জুমবাংলা ডেস্ক: দেশের মানুষের কল্যাণে এবং দেশের মানুষের শিক্ষায় ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় তাঁর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে অবৈতনিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
টানা তিনবার ক্ষমতায় থাকায় এবং হাতে সময় পাবার ফলে তাঁর সরকারের প্রচেষ্টায় বাংলাদেশে এখন ডিজিটাল ডিভাইস তৈরি হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ই-গভর্ণ্যান্স প্রতিষ্ঠা এবং আইসিটি শিল্পের বিকাশে গত ১৩ বছর ধরে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন আমরা করছি।
এসব কাজে তাঁর ছেলে এবং প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় সব ধরনের পরামর্শ এবং সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষের কল্যাণে এবং দেশের মানুষের শিক্ষায় সে (জয়) অবৈতনিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী আজ (১৩ জানুয়ারি) সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নবনির্মিত ‘জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কমপ্লেক্স’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যুক্ত হন।
এসময় সরকারে আসার পরই বিএনপি’র পররাষ্ট্র মন্ত্রী মোরশেদ খানের মনোপলী ভেঙ্গে মোবাইল টেলিফোনকে বেসরকারি খাতে উন্মুক্ত করে জনগণের নাগালের মধ্যে নিয়ে আসা, সারাদেশে ডিজিটাল টেলিফোন চালু, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ মহাকাশে উৎক্ষেপন এবং সারাদেশে ইন্টারনেট সেবা ছড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে দেশকে ডিজিটাইজেশনে তাঁর সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে এসে এই খাতের উন্নয়নে নতুন নীতিমালা গ্রহণ করে। সফ্টওয়্যার, ডাটা-এন্ট্রি, ডাটা-প্রসেসিংয়ের উন্নয়নে আইটি-ভিলেজ এবং হাইটেক-পার্ক গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়। শুল্কমুক্ত কম্পিউটার, কম্পিউটার যন্ত্রাংশ এবং সফ্টওয়্যার আমদানির অনুমোদন দেয় এবং কম্পিউটার প্রশিক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করে। কিন্তু সে সময় প্রায় ১০ হাজার স্কুলে বিনামূল্যে কম্পিউটার প্রদানে তাঁর সরকারের উদ্যোগকেও পরবর্তী বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এসে নস্যাৎ করে। আন্তর্জাতিক আদালতে ক্রয় চুক্তি ভঙ্গের দায় দেশের অর্থের ক্ষতিপূরণ ও গুনতে হয় তখন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রথমে প্রশিক্ষণের জন্য বিভিন্ন জায়গা থেকে কম্পিউটার সংগ্রহের চেষ্টার পর ১০ হাজার স্কুলে ১০ হাজার কম্পিউটার প্রদানের জন্য একটি প্রকল্প গ্রহণ করি এবং কম্পিউটার কেনার পদক্ষেপ নিই। উন্নয়ন সহযোগীরা এগিয়ে আসে এবং স্কুলগুলোর একটি তালিকা করা হয়। অর্ধেক মূল্যে নেদারল্যান্ডস সরকার তাদের কোম্পানির কাছ থেকে কম্পিউটার কেনার প্রস্তাব দিলে আমরা এই ভাল প্রস্তাবে রাজি হয়ে সব ধরনের পদক্ষেপ নিই। তাদের সঙ্গে চুক্তিও হয়ে যায়।
‘কিন্তু নেদারল্যান্ডসের যে কোম্পানি থেকে কম্পিউটার নেয়া হচ্ছে তার নাম ছিল নেদারল্যান্ডসের জাতীয় ফুলের নামে ‘টিউলিপ’। তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানার মেয়ে ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিকির ও নাম ‘টিউলিপ’ হওয়ায় চুক্তি সম্পাদনের পর সরকারের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে তা বাতিল করে পরবর্তী বিএনপি সরকার। কারণ আমাদের অতি জ্ঞানী তদানিন্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে কেউ বোঝায় শেখ রেহানার মেয়ের নাম টিউলিপ, কাজেই নেদারল্যান্ডসের সেই কোম্পানিটাও টিউলিপের। এই কোম্পানি থেকে কম্পিউটার নেয়া যাবেনা এবং সে সেটা বাতিল করে দেয়,’ যোগ করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, এই হঠাৎ চুক্তি বাতিলের ফলে নেদারল্যান্ডসের ঐ কোম্পানি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মামলা করে। এই মামলা মোকাবেলা করতে আইনজীবী ঠিক করা হয় এবং নানা কাজে অর্থ ব্যয় করে বাংলাদেশের সেখানে ক্ষতিপূরণ দিতে হয় প্রায় ৬০ কোটি টাকা।
তিনি বলেন, ১০ হাজার কম্পিউটারতো গেলই আরো ৬০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হলো একটা দেশের সরকার প্রধানের সিদ্ধান্তের কারণে। আর এ ধরণের সরকার প্রধান থাকলে দেশের উন্নতি কীভাবে হবে আপনারা নিজেরাই বুঝে দেখেন।
গবেষণার প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সমুদ্র সম্পদ অনুসন্ধান এবং আহরণ বিষয়ে গবেষণা, সুনীল অর্থনীতিকে জাতীয় উন্নয়নে ব্যবহার করার বিষয়ে গবেষণা এবং রপ্তানি পণ্যের গুনগত মান বজায় রেখে পণ্য রপ্তানির সনদ প্রদানের ক্ষেত্রেও গবেষণার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
এ সময় বিএনপি সরকারের সময় চিংড়ি মাছে লোহা ভরে রপ্তানি করায় ইউরোপে চিংড়ি রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথাও স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকার ক্ষমতায় আসার পর সেই রপ্তানি বাজার পুণরায় চালুর কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গবেষণার উন্নয়নে এবং দেশে যথাযথ জ্ঞানসম্পন্ন বিজ্ঞানী-গবেষক সৃষ্টিতে ‘জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কমপ্লেক্স’ বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলেও আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি দেশের মানুষের কল্যাণে গবেষণা লব্ধ জ্ঞানকে কাজে লাগানোরও আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা এ সময় বিশ্বব্যাপী করোনা সংক্রমণ দ্রুত বেড়ে যাওয়ায় দেশের জনগণকে কঠোরভাবে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার আহবান জানান। সবাইকে মাস্ক ব্যবহার এবং করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকার আরোপিত ১১ দফা বিধিনিষেধ কঠোরভাবে পালনেরও পরামর্শ দেন তিনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।