জুমবাংলা ডেস্ক : মাগুরার মহম্মদপুরে ৮ম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের ঘটনায় গ্রাম্য সালিসি বৈঠকে উল্টো ভুক্তভোগী পরিবারকেই সোয়া লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানার টাকা দিতে না পারায় ওই পরিবারটির গরু, ছাগল, সেচযন্ত্র, ভ্যান, বাইসাইকেলসহ বেশ কিছু জিনিস বাড়ি থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে যা পুলিশ উদ্ধার করেছে।
গত সোমবারের এ ঘটনায় মহম্মদপুর থানায় মামলা হলে তিনজনকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ। অন্যদের গ্রেফতারের অভিযান চলছে বলেও জানা গেছে। এদিকে, সালিসি বৈঠকের নামে ভুক্তভোগী পরিবারকে হেনস্থা ও সেই পরিবারে লুটের অভিযোগ উঠেছে মহম্মদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও নহাটা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল লিটনের দিকে। তবে তিনি তা অস্বীকার করেছেন।
জানা যায়, মাগুরা সদর উপজেলার বেরইল পলিতা ইউনিয়নের ভাঙ্গুড়া গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে কলেজ ছাত্র শাহাবুল ইসলাম (১৯) অষ্টম শ্রেণির ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করে এবং পরে অন্তঃসত্ত্বা হয়। গত ১৬ জুলাই এ ব্যাপারে থানায় মামলা করে ভুক্তভোগী পরিবার। মামলার পর পুলিশ অভিযুক্ত কলেজছাত্র শাহাবুলকে গ্রেফতারও করেছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, গত ৮ জুলাই ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে মহম্মদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও নহাটা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা সিদ্দিকি ওরফে লিটনের কাছে যান ওই ছাত্রীর চাচা। দু’দিন পর ১০ জুলাই ভুক্তভোগী পরিবারের বাড়ির পাশে একটি জায়গায় সালিস বসানো হয়। মোস্তফা সিদ্দিকির নেতৃত্বে ওই সালিসে শতাধিক মানুষ উপস্থিত ছিলেন। সালিসে বিয়ের আগে অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার অভিযোগে ভুক্তভোগী পরিবারকে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করে টাকা পরিশোধের জন্য ১০ দিনের সময় বেঁধে দেওয়া হয়।
একই সঙ্গে ছয় মাসের জন্য পরিবারটিকে সমাজচ্যুত করেন সালিসকারীরা। ওই পরিবারের সঙ্গে কোনো প্রকার যোগাযোগকারী যে কাউকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে বলেও হুমকি দেয়া হয়। সেই সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে পুলিশের কাছে না যাওয়ার জন্যও পরিবারটিকে জানিয়ে দেয় সালিস কারিরা।
ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেন, সালিসে দাবি করা কথিত জরিমানার টাকা তারা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় বাড়িতে চড়াও হন নেতারা।
পরে নহাটা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য ওবায়দুর রহমানের নেতৃত্বে কয়েকজন ভুক্তভোগীদের বাড়িতে যায়। তারা বাড়ি থেকে একটি গরু, চারটি ছাগল, একটি সাইকেল, ভ্যান, শ্যালো মেশিনসহ বেশ কিছু জিনিস ছিনিয়ে নিয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ছিনিয়ে নেওয়া অধিকাংশ মালামাল উদ্ধার করে।
এ ঘটনায় পরিবারটি একটি অবৈধ শালিস ও চাঁদাবাজির মামলা করেছে জানিয়ে মহম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তারক নাথ বিশ্বাস বলেন, ‘ধর্ষণের ঘটনা কোনোক্রমেই সালিসযোগ্য নয়। আর এনিয়ে চাঁদাবাজি ক্রিমিনাল অফেন্স।’
তিনি জানান, ওই মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তফা কামাল সিদ্দিকি, ওবায়দুর রহমানসহ ১৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এদিকে, নিজের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করে, ‘আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তফা কামাল সিদ্দিকি লিটন বলেন, ‘এ ধরনের কোনো সালিসই হয়নি। সেখানে আমি উপস্থিত ছিলাম না।’
‘পরিবারটি আমার সাথে দেখা করে সহযোগিতা চাইলে আমি তাদের সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছি। ষড়যন্ত্রমূলকভাবে কেউ তাদের দিয়ে এ ধরণের অভিযোগ করাচ্ছে,’ যোগ করেন তিনি। সূত্র : সময় নিউজ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।