জুমবাংলা ডেস্ক: আজ চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪১ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা এ জেলায় গত ৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এদিকে ২ এপ্রিল থেকে আজ ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত টানা ১৩ দিন ধরে আবহাওয়া অধিদপ্তর দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করে আসছে চুয়াডাঙ্গায়।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, প্রতিদিনই জেলায় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তীব্র তাপদাহ আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকবে। বৃষ্টির সম্ভাবনা না থাকায় তাপমাত্রা কমার কোন সম্ভাবনা নেই। শুক্রবার দুপুর ৩ টায় চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪১.৭ ডিগ্রি। বাতাসের আদ্রতা ১৪ শতাংশ। এর আগে দুপুর ১২টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০.৩ ডিগ্রি।
একটানা তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় হিট স্ট্রোক, হৃদরোগ, ডায়রিয়া, শিশুদের নিউমোনিয়াসহ গরমজনিত রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে প্রতিদিনই ৭০-৮০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছে। এর মধ্যে ডায়রিয়া ও টাইফয়েড রোগীই বেশি।
তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় গরমের প্রভাবে সবচেয়ে সংকটে আছেন পরিবারের জ্যেষ্ঠ ও শিশু সদস্যরা। বাড়ি বাড়ি গরমজনিত জ্বর-ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়েছে। সদর হাসপাতাল ও জেলার তিনটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গরমজনিত রোগের চিকিৎসা নিতে রোগীদের ভিড় বেড়েই চলেছে।
সদর হাসপাতালের আরএমও ডা. ফাতেহ আকরাম জানান, হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের বেশিরভাগই গরমজনিত রোগে আক্রান্ত।
চুয়াডাঙ্গার রেলবাজারের ব্যবসায়ী সাহেল আহমেদ জানান, সূর্যের প্রখরতায় আর পিচ ঢালা পথের উষ্ণতায় চলাচল করা খুবই কষ্টকর হচ্ছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে না।
খেটে খাওয়া ও দিনমজুর মানুষগুলো পেটের দায়ে ভোর হওয়ার সাথে কাজের সন্ধানে বের হয়ে পড়ছে। দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর কাজ না পেয়ে অনেকে ফিরে যাচ্ছে। সড়কে মানুষের উপস্থিতি না থাকায় ইজিবাইক, রিক্সা, ভ্যান চলাচলও কমে যাচ্ছে। ভাড়া না পাওয়ায় তারা অলস সময় পার করছেন। রাস্তার ধারে ফলের দোকানসহ সব ধরনের দোকানে ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়ছে।
ইজিবাইক চালক মনির হোসেন জানান, ‘পেটের তাগিদে বের হচ্ছি। এতো, গরম পড়ছে। রাস্তা-ঘাটে মানুষ বের হচ্ছে না। তাই ভাড়াও পাচ্ছি না। এমন দিন থাকলে, খাওয়া-দাওয়া করে বেঁচে থাকায় কষ্টকর।’
চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার হাটকালুগঞ্জে অবস্থিত প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের সিনিয়র পর্যবেক্ষক রাকিবুল হাসান জানান, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চলতি মৌসুমে মাঝারি দাবদাহ বিরাজ করছিল। ওই দিন জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪১ সেলসিয়াস। শুক্রবার রেকর্ড করা হয়েছে ৪১.৭ ডিগ্রি। চলতি সপ্তাহেই তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রিতে পৌঁছাতে পারে। সেই সঙ্গে প্রচণ্ড থেকে প্রচণ্ডতর দাবদাহ দেখা দিতে পারে চুয়াডাঙ্গাতে।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. মাহবুবুর বলেন, ‘গরমে শিশুদের ডায়রিয়া, টাইফয়েড, শরীরে ঘাম বসে নিউমোনিয়া, ঠান্ডা, সর্দি, কাশি, জ্বর ও প্রস্রাবে সংক্রমণ দেখা দিচ্ছে। এসব রোগ নিয়েই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছে তারা। আমরা শিশুকে ঘরের বাইরে বের হতে দেওয়া যাবে না। টাটকা খাবার খাওয়াতে ও ফ্যানের নিচে রাখতে হবে।’
চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করার ঘটনা এটাই প্রথম নয়। বরং এর আগে ২০১৪ সালে এই জেলার তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করার কথা জানা যায়।
আবহাওয়াবিদ একেএম নাজমুল হক বলেন, বাংলাদেশে এপ্রিল হচ্ছে সর্বোচ্চ গরম মাস। এই সময়ে পৃথিবী সূর্য থেকে রশ্মি বা কিরণ পায় সেটি লম্বালম্বিভাবে পায়।
সূর্যকে কেন্দ্র করে যে কক্ষপথ ধরে পৃথিবী ঘুরছে সেখানে পৃথিবীর অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ সবচেয়ে কাছ থেকে সূর্যরশ্মি গ্রহণ করছে।অন্যভাবে বলতে গেলে, এপ্রিল মাসে সূর্য থেকে বাংলাদেশের অবস্থান অন্য সময়ের তুলনায় সবচেয়ে কাছাকাছি থাকে। যার কারণে সূর্যের তাপ বেশিই পরে এই অঞ্চলে।
তবে চুয়াডাঙ্গায় কেন বেশি তাপমাত্রা থাকে এমন প্রশ্নের উত্তর আবহাওয়াবিদ একেএম নাজমুল হক বলেন, যশোর, চূয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, খুলনা এই অঞ্চলে বিস্তৃত সমভূমি রয়েছে। এছাড়া এই অঞ্চলের পশ্চিমে অবস্থিত পশ্চিমবঙ্গ। সেখানেও বিশাল এলাকা জুড়ে সমভূমি। ফলে তাপমাত্রা প্রবাহের যে তিনটি পদ্ধতি রয়েছে- পরিবহন, পরিচলন এবং বিকিরণ- এই তিনটি পদ্ধতির মধ্যে সমভূমি হওয়ার কারণে এই অঞ্চল দিয়ে পরিবহন পদ্ধতিতে তাপ প্রবাহিত হয়। ফলে সরাসরি তাপ লাগার কারণে পুরো অঞ্চলের তাপমাত্রা বেশি থাকে।
দ্বিতীয়ত, চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলের দক্ষিণ-পশ্চিম এলাকা দিয়ে জলীয় বাষ্প প্রবেশ করায় তাপমাত্রা বাড়ে।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গোপসাগরের পশ্চিমঘাট হচ্ছে খুলনা, চুয়াডাঙ্গা অঞ্চল। আর বঙ্গোপসাগর হচ্ছে জলীয় বাষ্পের উৎস। বঙ্গোপসাগর থেকে জলীয়বাষ্প এই অঞ্চল দিয়ে প্রবেশ করে বলে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ অন্যান্য এলাকার তুলনায় এই এলাকায় বেশি থাকে। ফলে তাপমাত্রাও বেশি থাকে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।