জুমবাংলা ডেস্ক : রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) ইলেকট্রনিক এন্ড ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র ও ছাত্রদল নেতা রিফাত হোসেন রাফিকে এক বছর আগে পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে বহিষ্কার করা হয়েছিলেন। ‘জুলাই-আগস্টের প্রেক্ষিতে’ বিশেষ বিবেচনায় সম্প্রতি তার শাস্তি মওকুফ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিষয়টি জানাজানি হলে বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
আজ শুক্রবার পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. মো. তানজিউল ইসলামের স্বাক্ষরিত একটি বিজ্ঞপ্তি গণমাধ্যমের হাতে আসে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আপনি (রিফাত হোসেন) ১ম বর্ষ ১ম সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা (মানোন্নয়ন)-২০২৩ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন করায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর -এর বিদ্যমান শৃঙ্খলা বিষয়ক বিধি ও শৃঙ্খলা বোর্ডের সিদ্ধান্ত মোতাবেক আপনাকে ‘‘পরীক্ষায় অসদুপায় ও শান্তিমূলক ব্যবস্থা বিধিমালা-২০১৮’’ -এর ৪ ব্যাখ্যা (খ) উপবিধি অনুযায়ী মানোন্নয়ন পরীক্ষা ও অধ্যয়নরত সেমিস্টারের কন্টিনিউয়াস এসেসমেন্টসহ সেমিস্টার ফাইনালের সকল কোর্সের পরীক্ষা বাতিল এবং পরবর্তী ব্যাচের (Next available batch) সঙ্গে বাতিলকৃত সেমিস্টারের পরীক্ষা দিতে পারবেন মর্মে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল। পরবর্তীতে আপনি শাস্তি মওকুফের আবেদন করায় জুলাই-আগস্ট -এর ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষ বিবেচনায় আপনার শান্তি মওকুফের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। উল্লেখ্য, এ সুযোগ শুধুমাত্র একবারের জন্য বিবেচিত হবে।’
এইদিকে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০২২-২০২৩ সেশনের ২০২৩ সালের ১ম বর্ষ ১ম সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে রিফাত অসাদুপায় অবলম্বন করা অবস্থায় ধরা পড়েন। পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট প্রধান পরিদর্শক শিক্ষার্থীর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ দপ্তরে পাঠানো হয়। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ দপ্তর থেকে উল্লিখিত শিক্ষার্থীকে কারণ দর্শানো নোটিশ জারি করা হলে রিফাত জবাব দেন।
আরও জানা যায়, রিফাতের অপরাধ সংক্রান্ত বিষয়াদির ওপর কার্যকরী সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তার জবাবপত্রসহ যাবতীয় দলিলাদি বিভাগের নিকট পাঠানো হয়। এছাড়া তার জব্দ হওয়া মোবাইল ফোনটি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ দপ্তরে সংরক্ষিত রাখা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্রে জানা গেছে, রিফাত এক সময় বেরোবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি পোমেল বড়ুয়ার রাজনীতি করতেন। কিন্তু ৫ আগষ্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগ করলে ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে সংযুক্ত হতে দেখা গেছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় বৈষমবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক শামসুর রহমান সুমন বলেন, এক বছর আগে পরীক্ষায় মোবাইল নিয়ে অসদুপায় অবলম্বনের কারণে বহিষ্কার হয়েছেন, এখন জুলাই অভ্যুত্থানের দোহাই এবং দলীয় প্রভাব দেখিয়ে মওকুফ পাওয়া ও পুনরায় পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়টি জুলাই আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে প্রতারণার সামিল। প্রশাসনের এমন হটকারি সিদ্ধান্তের নিন্দা জানাই এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার নেওয়ার জোর দাবি জানাই।
এ বিষয়ে ছাত্রদল নেতা রিফাত হোসেন রাফি বলেন, পরীক্ষা চলাকালীন সময় আমার কাছে মোবাইল পাওয়ায় তৎকালীন সময় আওয়ামী লীগের দোসররা আমাকে বহিষ্কার করেছে। আমি ছাত্রদল করায় আমার উপরে আরও বেশি চড়াও হয়েছে। সেজন্য আমি শৃঙ্খলা বোর্ডে আবেদন করি। আমার সঙ্গে অন্যায় হয়েছে, সেটি আমি উল্লেখ করি। জুলাই আগস্ট বিবেচনায় শাস্তি মওকুফের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, ‘আমি আহত শিক্ষার্থী হিসেবে আবেদন করেছি। সে হিসেবে তারা বিবেচনা করেছেন।’
এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর ড. মো. ফেরদৌস রহমান বলেন, বিষয়টি এখনো ফাইনাল নয়। শৃঙ্খলা বোর্ড শাস্তি মওকুফের সিদ্ধান্ত নিলেও এইটি একাডেমিক কাউন্সিল এবং সিন্ডিকেট অনুমোদন পেলে তারপর সে পরীক্ষায় বসতে পারবে। এক বছর আগে বহিষ্কার হওয়া ছাত্র কিভাবে জুলাই-আগস্ট বিবেচনায় শৃঙ্খলা বোর্ড শাস্তি মওকুফের সিদ্ধান্ত নেয় এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, সে জুলাই বিপ্লবের আহত শিক্ষার্থী। সে হিসেবে এটি বিবেচনা করা হয়েছে। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. মো. তানজিউল ইসলাম বলেন, বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত নয়। এখনো একাডেমি কাউন্সিল এবং সিন্ডিকেটের অনুমোদন বাকি আছে। আর চিঠিতে ভাষাগত কিছু ভুল রয়েছে, রবিবার সেটি ঠিক করে পুনরায় দেওয়া হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।