ধ’র্ষণের আড়ালে তরুণীদের ভয়ংকর ফাঁদ!

8জুমবাংলা ডেস্ক : শুক্রবার রাত প্রায় ১১ টা। ক্লান্ত শরীর ও মোবাইলের বিরামহীন রিংটোনের অব্যহত চাপে বাসায় ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। তখনই হঠাৎ এক যুবতী এসে হাজির। এলোমেলো চুল আর কাঁপা কাঁপা কণ্ঠস্বর তার উপর বয়ে যাওয়া ঝড়েরই ইঙ্গিত দিচ্ছিল। তাই ব্যাগপ্যাক নীচে রেখে বসলাম চেয়ারটাতে।

এলোমেলো ভাষায় মেয়েটি যা বলল তার সারাংশ হচ্ছে, চাকুরি দেওয়ার নাম করে তাকে কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম আনে কবির হোসেন ইউপি সদস্য । সাথে ছিলেন ইউপি মেম্বারের ভাতিজা শাহাজাহান।

কুমিল্পা থেকে এনে মেয়েটিকে লালদিঘী এলাকার একটি আবাসিক হোটেলে রাখেন পঞ্চাশোর্ধ বয়সী কবির। সেই হোটেল কক্ষে মেয়েটিকে গণধ’র্ষণ করে চাচা-ভাতিজা! চাকরির আশায় চট্টগ্রাম এসে সর্বস্ব খুঁইয়ে মেয়েটি কাঁদছে এখন বিচারের আশায়। মেয়েটিকে ন্যায়বিচারের আশ্বাস দিয়ে তখনই দায়িত্ব প্রদান করলাম পরিদর্শক কামরুজ্জামানকে।

দায়িত্বপ্রাপ্তির পরপরই আমাদের তদন্ত দল প্রথমেই যায় ঘটনাস্থল সেই আবাসিক হোটেলে। সেখানকার রেজিস্ট্রার চেক করে মেয়েটির হোটেলে থাকার প্রাথমিক সত্যতা নিশ্চিত হয় টিম কোতোয়ালী। শতভাগ নিশ্চিত হওয়ার জন্য যাচাই করা হয় সিসিটিভি ফুটেজ। কিন্তু ফুটেজ দেখেই একটু ধাক্কা খাই আমরা। ফুটেজে কক্ষে মেয়ে ও দুই ব্যক্তি দেখা গেলেও অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বয়সের সাথে মেলে না।

সারাদিনের ফুটেজ চেক করলেও সেখানে বয়স্ক কারও আসা যাওয়া দেখা যায়নি। এরপর মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে জানানোর জন্য মেয়েটিকে ডাকা হলে মেয়েটি আসে। সাথে আসে এক ছেলেও।

মেয়ের সাথে কথা বলার ফাঁকে ছেলেটির সাথে গল্পের ছলে কথা বললে পূর্বের ঘটনার বর্ণনার সাথে ব্যাপক বৈসাদৃশ্য ধরা পড়ে।এতেই ঘটনা ঘিরে সন্দেহ জাগে আমাদের। এরপর দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে সবকিছু স্বীকার করে ছেলেটি। ফাঁস করে অন্যকে ফাঁসানোর ভয়াবহ এক চক্রান্ত।

কুমিল্লার বুড়িচংয়ে নিমসার বাজার নিয়ে স্থানীয় ইউপি মেম্বার কবির হোসেন ও তার ভাতিজা শাহ আলমের সাথে বিরোধ আছে স্থানীয় বাসিন্দা মামুনের। কবির ও শাহ আলমকে ‘শিক্ষা’ দিতেই চট্টগ্রামের তরুণীকে ভাড়া করে মামুন। চুক্তি হয় এক লাখ টাকার।

ধ’র্ষণের মামলা যেন বিশ্বাসযোগ্য হয় তাই ঠিক করে আবাসিক হোটেল। ঝুঁকি এড়াতে ভিন্ন দুইজনের মাধ্যমে স্বেচ্ছায় ‘ধ’র্ষিত’ও হয়! তবে তাদের সব কুটকৌশলই শেষ পর্যন্ত উম্মোচিত হয়েছে। উন্মোচিত হয়েছে পুরো ঘটনা। গ্রেফতার হয়েছে তিনজন। মামুন পলাতক থাকলেও গ্রেফতার হবে যেকোন সময়ই।

আমি মেয়েটির কথা শুনেছি। কান্না দেখেছি। দেখে আমিও কেঁদেছি। কিন্তু আবেগে ভেসে যায়নি। ভেসে যায়নি কামরুজ্জামান কিংবা টিম কোতোয়ালীর কেউই। আড়াল থেকে সত্য বের করে এনেছে। সম্ভাব্য ভয়ঙ্কর পরিণতি থেকে বাঁচিয়েছে পঞ্চাশোর্ধ এক জনপ্রতিনিধিকে। ফাঁস করেছে ভয়ঙ্কর প্রতারক চক্রের ভয়ঙ্কর প্রতারণা। মেয়েটিকে কথা দিয়েছিলাম ন্যায়বিচার করার। কথা রেখেছি!
অফুরান ভালবাসা আমার টিম কোতোয়ালীর জন্য।

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

https://www.facebook.com/Mohammadmohsinppm/posts/491991871531828

Write a Comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *