জুমবাংলা ডেস্ক: পুরো বিশ্বের নজর এখন আফগানিস্তানের দিকে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশটি ঘিরে বিশ্বজুড়েই চাপা উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। মার্কিন নেতৃত্বাধীন আগ্রাসনে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার দুই দশক পর তালেবানরা আবারো দেশটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। আগে থেকেই দেশটির ভঙ্গুর অর্থনীতি বৈদেশিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা অনিশ্চয়তায় ফেলে দিয়েছে আর্থিক সহায়তাগুলোকেও। ফলে এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে টালমাটাল আফগান অর্থনীতি।
বিবিসির একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আফগানিস্তানে যথেষ্ট খনিজ সম্পদ রয়েছে। তবে সেগুলোর সুষম ব্যবহারে প্রধান বাধা দেশটির রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা। তালেবান নিয়ন্ত্রণের কয়েক মাস আগেও বিশ্বব্যাংক দেশটির অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছিল।
২০১৯ সালে বিশ্বব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, আন্তর্জাতিক সহায়তা দেশটির মোট জাতীয় আয়ের ২২ শতাংশের সমান। এ হার একটি দেশের জন্য অনেক বেশি। তবে বিশ্বব্যাংকের ১০ বছর আগের পরিসংখ্যানে আন্তর্জাতিক সহায়তার হার ছিল ৪৯ শতাংশ, যা ক্রমেই কমছে।
বর্তমানে রাজনৈতিক অস্থিরতায় এ সাহায্য গভীর অনিশ্চয়তায় পড়েছে। এরই মধ্যে গত সপ্তাহে জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেইক মাস ঘোষণা দিয়েছিলেন, যদি তালেবান দেশটি দখল করে নেয় এবং শরিয়া আইন প্রবর্তন করে, তবে আমরা এক পয়সাও দেব না। অন্য দাতারাও দেশটির পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন।
মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনালের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৩-১২ সালের মধ্যে আফগানিস্তানের অর্থনীতি গড়ে ৯ দশমিক ৪ শতাংশ হারে বেড়েছে। আন্তর্জাতিক সাহায্যনির্ভর সেবা খাত ও কৃষি উৎপাদনের কারণে দেশটি এমন প্রবৃদ্ধি পেয়েছিল। বিশ্বব্যাংকের মতে, ২০১৫-২০ সালের মধ্যে দেশটির অর্থনৈতিক কার্যক্রম বার্ষিক প্রায় ২ দশমিক ৫ শতাংশ হারে সংকুচিত হয়েছে।
এদিকে কভিড-১৯ মহামারী, খরা, প্রবাসী আয়ে পতন, কমতে থাকা বাণিজ্য ও ক্রমবর্ধমান অস্থিতিশীলতার কারণে জুনে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল চলতি বছর আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়েছে। পূর্বের পূর্বাভাস ৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে বৈশ্বিক ঋণদাতা সংস্থাটি জানিয়েছে, ২০২১ সালে দেশটির অর্থনীতি ২ দশমিক ৭ শতাংশ বাড়বে।
অস্থিতিশীলতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দেশটিতে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে মূল্যস্ফীতিও। এ বছরের শেষ নাগাদ মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৮ শতাংশে পৌঁছার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল। আফগান সরকার পতনের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবেশী দেশগুলোর সীমান্ত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আতঙ্কিত জনগণ আরো বেশি কেনাকাটা করছে। ফলে মূল্যস্ফীতি আরো বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
সৌদি আরব, ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাবেক ভারতীয় রাষ্ট্রদূত তালমিজ আহমেদ বলেন, আফগানিস্তানের অর্থনীতি নিয়ে আমাদের হতাশ হওয়ার একাধিক কারণ রয়েছে। আগামী বছরগুলোতেও দেশটিতে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা দেখতে পাচ্ছি না। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য অবশ্যই সেখানে স্বাভাবিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি থাকতে হবে।
দেশটিতে ভঙ্গুর অর্থনীতির জন্য আরো কিছু বিষয়কে দায়ী করেছে বিশ্বব্যাংক। তালেবান নিয়ন্ত্রণ নেয়ার আগে দেশটির জিডিপির ২৯ শতাংশ নিরাপত্তার পেছনে ব্যয় হয়েছে। যেখানে নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে এ খাতে গড়ে জিডিপি ব্যয়ের হার ৩ শতাংশ। নিরাপত্তার সঙ্গে মারাত্মক দুর্নীতি আফগানিস্তানের আরেকটি স্থায়ী সমস্যা। পাশাপাশি রয়েছে ব্যবসায়ে রেকর্ড নিম্ন বিনিয়োগ।
আফগানিস্তানের বেসরকারি খাতও সংকুচিত হিসেবে বর্ণনা করেছে বিশ্বব্যাংক। স্বল্প উৎপাদনশীল কৃষি খাতেই দেশটির কর্মসংস্থান কেন্দ্রীভূত। দেশটির ৬০ শতাংশ পরিবার কৃষি থেকে কিছু আয় পায়। একটি বড় অবৈধ অর্থনীতিও রয়েছে দেশটিতে। সেখানে অবৈধ খনন, আফিম উৎপাদন ও চোরাচালানোর মতো কার্যক্রম রয়েছে। মাদকের ব্যবসা তালেবানদের আয়ের একটি অন্যতম উৎস।
দেশটিতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ প্রাকৃতিক সম্পদও রয়েছে। উন্নত নিরাপত্তা ও দুর্নীতি কমলে দেশটি আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ের জন্য আকর্ষণীয় স্থান হবে। তামা, কোবাল্ট, কয়লা ও আকরিক লৌহসহ দেশটিতে বিপুল পরিমাণ খনিজ সম্পদ রয়েছে। এছাড়া আছে তেল, গ্যাস ও মূল্যবান পাথর। বিশেষত আকর্ষণীয় সম্ভাবনাময় একটি ধাতু হলো লিথিয়াম। এ ধাতু মোবাইল ডিভাইস ও বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারি তৈরিতে ব্যবহার হয়।
২০১০ সালে একজন শীর্ষ মার্কিন জেনারেল নিউইয়র্ক টাইমসে বলেছিলেন, আফগানিস্তানের খনিজ সম্ভাবনা অত্যাশ্চর্য। এবং সেটা অবশ্যই বিপুল পরিমাণ।
যদিও এসব সম্ভাবনা আফগানদের কাছে খুব কমই ধরা দেবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কয়েক দশক ধরে চলা রাজনৈতিক অস্থিরতা তালেবানদের হাতে স্থিতিশীল হওয়ার আশা দেখছেন না তারা। এমন অনিশ্চয়তায় দেশটির ব্যাংকগুলো থেকে নিজেদের টাকা উত্তোলনের চেষ্টায় ভিড় করছে আফগানরা। যদিও তালেবান মুখপাত্ররা ব্যাংক মালিক, ব্যবসায়ী ও দোকানদারদের আশ্বাস দিচ্ছে যে, তাদের জীবন ও সম্পত্তি সুরক্ষিত থাকবে।
তালেবান ক্ষমতা দখলের আগে আফগানিস্তানের উন্নয়ন ও সংস্কারের জন্য আন্তর্জাতিক দাতারা ২০২১-২৪ সালের মধ্যে ১ হাজার ২০০ কোটি ডলার অনুদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। ২০২০ সালের জেনেভা কনফারেন্সে দেয়া এ প্রতিশ্রুতিও দেশটির স্থিতিশীলতার ওপর নির্ভর করছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।