নখের নিচে জমে থাকা ময়লা মূলত মৃত ত্বকের কোষ, তেল ও বাইরের ধুলাবালির মিশ্রণ। এর মধ্যে থাকে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস এবং কখনো কখনো ফাঙ্গাস ও পরজীবী ডিম। নখের নিচে থাকা সাধারণ ব্যাকটেরিয়া হলো Escherichia coli (ই.কোলাই) এবং Staphylococcus aureus (স্টেফাইলোকক্কাস অরেয়াস)। ২০১৯ সালে জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল মাইক্রোবায়োলজিতে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্র বলছে, ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার অভাবে এই ব্যাকটেরিয়াগুলো সহজেই নখের নিচে জমতে পারে। আর এ ধরনের ব্যাকটেরিয়া খাদ্যনালীতে প্রবেশ করলে ডায়রিয়া, বমিসহ খাদ্যে বিষক্রিয়া বা ফুড পয়জনিংয়ের মতো অসুখ হতে পারে।
এ তো গেল ব্যাকটেরিয়ার কথা। ব্যাকটেরিয়া ছাড়াও পরজীবী ঠাঁই নিতে পারে নখের নিচে থাকা সুরক্ষিত অঞ্চলে। এর মধ্যে অন্যতম হলো ‘পিনওয়ার্ম’। এর ডিম খুব ক্ষুদ্র, সহজেই নখের নিচে জমা হয়। পিনওয়ার্ম আমাদের অন্ত্রে সংক্রমণ ঘটিয়ে পেটে ব্যথা, অস্বস্তি এবং অনিদ্রার মতো অসুখ তৈরি করতে পারে।
আমাদের নখের গঠন এমন যে এর নিচের অংশ সরাসরি ধোয়া বা পরিষ্কার করা কঠিন। মানুষের হাতের সংস্পর্শে আসা যেকোনো বস্তু, যেমন দরজার হাতল, কম্পিউটারের কিবোর্ড, মোবাইল ফোনের পর্দা—এসবে প্রচুর জীবাণু বাসা বেঁধে থাকে। আমরা যখন এগুলো ধরি, তখন জীবাণুগুলো চলে আসে আমাদের হাতে।
বিশেষ করে নখের নিচের সুরক্ষিত স্থানে এরা দীর্ঘদিন টিকে থাকতে পারে। যাঁরা নখ বড় রাখেন, তাঁদের নখের নিচে জীবাণু জমার প্রবণতা বেশি। কারণ, বড় নখ পরিষ্কার করা তুলনামূলক কঠিন। তা ছাড়া নখ কামড়ানোর অভ্যাস যাঁদের আছে, তাঁদের এসব জীবাণুতে সংক্রমণের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। কারণ এতে সরাসরি হাত থেকে মুখের মাধ্যমে পেটে চলে যায় জীবাণু।
শিশুদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। শিশুরা প্রায়ই মাটিতে বা মেঝেতে খেলাধুলা করে। এরপর হাত না ধুয়েই অনেক সময় মুখে দেয়। ফলে নখের নিচে জমে থাকা জীবাণু খুব সহজেই শরীরে প্রবেশ করে। দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দুর্বল থাকায় দ্রুতই রোগাক্রান্ত হয় শিশুরা। প্রশ্ন হলো, এ সমস্যা থেকে বাঁচার উপায় কী?
আসলে হাতের নখে লুকিয়ে থাকা রোগজীবাণু থেকে রক্ষা পেতে বেশি কিছু করার প্রয়োজন নেই। বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্যাক্তিগত পরিচ্ছন্নতায় গুরুত্ব দিলেই এসব থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব। বিশেষ করে নখ ছোট রাখার অভ্যাস করা, নখ পরিষ্কার রাখা, খাবার খাওয়ার আগে ভালো করে হাত ধোয়া, ময়লা বা রাসায়নিক পদার্থ নিয়ে কাজ করার আগে গ্লাভস ব্যবহার করার অভ্যাস করলে নখের নিচে জমে থাকা জীবাণুর আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
এ ছাড়া নখ কামড়ানোর অভ্যেস থাকলে তা বাদ দিতে বলেন বিশেষজ্ঞরা। শিশুরা যেহেতু বেশি ঝুঁকিতে থাকে, তাদের বিষয়ে আরও সতর্ক থাকতে হবে বড়দের। নিয়মিত হাত পরিষ্কার ও নখ কাটার অভ্যেস গড়ে তোলার চেষ্টা করতে হবে। এরপরও যদি কোনো সংক্রামণ দেখা যায়, তাহলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।