এমন একটা রাত শেষ কবে এসেছিল পৃথিবীর বুকে? মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে মাঠে নেমেছে ব্রাজিল এবং আজেন্টিনা; দু’দলই যদি জিতে যেতো, চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী এই দুই দেশ বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলতো নিজেদের বিপক্ষে।
বিশ্বকাপ এলেই এ দেশের আর্জেন্টিনা এবং ব্রাজিল সমর্থকের ভেতর যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। আর এমন দুই দেশ যদি সেমিফাইনালে মুখোমুখি হয়, তাহলে না জানি পুরো দেশটাই ফেটে পরে! এমনিতেই বাংলাদেশে ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনার সমর্থকদের সংখ্যাটা বেশি।
কোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচ শুরু হবার আগে দুই দল নিয়ে তো উত্তেজনা ছিলই। কিন্তু উত্তেজনার আগুনে ঘি ঢেলে দিয়েছিল সেমিফাইনালে ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনার মুখোমুখি হবার সম্ভাবনা।
ব্রাজিলকে সেমিফাইনালে দেখে ফেলেছিল অনেকেই। কিন্তু এখানেই ফুটবলটা পার্থক্য গড়ে দেয়। চিন্তা করে নেওয়া আর মাঠের ফুটবলটা যে আকাশ-পাতাল তফাৎ। ব্রাজিল তাদের খেলা শুরু করেছিল ঐ ঈর্ষাজাগানিয়া আক্রমণের উপর ভিত্তি করেই।
ছোট ছোট পাস দিয়ে ভিনিসিয়ুস-নেইমার-রাফিনহার গতিকে কাজে লাগিয়ে ব্রাজিল ক্রোয়াট ডি-বক্সে ঢুকে পড়ছিল বারবার। কিন্তু ক্রোয়াট দেয়ালকে সেলেকাওরা কখনই ভাঙতে পারেনি। কৌশলগত লড়াইয়ে তিতে এক মুহূর্তের জন্যও মাঠে ফিরতে পারেননি। ৪-২-৪ ছকে খেলানো ফুটবল এই আধুনিক যুগে খাটে না। এজন্য দরকার ছিল কোনো একজনের এক সেকেন্ডের জন্য দানব হয়ে ওঠা। একক প্রচেষ্টায় দলকে টেনে নেওয়া, ম্যারাডোনা যেটা করেছিলেন।
আর ১৫ মিনিট ক্রোয়াটদের রুখতে পারলেই সেমিফাইনালের টিকিট। কিন্তু এই অন্তিম সময়ে ব্রাজিলের ভেতর চলে এলো গা ছাড়া ভাব। আর মাঝমাঠের নিয়ন্ত্রণ তো মদরিচদের আগে থেকেই ছিল। ১১৭ মিনিটে ব্রাজিলকে স্তব্ধ করে দেন পেতকোভিচ।
ডাচ গোলরক্ষক নোপার্টও মেসিকে এক হাত নিয়ে নিলেন। মেসি তো পেনাল্টি মিস করেননি, মেসির সব শট নাকি ঠেকিয়ে দিবেন তিনি। ওদিকে স্কালোনির সোজাসাপ্টা জবাব – যা হবার, সবকিছু মাঠেই হবে। তাই দুই পক্ষের স্নায়ুযুদ্ধ শুরুর পর মনে হচ্ছিল, ফন হাল আর লিওনেল স্কালোনির ভেতর একটা কৌশলগত লড়াই দেখতে পেয়েছে ফুটবলবিশ্ব।
বার্সেলোনার ম্যাচ যারা নিয়মিত দেখেছেন, তারা জানবেন মেসিকে তাঁতিয়ে দেবার ফলটা সুখকর হয় না। ম্যাচ শুরু হবার পর দেখা গেল: একজন নয়, মেসিকে মার্ক করে চোখে চোখে রাখছেন কয়েকজন। ব্রাজিল বিশ্বকাপে মেসিকে মার্ক করে রাখার পরিকল্পনা কাজে দিয়েছিল। কিন্তু এবার মেসি যা করলেন, এর জন্যই হয়তো তাকে ভিনগ্রহের ফুটবলার বলা হয়। নাথান আকের পায়ের মাঝ দিয়ে তিনি যে বলটা বের করে নাহুয়েল মোলিনাকে দিলেন, ঐ অ্যাঙ্গেল দিয়ে যে বলটা বের করা যায়, টিভি পর্দায় সেটাই ঠিকমতো বোঝা যাচ্ছিল না।
টাইব্রেকারে কলম্বিয়াকে একাই রুখে দিয়েছিলেন এমি মার্তিনেজ। তার নৈপুন্যেই আর্জেন্টিনার কোপা জয়ের আশা বেঁচে ছিল। কাতার বিশ্বকাপের শুরু থেকেই আর্জেন্টিনার অন্যতম ভরসা ছিলেন তিনি। কিন্তু সৌদি আরবের বিপক্ষের ম্যাচের পর তাকে নিয়ে সমালোচনার কম হয়নি। সকল সমালোচনার উত্তর এমি মার্তিনেজ আবার দিলেন। প্রথমে ভ্যান ডাইক এবং বার্গহসের পেনাল্টি রুখে দিয়ে মার্তিনেজ আরও একবার বুঝিয়ে দিলেন, ভরসা তার উপর করাই যায়। সেটা একবার না, বারবার।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।