জুমবাংলা ডেস্ক: ঘূর্ণিঝড় ফণী তত শক্তি সঞ্চয় করে এখন উপকূলে আছড়ে পড়ার অপেক্ষায়। ফণী এখন আর ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে (ঘণ্টায় বাতাসের গতিবেগ ৬২-৮৮ কিলোমিটার) সীমাবদ্ধ নেই। এক্সট্রেমলি সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্ট্রম বা অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। যেখানে ঘণ্টায় বাতাসের গতিবেগ থাকে ১১৮ থেকে ২১৯ কিলোমিটারের মধ্যে।
বাংলাদেশ ও ভারতের আবহাওয়া অফিসের দেওয়া তথ্যমতে, ব্যাপক শক্তি সঞ্চয় করে ফণী আজ শুক্রবার বিকালে ভারতের ওড়িশা উপকূলে আছড়ে পড়তে পারে। তখন বাতাসের গতিবেগ থাকবে ১৬০ থেকে ১৮০ কিলোমিটারের মধ্যে। এরপর এটি ওড়িশা থেকে পশ্চিমবঙ্গ হয়ে আজ সন্ধ্যা ৬টার দিকে বাংলাদেশের খুলনা ও সাতক্ষীরা অঞ্চলে আঘাত হানবে। এরপর সেটি সারা রাত বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাবে।
ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গে আছড়ে পড়ার কারণে ঘূর্ণিঝড়টির শক্তি কিছুটা ক্ষয় হবে। বাংলাদেশে যখন আঘাত করবে তখন এর বাতাসের গতিবেগ থাকবে ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটারের মধ্যে। আবহাওয়া অফিসের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যা নাগাদ ফণী খুলনা ও সাতক্ষীরা অঞ্চলে আঘাত করবে। তখন দমকা ঝোড়ো হাওয়া বইবে। ফণীর প্রভাবে ব্যাপক বৃষ্টি হবে। আজ সকাল থেকেই বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়া বইতে থাকবে অনেক এলাকায়।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, এটি গতকাল রাত ৯টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৯০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরো ঘনীভূত ও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে শুক্রবার বিকেলে ভারতের ওড়িশা উপকূল অতিক্রম করতে পারে এবং পরবর্তী সময়ে ওড়িশা-পশ্চিমবঙ্গ উপকূল হয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় খুলনা ও তত্সংলগ্ন বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে পৌঁছতে পারে। খুলনা ও তত্সংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় শুক্রবার সকাল নাগাদ ফণীর অগ্রবর্তী অংশের প্রভাব শুরু হতে পারে।
আবহাওয়া অফিসের দেওয়া তথ্য মতে, বঙ্গোপসাগরে প্রায় দুই লাখ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত ফণী গতকাল বিকালে ঘণ্টায় ১০ কিলোমিটার বেগে ভারতের ওড়িশা উপকূলের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। তখন পর্যন্ত ফণী যে জায়গায় অবস্থান করছিল এবং গতিপথ আর না বদলালে ঝড়টি ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গের পর বাংলাদেশের সাতক্ষীরা, খুলনা দিয়ে ঢুকে যশোর, বৃহত্তর ফরিদপুর, টাঙ্গাইল, ঢাকা, সিলেট হয়ে ভারতের মেঘালয় ও আসামের দিকে চলে যাবে। এতে বেশি ঝুঁকিতে থাকবে উপকূলীয় ১৯ জেলার প্রায় দুই কোটি মানুষ। উপকূলীয় জেলাগুলোতে সাত নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়টি এমন সময় বাংলাদেশে আঘাত করতে যাচ্ছে, যখন কৃষকের পাকা বোরো ধান মাঠে; মরিচ, মিষ্টিকুমড়া, রবি ভুট্টা, শাকসবজিসহ অন্যান্য ফসলও এখন মাঠে। বেশির ভাগ কৃষক তাদের ফসল ওঠাতে পারেনি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড় ফণীতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে কৃষকের।
ঘূর্ণিঝড় ফণীতে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে জলোচ্ছ্বাস নিয়ে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, ফণীর প্রভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে পাঁচ থেকে ছয় ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আইনুন নিশাত বলেন, জলোচ্ছ্বাস জোয়ারের সময় হবে নাকি ভাটার সময় হবে এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জোয়ারের সময় যদি জলোচ্ছ্বাস হয়, তাহলে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা হবে ব্যাপক। আর যদি ভাটার সময় হয় তখন ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা কম হবে।
পানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জোয়ারের সময় স্বাভাবিকের চেয়ে পাঁচ ফুটের উচ্চতায় জলোচ্ছ্ব্াস হলে খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা অঞ্চলের ঝুঁকিপূর্ণ অনেক বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বাঁধ ভেঙে ওই অঞ্চল প্লাবিত হতে পারে। গত চার দিনে বেশ কয়েকবার গতি বদল করেছে ফণী। এর সব শেষ গতিবিধি অনুযায়ী মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে সাত নম্বর, চট্টগ্রামকে ছয় নম্বর এবং কক্সবাজারকে চার নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অফিস। সমুদ্রে মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে নিরাপদ স্থানে থাকতে বলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় ফণী-পরবর্তী জরুরি উদ্ধার ও ত্রাণ সহায়তাসহ যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীকে প্রস্তুত থাকার কথা জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।