বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক: কৃষিতে বাংলাদেশের সাফল্য ঈর্ষণীয়। কৃষিজমি কমতে থাকা, জনসংখ্যা বৃদ্ধিসহ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বন্যা, খরা, লবণাক্ততা ও বৈরী প্রকৃতিতেও খাদ্যশস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উদাহরণ। ধান, গম ও ভুট্টা বিশ্বের গড় উৎপাদনকে পেছনে ফেলে ক্রমেই এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ। করোনার পর সুস্থ হয়ে উঠেছে পৃথিবী। ফলে কৃষিতে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার সময় এখনই। দৈনিক নয়া দিগন্তে সমীরন বিশ্বাস-এর একটি লেখায় এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য উঠে এসেছে।
কৃষিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে (এআই) বাংলায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বলা হয়। এটি কম্পিউটার বিজ্ঞানের একটি শাখা। আবার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অনেক শাখা-প্রশাখা রয়েছে। তবে এর মধ্যে কম্পিউটার ভিশন (যান্ত্রিক দৃষ্টি) ও প্রেডিকশন (পূর্বাভাস) বেশ ব্যবহার হচ্ছে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির বৈশিষ্ট্য
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আদর্শ বৈশিষ্ট্য হলো যুক্তিযুক্ত কারণ। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার একটি সাবসেট হচ্ছে মেশিন লার্নিং। যা কম্পিউটার প্রোগ্রামগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে মানুষের কাছ থেকে সহায়তা ছাড়াই নতুন ডেটা থেকে শিখতে ও মানিয়ে নিতে পারার ধারণাকে বুঝায়।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার
বর্তমান বিশ্বে কম্পিউটার প্রযুক্তি নির্ভর এমন কোনো ক্ষেত্র খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহারিক প্রয়োগ নেই। আধুনিক কৃষি, চিকিৎসাবিদ্যায় রোগ নির্ণয়, স্টক মার্কেটের শেয়ার লেনদেন, রোবট কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ, আইনি সমস্যার সঠিক সমাধান, বিমান পরিচালনা, যুদ্ধক্ষেত্র পরিচালনায়, ব্যাংকিং কার্যক্রম, ডিজাইন তৈরি, সাইবার নিরাপত্তা, ভিডিও গেমস, স্মার্ট গাড়ি, ডাটা সেন্টার ম্যানেজমেন্টসহ প্রায় সকল ক্ষেত্রেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার রয়েছে।
বাংলাদেশের কৃষিতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রযুক্তি
বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হয়ে উঠেছে শিক্ষা ও আধুনিক কৃষি ক্ষেত্রে অপার সম্ভাবনার অংশ। ইতোমধ্যে কৃষিতেও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার শুরু হয়েছে। কৃষিতে এআই প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের একদল তরুণ আইটি ইঞ্জিনিয়ার ও কৃষিবিদ যুগন্তকারী ‘ডা.চাষী’ নামে একটি মোবাইল অ্যাপ গগুল প্লে-স্টোরে রিলিজ করেছে। এই অ্যাপ দিয়ে আপনি ছাদ-বাগান ও মাঠের ফসলের রোগ ও পোকামাকড়ের সঠিক তথ্য ও সমাধান জানতে পারেন। অ্যাপে ফসলের আক্রান্ত স্থানের ছবি দেয়া হলে তা আপনাকে আপনার ফসলের সমস্যা ও সমাধান বলে দিবে।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে (ব্রি) ধানের রোগবালাই চিহ্নিত করতে ‘রাইস সল্যুশন’ (সেন্সরভিত্তিক ধানের বালাই ব্যবস্থাপনা) নামক একটি মোবাইল অ্যাপস উদ্বোধন করা হয়েছে। এটি আক্রান্ত ধান গাছের ছবি দেখে রোগ চিহ্নিত করতে সক্ষম। চলতি বছরের ২ জানুয়ারি কৃষিমন্ত্রী গাজীপুরের ব্রিতে অনুষ্ঠিত ছয় দিনব্যাপী বার্ষিক গবেষণা পর্যালোচনা কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এ মোবাইল অ্যাপটি উদ্বোধন করেন।
কৃষিতে ড্রোন প্রযুক্তি
দেশের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের মধ্যে বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ড্রোন প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে বলে জানা যায়। বাংলাদেশ সরকারের প্রতিরক্ষা ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, নেদারল্যান্ডসের টুয়েন্ট বিশ্ববিদ্যালয় এবং আন্তর্জাতিক ভুট্টা ও গম উন্নয়ন কেন্দ্র যৌথভাবে ‘স্টারস’ প্রকল্পের আওতায় দেশের কৃষি গবেষণায় আধুনিক, উন্নত ও কার্যকর প্রযুক্তি হিসেবে ড্রোন ব্যবহার করা হচ্ছে।
কৃষিতে এআই প্রযুক্তি সম্বলিত ড্রোন অর্থাৎ ড্রোনের সাথে এআই কাস্টমাইজ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে ইন্টিগ্রেট করলে ড্রোনটি একবার ফসলের ক্ষেতের ওপর দিয়ে উড়ে গেলে ওই এলাকার সার্বিক অবস্থা জানান দিতে সক্ষম হবে।
ফসলের মাঠের আদ্রতা পরিমাপ করা, ফসলে উপাদানের উপস্থিতি নির্ধারণ করা, শস্য রোপন ডিজাইন করা, বীজ রোপন করা, পোকার আক্রমণ জানা, কীটনাশক স্প্রে করা, সেচ মনিটরিং করা, ফসলের উৎপাদন জানা, ফসলের সার্বিক মনিটরিং করা, মাটির নিউট্রেন্ট, আদ্রতা, তাপমাত্রা, পিএইচ, লবণাক্ততা জানা, ফসলের নিউট্রেন্টের অভাব জানা, কৃষি ওয়েদার ফোরকাস্টিং জানা ও আগাম অ্যালার্ম দেয়া, ফসলের আগাম সম্ভাব্য ফলনের পূর্ভাবাস দেয়া ইত্যাদি সম্ভব হবে কৃষিতে এআই প্রযুক্তি ব্যবহারে।
কৃষিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সম্প্রসারণ ঘটিয়ে কৃষিকে সাশ্রয়ী, টেকসই, বুদ্ধদীপ্ত প্রযুক্তিভিত্তিক স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার এখনি সময়।
লেখক: সমীরন বিশ্বাস
কৃষিবিদ
[email protected]
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।