অনেকদিন এই সমস্যাটি মোকাবিলা করেছেন এমন একজন নারী যুক্তরাজ্যের রেবেকা বার্কার। তিন সন্তানের জননী এই নারী বলেছেন, এটা ছিল অসহ্য একটি ব্যাপার যে, দিনে পাঁচবার যৌ.নমিলন করার পরেও তা আমার জন্য যথেষ্ট ছিল না।
‘ঘুম থেকে ওঠার পরে প্রথমে এটার চিন্তাই আমার মাথায় আসতো। অনেক চেষ্টা করেও সেটা আমি মাথা থেকে সরাতে পারতাম না।’ বলেন ৩৭ বছরের নর্থ ইয়র্কশায়ারের এই বাসিন্দা।
রেবেকা বার্কার বলেন, সবকিছুর সঙ্গে যেন আমি এর মিল খুঁজে পেতাম। আমি মনে করি, এটা আমার বিষণ্ণতা আর সেরোটোনিনের অভাবের সঙ্গে জড়িত ছিল। আমার পুরো শরীর যেন এটা চাইতো।
বার্কার বলেন, যৌ.নমিলন করার পর আমি খানিকটা স্বস্তি পেতাম। কিন্তু পাঁচ মিনিট পরেই আবার আমার চাহিদা তৈরি হতো। সারাক্ষণ আমার মাথার মধ্যে এটাই ঘুরত বলে বাইরে মানুষজনের মধ্যে যেতেও লজ্জা লাগতো।
রেবেকা বার্কার
এই সমস্যা বার্কারের সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর হয়ে ওঠে। প্রথমে তার সঙ্গী বিষয়টি উপভোগ করলেও, পরে তা দুজনের মধ্যে জটিলতা তৈরি করে। ২০১৪ সালের নভেম্বরে বার্কার কিছুদিনের জন্য তার মায়ের কাছে আলাদা থাকতে যান। এরপরই তাদের সম্পর্কটি ভেঙে যায়। পরে বার্কার মানসিক চিকিৎসকের কাছে যান। এরপর তিনি বিষণ্ণতা কাটিয়ে ওঠার জন্য চাকরি ও স্থান পরিবর্তন করেন। এখন ফ্রান্সে বসবাস করেন বার্কার। বিষণ্ণতা আর যৌ.ন আসক্তি দুটোই কাটিয়ে উঠেছেন তিনি।
রিলেট নামের দাতব্য সংস্থাটি বলছে, আর দশটা আসক্তির মতো যৌ.ন আসক্তিও একটি রোগ। ২০১৯ সাল নাগাদ এটিকে একটি রোগ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার কথা ভাবছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
এই রোগে আক্রান্ত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন ব্যক্তি বলছেন, তিনি এতটাই আসক্ত হয়ে গিয়েছিলেন যে, এক পর্যায়ে তিনি স্ত্রীকে প্রতারণা করতে শুরু করেন।
ওই ব্যক্তি বলেন, ‘এটা ছিল ভয়াবহ, কষ্টকর অভিজ্ঞতা। যখন আপনার মাথায় সবসময়ে এটা কাজ করতে থাকে, তখন সেটা যৌ.ন আনন্দ থাকে না, সেটা সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যা জীবনকে ধ্বংস করে দেয়।’
‘এটা অনেকটা মদ্যপায়ী হয়ে ওঠার মতো ব্যাপার ছিল। যখন আপনার নেশা উঠবে, তখন এটা করতে হবে। কিন্তু এরপরে চরম অপরাধবোধ কাজ করে। আমি ভাবি, আর কখনোই এটা করবো না’ বলেন তিনি।
পরে ওই ব্যক্তি যুক্তরাজ্যের সেক্স এডিক্টস অ্যানোনিমাস বা এসএএ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের দ্বারস্থ হন। তখন তিনি দেখতে পান, তার মতো আরও অনেকে এই রোগে ভুগছে।
দি অ্যাসোসিয়েশন ফর দি ট্রিটমেন্ট অব সেক্স অ্যাডিকশন অ্যান্ড কমপালসিভিটি বলছে, যৌ.ন আসক্তি বাড়তে থাকা একটি সমস্যা। গত কয়েক বছরে রোগীদের সংখ্যা অনেক বেড়েছে, এদের বেশিরভাগই পুরুষ। যাদের ৩১ শতাংশ মানুষের বয়স ২৬ থেকে ৩৫ বছর।
প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা পাওলা হল বলেছেন, ‘এই রোগীদের জন্য জাতীয় স্বাস্থ্য সেবার মাধ্যমে বিনামূল্যের চিকিৎসা দরকার। কারণ এই রোগীরা ক্ষতির বিষয়টি বুঝতে পারেন। এখন প্রাতিষ্ঠানিকভাবে তাদের সহায়তা দরকার।’
হল আরও বলেন, ‘তাদের জন্য এমন ব্যবস্থা থাকা দরকার যে, তারা সরাসরি চিকিৎসকের কাছে গিয়ে এর জন্য চিকিৎসা চাইতে পারবেন। কারণ এটা তাদের ব্যক্তি জীবনে, পারিবারিক জীবনে, আর্থিক আর মানসিকভাবেও ক্ষতির কারণ হয়ে ওঠে।’
তবে এনএইচএস বলছেন, তাদের বিশেষজ্ঞরা এখনো একমত নন যে, কারো পক্ষে যৌ.ন আসক্ত হয়ে ওঠা সম্ভব কি না। এ ধরনের সমস্যায় সহায়তার জন্য তারা এসএএ অথবা এটিএসএসির কাছেই যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।