জুমবাংলা ডেস্ক : রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ও মহল্লার দোকানগুলোতে হঠাৎ করে উধাও হয়ে গেছে সয়াবিন তেল। কোনো কোনো দোকানে পাওয়া গেলেও সরকার নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি হচ্ছে না। সেগুলোতে বোতলজাত তেলের গায়ের মূল্য মুছে লিটারপ্রতি সয়াবিন তেল বিক্রি করা হচ্ছে ১৯০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত।
মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর একাধিক খুচরা বাজার ও পাড়া-মহল্লার মুদি দোকান ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। বাজারে তেল নিয়ে এমন তেলেসমাতিতে ক্ষুব্ধ দেখা যায় ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ে। তাদের দাবি, ডিলার এবং মালিকপর্যায়ে অসাধু ব্যক্তিদের কারণে প্রতি রমজানের পূর্বেই বাজারে এমন চিত্র দেখা যায়।
এদিকে, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিটিসি) হিসাবে, দেশে বছরে প্রায় ২২ লাখ মেট্রিক টন ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে, যার বড় অংশ আমদানি করে মেটানো হয়। দেশীয় বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান অপরিশোধিত ভোজ্যতেল ও বীজ আমদানি করে তা থেকে তেল উৎপাদন করে বাজারে বিক্রি করে থাকে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যমতে, গত নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত তিন মাসে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে অপরিশোধিত সয়াবিন তেল খালাস হয়েছে ২ লাখ ৩২ হাজার টন, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬৯ শতাংশ বেশি। সয়াবিন বীজের আমদানিও বেড়েছে। গত জানুয়ারিতে সয়াবিন বীজ আমদানি হয়েছে তিন লাখ টন, যা গত এক বছরে এত বেশি সয়াবিন বীজ আমদানির রেকর্ড নেই।
অন্যদিকে, বিশ্ববাজারে সয়াবিন তেলের দাম কমছে বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটির তথ্যমতে, জানুয়ারি মাসে প্রতি টন সয়াবিন তেলের গড় দাম দাঁড়ায় ১ হাজার ৬১ ডলারে, যা গত নভেম্বরের চেয়ে ১০০ ডলারের মতো কম।
অন্যদিকে, বাংলাদেশে দাম বাড়ছে। বোতলজাত তেল না থাকায় খোলা সয়াবিন তেলের দাম এক সপ্তাহে লিটারপ্রতি ৬ থেকে ৭ টাকা বেড়েছে।
যদিও সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এ তথ্য জানিয়ে বলছে, এখন খোলা সয়াবিনের দাম প্রতি লিটার ১৮০-১৮২ টাকা।
তবে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটের কাঁচাবাজারে ক্রেতা আয়েশা শারমিন বলেন, সামনে রোজা আসছে তাই বাজারে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। ৩ থেকে ৪টা দোকান ঘুরে অবশেষে সরিষার তেল কিনেছি, সেটাও বেশি দামে কিনতে হয়েছে। এখনও তো রোজার বেশ দেরি, এতো আগেই যদি বাজারের এই অবস্থা হয়, তাহলে তিন-চারদিন আগে তো বাজারে ঢুকাই যাবে না।
অন্যদিকে, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের খোকন জেনারেল স্টোরের বিক্রেতা মো. হুমায়ুন কবির জানান, তিনি পাইকারি দোকান থেকে পাঁচ লিটারের পাঁচটি বোতল কিনেছেন। এসব বোতলের গায়ে লেখা সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৮৫০ টাকা। তিনি কিনেছেন ৮৬০ টাকায় এবং বিক্রি করেছেন ৮৬৫ থেকে ৮৭০ টাকা করে।
রামপুরার ভোক্তা শামীম আহমেদ বলেন, বনশ্রীর অনেকগুলো দোকান ঘুরে অবশেষে একটি দোকানে পেয়েছি। সেখানেও বোতলের গায়ের মূল্য মুছে লিটারপ্রতি ১৯০ টাকায় বিক্রি করছে তারা। বাধ্য হয়ে সেখান থেকেই কিনতে হয়েছে। রোজার এখনও ১৫ থেকে ২০ দিন বাকি, এখনই যদি তেল না পাওয়া যায়, তাহলে আর কিছুদিন পর কী হয় বুঝতে পারছি না।
অপরদিকে, একই বাজারে তেল নিয়ে এমন তেলেসমাতিতে ক্ষুব্ধ দেখা যায় বিক্রেতাও। তাদের দাবি, ডিলার এবং মালিকপর্যায়ে অসাধু ব্যক্তিদের কারণে প্রতি রমজানের পূর্বেই বাজারে এমন চিত্র দেখা যায়। যে কারণে ক্রেতাদের নানা ধরনের খারাপ মন্তব্য শুনতে হয় বিক্রেতাদের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভোজ্যতেল সরবরাহকারী শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, আমরা নিয়মিত বাজারে তেল সরবরাহ করছি। প্রতিদিন যা সরবরাহ করছি, তা বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও মনিটরিং সেলকে জানাচ্ছি। কিন্তু সরবরাহ সংকট কেন, তা বলতে পারব না।
ভোজ্যতেলের বাজারের আরেক শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) উপমহাব্যবস্থাপক তসলিম শাহরিয়ার বলেন, শীতের শেষ দিকে সয়াবিন তেলের চাহিদা কমার কথা। এখন তো সরবরাহে ঘাটতি হওয়ার কথা নয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।