আশরাফুল আলম খোকন : কিছুদিন আগের কথা। ঢাকার একটি কফি শপের বাইরের জায়গাটায় বসে আছি। সাথে আমার এক সহকর্মী ও তিনজন সাংবাদিক। আনুমানিক রাত ১০টা বাজে তখন। আলো আঁধারির মধ্যে বসে কেউ গ্রিন টি, কেউ কফি খাচ্ছি আর আড্ডা দিচ্ছি।
এর মধ্যে দূর থেকেই দেখলাম কফি শপের সার্ভারদের সাথে তিনজন ভদ্র মহিলা কথা বলছেন। তাদের দৃষ্টি হচ্ছে আমাদের দিকে। একজন পঞ্চাশোর্ধ আর বাকি দুইজনের বয়স ৩০ এর নিচেই হবে। খুবই তথাকথিত আধুনিক পোশাক পরিহিত। আরো চোখে পড়লো কারণ পঞ্চাশোর্ধ মহিলাটির আঙ্গুল আমাদের দিকেই তাক করা ছিল। ওই মহিলাকে আমি খুব ভালো করেই চিনি, তিনিও আমাকে এবং আমার সহকর্মীকে খুবই ভালো করে চিনেন, আমাদের মধ্যকার সম্পর্কও কখনোই খারাপ না।
তিনি বাংলাদেশের একটি বিখ্যাত পরিবারের মেয়ে। আমরা তাকে এড়িয়ে চলি কারণ তার জীবনযাপন স্টাইল, আচার-আচরণ ও অসংলগ্ন কথাবার্তার কারণে। একটু দূর থেকেই শুনতে পেলাম তিনি কফি শপের কর্মচারীদের বলছেন যে, তিনি আমাদের টেবিলটাতেই বসবেন, ওরা যেন আমাদেরকে উঠিয়ে দেন। গলার আওয়াজ এতটাই চড়া ছিল যে, আমাদের পাশের টেবিলে বসা লোকজনও তা শুনতে পাচ্ছিলো।
যথারীতি কর্মচারীরা বলছিলো এটা সম্ভব না, কিন্তু বেচারি নাছোড় বান্দা। উনি আমাদের টেবিলই দখল নিবেন এইরকম একটা বডি ল্যাঙ্গুয়েজ নিয়ে আমাদের টেবিলের দিকেই এগিয়ে আসছিলেন। পাশের টেবিলগুলোরও ৩/৪ জন আমাদের পরিচিত। এখন একটা বাজে পরিস্থিতি হবে ভেবে তারাও কিছুটা বিব্রতবোধ করছিলো। কারণ বিখ্যাত পরিবারের মেয়ে হওয়ার কারণে ওই মহিলাকে মোটামুটি অনেকেই চেনেন।
পিছনে দুই তথাকথিত মডার্ন তরুণীকে নিয়ে তিনি আমার টেবিলের কাছাকাছি আসতেই আমি উঠে দাঁড়ালাম, সালাম দিলাম। তা দেখেই আমার সহকর্মী ও সাথে তিনজন সাংবাদিক উঠে দাঁড়ালো এবং সালাম দিলো। কিন্তু তারা টেবিলের উল্টো পাশে বসার কারণে ওনার আগেরকার কর্মকাণ্ডগুলো দেখেননি।
কাছে আসার আগেই একটু এগিয়ে গিয়ে আমি বললাম, আপা আপনি কি এই টেবিলে বসবেন। উনি মনে হলো একটু বিব্রত হলেন, কারণ ওনার উদ্দেশ্যতে ঠাণ্ডা পানি পড়ে গেল। আমি যতদূর বুঝেছি, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দুইজন কর্মকর্তা আর তিনজন সেলিব্রেটি সাংবাদিককে উঠিয়ে দিয়ে এই টেবিলে বসে উনি আসলে আশপাশের সবাইকে ওনার ক্ষমতা দেখাতে চেয়েছিলেন।
ওনার ক্ষমতা শো করার আগেই আমরা উল্টো সালাম দিয়ে জায়গা ছেড়ে দেয়াতে উনি নিজেই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলেন। ক্ষমতাটা শো করতে পারলেন না, ওনার চিরাচরিত অভ্যাস ঝগড়াটাও করা হলো না। হেসে বললেন, আমি সিগারেট খাইতো তাই এই টেবিলটাতে বসতে চেয়েছি, কিছু মনে করো না। আমি এখনো বুঝতে পারিনি ওই টেবিলের সাথে সিগারেটের কি মাহাত্ম আছে। কারণ পাশের টেবিলটিও খালি ছিল এবং ওখানে সব টেবিলেই কেউ না কেউ ধূমপান করেছিল।
সম্মানের সহিত ওনাকে টেবিলটি ছেড়ে দিয়ে আমরা ঠিক পাশের টেবিলটাতেই বসলাম। আমার সাথের সবাই কিছু বুঝতে না পেরে অনেকটা হাবাগোবা টাইপ চেহারা করে বসে রইলো। অপরদিকে তখন ওই টেবিলে তিনজন ভদ্র মহিলাই একসাথে সিগারেট ধরিয়ে উচ্চস্বরে হাহাহাহা করে রাজ্য জয়ের বিজয়ের হাসি হাসছিলেন।
পাশের টেবিলের একজন এসে বললো ভাই এই রকম আচরণ দেখার পরও আপনি টেবিলটা ছেড়ে দিলেন। আমার সাথের ওরাও এখন বিষয়টি বুঝে গেছে। এখন টেবিল ছেড়ে দেয়ায় তারাও একটু অবাক হলো।
আমি শুধু তাদেরকে একটি কথাই বললাম, দ্যাখো ভাই উনি দেশের খুব সম্মানী পরিবারের মেয়ে। বঙ্গবন্ধুর পর ওনার আশেপাশের যে কয়জন মানুষ বাংলাদেশের জন্মের পিছনে অবদান রেখেছেন তার বাবা তাদেরই অন্যতম একজন ছিলেন। ওনার বাবাকে এখনো দেশের মানুষ খুব সম্মান করে। এইখানে ঝগড়া করলে ওনার বাবা’র অসম্মান হতো। সবাই বলতো এই পাগলাটে মহিলাটা ওই বিখ্যাত লোকটির মেয়ে। তাই ওনার বাবা’র সম্মানটা রক্ষা করেছি মাত্র। আর উনি যাই হোক- ওনার বাবার প্রতি সম্মান দেখিয়েই স্বসম্মানে টেবিলটা ছেড়ে দিয়েছি।
(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।