ওমর ফারুক হিমেল: ফুটবল কূটনৈতিক দুনিয়ার নতুন প্রসব ঢাকার আর্জেন্টিনা দূতাবাস। এই সেদিনও বাংলাদেশের মানুষকে আর্জেন্টিনার ভিসার জন্য আগে ব্যাগ গুছিয়ে রওনা দিতে হতো দিল্লির উদ্দেশ্যে। অবসান হয়েছে সেইসব দিনের। সকল জল্পনা কল্পনা শেষে ঢাকায় আবার বর্ণিল আয়োজনে চালু হয়েছে আর্জেন্টিনার দূতাবাস।
আর এই দূতাবাস খোলার পেছনের মূল প্যারামিটার ছিল ফুটবল ডিপ্লোম্যাসি। সে ডিপ্লোম্যাসির দক্ষ কূটনীতিক ছিলেন দেশের ১৭ কোটি জনগণ।
অসাধারণ এই ডিপ্লোম্যাসি গল্পের মত আরেকটি গল্প খুব শিগগিরই শোনা যাবে। আর সেই গল্প হচ্ছে লাতিন আমেরিকার আরেক শক্তিশালী দেশ ঢাকায় খুলতে যাচ্ছে তাদের দূতাবাস। দেশটির নাম মেক্সিকো। আর্জেন্টিনার মতোই বাংলাদেশে ছিল না তাদের কোনও দূতাবাস। মেক্সিকোর ভিসার জন্য বাংলাদেশিদের ছুটতে হতো নয়াদিল্লিতে। তবে সেটারও অবসান হতে চলেছে।
এই দূতাবাস খোলার উদ্যোগের পেছনে রয়েছে অন্য এক গল্প। সরকারের সদিচ্ছা আর রাষ্ট্রদূতদের অহর্নিশ কূটনৈতিক প্রচেষ্টাই এনে দিয়েছে এই সফলতা। দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের বর্তমান রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম ঢাকায় দূতাবাস খোলার বিষয়টিকে আরও ত্বরান্বিত করেছেন।
শুক্রবার (৩ মার্চ) বাংলাদেশে দূতাবাস খোলার বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে মেক্সিকোর গণমাধ্যম। বৃহস্পতিবার ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে জি-২০ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকের ফাঁকে মেক্সিকোর পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্সেলো এব্রার্ড ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেনের বৈঠক হয়।
বৈঠকে মেক্সিকান পররাষ্ট্রমন্ত্রী এব্রার্ড চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশে একটি মেক্সিকান দূতাবাস খোলার ঘোষণা দেন।
মেক্সিকোর পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ১৭ কোটির বেশি জনসংখ্যা নিয়ে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি বড় জায়ান্ট শক্তি। মেক্সিকো বাংলাদেশের সাথে ওষুধ, কৃষি এবং প্রযুক্তি খাতে ব্যবসা ও সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে আগ্রহী।
১৯৭৫ সালের ৮ জুলাই বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের চার বছরের মাথায় এ দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক আনুষ্ঠানিকভাবে স্থাপিত হয়। লাতিন আমেরিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ মেক্সিকোর সঙ্গে দিন দিন আমাদের সম্পর্ক দিন দিন আরও সুদৃঢ় হচ্ছে। বাড়ছে ব্যবসা-বাণিজ্য। আমাদের পোশাক শিল্পের জন্য অত্যন্ত সম্ভাবনাময় বাজারগুলোর মধ্যে একটি মেক্সিকো। তবে পোশাক শিল্প ছাড়াও কৃষিজ দ্রব্য, চামড়া, প্লাস্টিক, সিরামিক, পাট, আইসিটি, বিদ্যুৎ এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি, ফার্মাসিউটিক্যালস, হালকা প্রকৌশল, যানবাহনের যন্ত্রাংশ, চিকিৎসা সরঞ্জামসহ স্বাস্থ্যসেবা ও কৃষিভিত্তিক শিল্পে উভয় দেশের একসঙ্গে কাজ করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।
