যা কিছু দোলে, তা–ই দোলক, যেমন দোলনা। দোলকের মজার কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। যার একটি হলো, একটি দোলক একটি বিন্দুকে বারবার অতিক্রম করে, একবার ডান দিক থেকে বাঁ দিকে, আরেকবার বাঁ দিক থেকে ডান দিকে; এই ধরনের গতিকে দোলনগতি বলে। বিষয়টি সত্যিই ভাবার মতো, সুতার মাথায় ভারী বল না থাকলে সুতা দুলবে না। অথচ দোলকের দোলনকালে এই ভরের কোনো ভূমিকা নেই। বলটির কাজ হলো পৃথিবীর অভিকর্ষ বল অনুভব করা, যার জন্য সুতা দোল খায়। দোলনকাল পৃথিবীর অভিকর্ষজ ত্বরণের ওপর নির্ভর করে, যা কিনা পুরো পৃথিবীর একটি বৈশিষ্ট্য।
দোলকের দোলনকাল প্রথমে পৃথিবীর পৃষ্ঠে মাপব, তারপর খাড়া ওপরের দিকে উঠতে থাকব। ঠিক যে উচ্চতায় দোলনকাল পৃথিবীপৃষ্ঠের দোলনকালের একেবারে দ্বিগুণ হবে, সে উচ্চতাই হলো পৃথিবীর ব্যাসার্ধ। তারপর বসে কয়েক সেকেন্ড হিসাব করলেই পৃথিবীর ভর পাওয়া যাবে, আস্ত পৃথিবীর ভর (হিসাব নিজের জন্য)।
কোয়ান্টাম মেকানিকসেও দোলনগতির সমাধান করা যায়। বিজ্ঞানের অল্প কিছু সমস্যার মধ্যে হারমোনিক পটেনশিয়াল একটি, যার যথাযথ সমাধান আছে। অর্থাৎ এই হারমোনিক পটেনশিয়ালের মাঝে একটি ছোট বস্তু (কোয়ান্টাম মেকানিক্যালি ছোট, যেমন একটি অ্যাটম) রেখে দিলে বস্তুর বর্ণনাকারী একটি ফাংশন পাওয়া যাবে, এগুলোকে একত্রে আইগেন ফাংশন বলে।
দোলনগতির সঙ্গে যুক্ত আরও একটি মজার বিষয় হলো রেজোন্যান্স বা অনুরণন! একটি দোলককে অল্প পরিসরে দুলিয়ে ছেড়ে দিলে দোলক যে দোলনকালে দোলে, তাকে ন্যাচারাল বা স্বাভাবিক দোলনকাল বলে। চাইলেই একটি দোলককে যেকোনো দোলনকালে দোলানো সম্ভব (একটি দোলককে হাত দিয়ে ধরে দ্রুত বা আস্তে দোলানো যায়), এর জন্য বাইরে থেকে কাউকে দোল দিতে হবে, বাইরে থেকে যে দোল দেওয়া হচ্ছে, তার দোলনকালকে আরোপিত দোলনকাল বলে।
স্বাভাবিক দোলনকালের সমান দোলনে দোল দেওয়া হয়, তখন এরা বাইরে থেকে শক্তি নিতে থাকে। বেশি শক্তি নিতে নিতে একসময় ভেঙেও পড়ে যেতে পাড়ে। ভূমিকম্পের সময় বিল্ডিংও এভাবে ভেঙে পড়তে পারে। একইভাবে ঝড়ে ঝুলন্ত সেতু এ কারণেই ভেঙে পড়তে পারে।
আমাদের চারপাশে দোলক আর দোলনগতির অভাব নেই। দোলন আছে গাছের পাতার দোলনে, গাছের ডালে, ইলেকট্রিক সার্কিটে, মলিকুলের ভেতর অ্যাটমে, ক্রিস্টালে, অর্থাৎ আমাদের চারদিকেই শুধু দোলক আর দোলনগতি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।