মাসের মতো লাগতে পারে।
সংকট চলমান থাকায় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ও মোবাইল ইন্টারনেটে ভর করেছে ধীর গতি। ফোর-জি নেওয়ার্কে ভিডিও দেখার সময় বাফারিং হওয়া হালে প্রায় নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। উচ্চগতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটেও এই সমস্যা দেখা যাচ্ছে বলে অনেকে অভিযোগ করেছেন।
বিশেষ করে ঢাকার বাইরে এই সমস্যা বেশি বলে জানা গেছে। গত মাসের শেষে এই প্রতিবেদক মাগুরা ও শালিখা উপজেলার আড়পাড়া গ্রামে গিয়ে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারে সমস্যায় পড়েন। ফোরজি সাইন দেখালেও ভিডিও চলার সময় বাফারিং হচ্ছিল। মেইল চেক করা ও নিউজ পোর্টাল দেখা এবং ফেসবুকিংয়ের সময়ও বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে।
অভিযোগটি স্বীকার করেছেন দেশের ইন্টারনেট সেবা দাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবি’র সভাপতি ইমদাদুল হক। তিনি বলেন, ‘যেসব ইকুইপমেন্ট (গুগল ক্যাশ সার্ভার) গুগল ধরে রেখেছিল, সেগুলো ছাড়তে শুরু করেছে। এগুলো ধরে রাখার কারণে ইন্টারনেটে এই সমস্যা চলছে। আশা করছি, আগামী একমাসের মধ্যে এই সমস্যা দূর হয়ে যাবে।’ তিনি জানান, ঘোষণার পরও অবৈধভাবে চালু রাখার কারণে দেশে পরিচালিত ১০০টি গুগল গ্লোবাল ক্যাশ সার্ভারকে গুগল তাদের জিম্মায় রেখেছিল। প্রতিটি ক্যাশ সার্ভারের সক্ষমতা ৯ জিবিপিএস করে হলেও সব মিলিয়ে ৯০০ জিবিপিএস এই সংকট তৈরি করেছে।
অপরদিকে বিটিআরসি বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে ২৮টি গুগল গ্লোবাল ক্যাশ সার্ভার জব্দ করে গুগলের স্থানীয় ডিলার বা সরবরাহকারীদের ফেরত দেয়।
ইমদাদুল হক জানান, মোবাইল ইন্টারনেটেও এই সমস্যা কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল) পর্যাপ্ত ব্যান্ডউইথ সরবরাহ করতে না পারায় এই সমস্যা ছিল। সমস্যা এখন কাটতে শুরু করেছে। তিনি আরও জানান, ঢাকার বাইরে ল্যাটেন্সি বেড়ে গেছে। ক্যাশ সার্ভারগুলোর দায়িত্ব আইআইজি ও নেশনওয়াইড তত্ত্বাবধানে চলে যাওয়াও সমস্যার কারণ। আইআইজিগুলো (ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে) দেশের সব জায়গায় পপ (পয়েন্ট অব প্রেজেন্স) স্থাপন করতে পারেনি। ইন্টারনেটে ধীর গতির এটাও একটা কারণ।
দেশের প্রতিটি জেলায় আইআইজিগুলোকে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে পপ (পয়েন্ট অব প্রেজেন্স) স্থাপনের নির্দেশনা দেয় বিটিআরসি। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ গত একই বছরের ৪ আগস্ট এ বিষয়ে অনুমোদন দেয়। ৭ আগস্ট বিটিআরসি পৃথক দুটি বৈঠকে (আইএসপিএবি ও আইআইজি ফোরামের সঙ্গে) এই সিদ্ধান্তের কথা জানায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইআইজি ফোরামের মহাসচিব আহমেদ জুনায়েদ জানান, বড় বড় আইআইজি সারা দেশে পপ বসিয়েছে। সবাই এখনও পপ স্থাপন করে শেষ করতে পারেনি। যারা এখনও শেষ করতে পারেনি আমরা তাদের তাগাদা দেবো। নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে সময় বেঁধে দেওয়া আছে। তিনি অভিযোগ করেন, আইএসপিগুলোর গ্রাহকের চাহিদা বাড়লেও আইআই জি থেকে আপস্ট্রিম বাড়িয়ে নেয় না। ফলে গ্রাহকের সমস্যা হয়। চাহিদা বাড়লে গ্র্যাজুয়েলি সক্ষমতা বাড়াতে হবে। খরচ বাঁচানোর জন্য এটা করলে গ্রাহক ভালো সেবা পাবে না।
প্রসঙ্গত, দেশে বর্তমানে ব্যবহার হচ্ছে ২৭০০-২৮০০ জিবিপিএস (গিগাবিটস পার সেকেন্ড) ব্যান্ডউইথ।
বিএসসিসিএল সূত্রে জানা গেছে, দেশের দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের (সি-মি-উই-৫) বর্তমান সক্ষমতার (অ্যাক্টিভেট ক্যাপাসিটি) পুরোটা (১৩০০ জিবিপিএস) প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছিল। অপরদিকে প্রথম সাবমেরিন ক্যাবল সি-মি-উই-৪-এর সক্ষমতার ৬০০ জিবিপিএসেরও একই অবস্থা হয়। দুটি মিলিয়ে দেশের মোট ব্যবহৃত ব্যান্ডউইথের মধ্যে দুই সাবমেরিন ক্যাবল থেকে আসে ১৮৫০ জিবিপিএস। বাকি ব্যান্ডউইথ সরবরাহ করছে আইটিসি (ইন্টারন্যাশনাল টেরেস্ট্রিয়াল ক্যাবল)। জানা গেছে, কিছুদিন আগে বিএসসিসিএল ৯০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ (সি-মি-উই-৫) সার্কিট আপ (সক্রিয়) হয়েছে। ৬০০ জিবিপিএস যুক্ত হচ্ছে। এ মাসেই অবশিষ্ট ৩০০ জিবিপিএস একই ক্যাবলে যুক্ত হবে। ফলে সি-মি-উই-৫-এর ব্যান্ডউইথ দাঁড়াবে ২২০০ জিবিপিএস। সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।