জুমবাংলঅ ডেস্ক: প্রায় সব রকমের সবজি চাষাবাদ হওয়ায় চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলাকে বলা হয় সবজিভাণ্ডার। তবে বিভিন্ন প্রজাতির সবজির সঙ্গে শিম চাষের মাধ্যমে দেশ-বিদেশে ব্যাপক সুনাম কুড়িয়েছেন সীতাকুণ্ডের হাজারো কৃষক। শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা—সারা বছরই এখানে শিম চাষ করেন হাজার হাজার কৃষক। এখানকার শিম দেশের নানা অঞ্চলের পাশাপাশি ইউরোপ-আমেরিকাসহ মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে রপ্তানি করা হয়। কালের কন্ঠের প্রতিবেদক সৌমিত্র চক্রবর্তী-এর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বিস্তারিত।
ফলে প্রতিবছর গড়ে ১২০ কোটি টাকারও বেশি আয় হয় শিম চাষে। এতে একদিকে কৃষকদের ভাগ্যবদল হচ্ছে আর অন্যদিকে ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে দেশের অর্থনীতিতে।
স্থানীয় ও কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘকাল ধরে শীত মৌসুমে এ উপজেলার পাহাড়চূড়া থেকে সাগরপারের বেড়িবাঁধ পর্যন্ত প্রায় সর্বত্র প্রচুর পরিমাণে শিম চাষ হয়ে আসছে। তবে প্রায় এক যুগ ধরে এখানে গ্রীষ্মকালীন শিমের চাষও বেড়েছে। ফলে সারা বছরই চাষ হচ্ছে রূপবান শিমের।
সরেজমিনে গিয়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ফসলি জমি ও সবজির হাট ঘুরে দেখা গেছে, এ মৌসুমেও গ্রীষ্মকালীন শিমের প্রচুর চাষ হয়েছে। কৃষকরা ক্ষেত থেকে শিম তুলে বাজারে নিয়ে বিক্রি করছেন এবং বেশ ভালো দাম পেয়ে তাঁরা উচ্ছ্বসিত।
উপজেলার বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের টেরিয়াইল গ্রামের শিম চাষি মো. সোলেমান জানান, তিনি কয়েক বছর ধরে শীতকালের মতো গ্রীষ্মকালেও শিম চাষ করছেন। এবার তিনি মোট ৫৬ শতক জমিতে রূপবান শিম চাষ করেছেন। গত বৈশাখ মাসে বীজ বপন করেন তিনি। বীজ, খুঁটি, সার, কীটনাশক, শ্রমিকের মজুরি মিলিয়ে খরচ হয়েছে ৪০ হাজার টাকার মতো। শ্রাবণ মাস থেকে শিম বিক্রি শুরু হয়েছে। প্রথম দিকে প্রতি কেজি শিম পাইকারিতে ১৩০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা কেজি। সব মিলিয়ে এরই মধ্যে ২০ হাজার টাকার মতো শিম বিক্রি করেছেন। এই জমি থেকে দেড় লাখ টাকার মতো শিম বিক্রি হবে বলে আশাবাদী তিনি। কৃষক সোলেমান বলেন, যত্ন করলে রূপবান শিমগাছগুলো থেকে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে শিম পাওয়া সম্ভব।
শুধু টেরিয়াইল এলাকায় গ্রীষ্মকালীন শিম চাষ করেছেন আরো অন্তত ১২০ জন কৃষক। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বাচ্চু মিয়া খোকন, মানিক, পারভেজ, ফয়সাল, নাজমুল, নাজিম, নবী, আজাদ। তাঁরা একইভাবে শিম চাষ করেছেন। খরচের চেয়েও লাভ হচ্ছে তিন থেকে চার গুণ। ফলে প্রতিবছর বাড়ছে গ্রীষ্মকালীন শিমের চাষ।
সহকারী কৃষি কর্মকর্তা পিপাস চৌধুরী বলেন, এ এলাকায় কৃষক সোলেমানসহ ১২০ জনের মতো কৃষক গ্রীষ্মকালীন শিম চাষ করেছেন। প্রত্যেকের ক্ষেতেই বাম্পার ফলন হয়েছে। তিনি বলেন, কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে আমি এখানে কৃষকদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখে ভালো ফলনের জন্য সহযোগিতা করে যাচ্ছি। এখন ভালো ফলন এবং বেশি লাভে তাঁদের খুশি দেখে ভালো লাগছে।
সীতাকুণ্ড উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাবীবুল্লাহ জানান, সীতাকুণ্ডকে বলা হয় শিমরাজ্য। শীতে এখানে পাহাড় থেকে সাগর পর্যন্ত শুধু শিম আর শিম চোখে পড়বে। এখন গ্রীষ্মকালেও প্রচুর শিম চাষ হচ্ছে। শীত-গ্রীষ্ম বারো মাসে যে শিম উৎপাদিত হয়, তা দেশের চাহিদা পূরণ করে। শিম ও বিচি আকারে ইউরোপ-আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়ে আসছে লাখ লাখ ডলার। এ বছর উপজেলায় শীত মৌসুমে তিন হাজার হেক্টর জমিতে ১৮ হাজার ২৩০ জন কৃষক শিম চাষ করেছেন। প্রতি হেক্টরে ১৫ মেট্রিক টন হিসাবে এ বছর ৪৫ হাজার মেট্রিক টন শিম উৎপাদিত হয়েছে, যার বাজারমূল্য ১১২ কোটি টাকারও বেশি।
এ ছাড়া গ্রীষ্মকালে শিম চাষ হয়েছে ২৫ হেক্টর জমিতে। প্রতি হেক্টরে ফলন হবে অন্তত ছয় মেট্রিক টন। এ শিম কয়েক কোটি টাকায় বিক্রি হবে বলে জানান তিনি। সব মিলিয়ে এ উপজেলার শিম চাষ থেকে ১২০ কোটি টাকারও বেশি আয় হয়, যা দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
চাকরির পেছনে না ছুটে ফলবাগান করে বাজিমাত ফারুকের, বছর শেষে আয় লাখ টাকা
Own the headlines. Follow now- Zoom Bangla Google News, Twitter(X), Facebook, Telegram and Subscribe to Our Youtube Channel