ভারতের নয়া দিল্লীতে অবস্থিত মেক্সিকো দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত ফেডেরিকো সালাস লৎফে। কিছুদিন পূর্বে এক সেমিনারে বাংলাদেশ-মেক্সিকোর মধ্যে বাণিজ্য বৈচিত্র্যকরণের গুরুত্বের কথা জানান।
মেক্সিকোর এই দূত বলেন, বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং বৈচিত্র্যকরণের মাধ্যমে বাংলাদেশ-মেক্সিকো অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। অটোমোবাইল, ফার্মাসিউটিক্যাল, কেমিক্যাল, ফিনটেক প্রভৃতি খাতে বড় সম্ভাবনা দেখছে মেক্সিকো। বৈশ্বিক অটোমোবাইল বাজারের অন্যতম জোগানদাতা হলো মেক্সিকো।
অটোমোবাইল শিল্পে মেক্সিকোর অভিজ্ঞতা এবং প্রযুক্তি বাংলাদেশের সাথে বিনিময়ে আগ্রহের কথা জানান তিনি।
মেক্সিকোতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম জুমবাংলাকে বলেন, মেক্সিকান ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশ থেকে আইসিটি, তৈরি পোশাক, ওষুধ, প্রক্রিয়াজাত খাবার, আসবাবপত্র, আলোক-সজ্জায় ব্যবহৃত আলো ও ডায়পার পণ্য আমদানিতে আগ্রহী। তারা বাংলাদেশ থেকে সামুদ্রিক লবণও ক্রয় এবং বাংলাদেশের সুপার মার্কেট কোম্পানিগুলোর সঙ্গেও যুক্ত হতে চায়। তারা বাংলাদেশে ইলেকট্রনিক্স পণ্য, অটো পার্টস, তেল ও তেলের ডেরিভেটিভস রফতানির ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ-মেক্সিকোর মধ্যে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও অর্জনের ক্ষেত্রে অনেক মিল রয়েছে। দারিদ্র্য বিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু পরিবর্তন, জাতিসংঘে শান্তিরক্ষা-এসব ক্ষেত্রে আমরা একে অপরের অভিজ্ঞতা থেকে জ্ঞান লাভ করতে পারি।
আবিদা ইসলাম বলেন, বিগত আট বছরে দুই বন্ধুপ্রতিম দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্কে কিছুটা অগ্রগতি হলেও ভৌগলিক দূরত্ব ও ভাষার প্রতিবন্ধকতার কারণে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অন্যান্য ক্ষেত্রগুলো এখনো পূর্ণ মাত্রায় বিকশিত হতে পারেনি। তবে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার ক্ষেত্র বিস্তৃত করার অনেক সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি এবং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক উভয় ক্ষেত্রেই গুরুত্ব বিবেচনায় লাতিন আমেরিকার দেশটির সঙ্গে বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক বাড়াতে আগ্রহী বাংলাদেশ।
ঢাকায় মেক্সিকোর দূতাবাস খোলার পেছেনের নেপথ্য বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মেক্সিকো সিটিতে ২০১২ সালে বাংলাদেশ দূতাবাস প্রতিষ্ঠার পর থেকে আমার পূর্ববর্তী সকল রাষ্ট্রদূত ঢাকায় দূতাবাস স্থাপনের জন্য বারংবার মেক্সিকো সরকারকে অনুরোধ জানিয়ে এসেছে। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে অবশেষে এতদিন পরে এর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এলো।
মেক্সিকোতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত বলেন, ঢাকায় মেক্সিকোর দূতাবাস চালু হলে বাংলাদেশি নাগরিকদের ভিসা এবং অন্যান্য কনস্যুলার সংক্রান্ত জটিলতারই সমাধান হওয়ার পাশাপাশি কৃষি, ব্যবসা-বাণিজ্য, উচ্চশিক্ষা, সংস্কৃতি এবং উভয় দেশের মানুষের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর ইতিবাচক প্রভাব পরবে যা আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।