এখনকার যুগে ডিজিটাল আর্থিক সেবার ব্যবহারে বাড়ছে, তবে সেই সঙ্গে বাড়ছে দুর্নীতি ও অনিয়মের ভয়াবহতা। মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ‘নগদ’ নিয়ে এই আশঙ্কার মধ্যে প্রমাণিত হচ্ছে। হাইকোর্টের নির্দেশে ‘নগদ’ এর দুর্নীতি তদন্তে ফরেনসিক অডিটে আর কোনো বাধা নেই। এতে দেশবাসীর মনে একদিকে আশার আলো জ্বলছে, অন্যদিকে উদ্বেগও তৈরি করছে।
Table of Contents
নগদে ফরেনসিক নিরীক্ষা ও তার অভিপ্রায়
নগদের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। গত ২১ মে হাইকোর্টের বিচারপতি ফাতেমা নজিব ও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজী’র সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ ফরেনসিক নিরীক্ষার নির্দেশনা সংক্রান্ত রিট আবেদন খারিজ করে দেয়। এতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা জানান, ফরেনসিক নিরীক্ষার মাধ্যমে নগদের আর্থিক ব্যবহারের গোপনীয়তা উন্মোচন করা সম্ভব হবে। ফরেনসিক নিরীক্ষা মানে হলো প্রতিষ্ঠানের আর্থিক লেনদেনের বিস্তারিত খতিয়ে দেখা যা জালিয়াতি ও অন্য যে কোনো ধরণের ভুল বোঝাবুঝি বের করতে সাহায্য করবে।
নগদের মালিকানা এবং এর সঙ্গে আওয়ামী লীগের নির্মল সম্পর্ক এই দুর্নীতির বিষয়টি আরও জটিল করে তুলেছে। সার্বিকভাবে ফরেনসিক স্বচ্ছতা ধরে রাখা ভারতের মতো ব্যাংকিং সংস্কৃতির জন্য অপরিহার্য।
অনিয়মের বিস্তারিত এবং তদন্তের উদ্যোগ
সরকারের পতনের পর ২১ আগস্ট ‘নগদ’ প্রতিষ্ঠানের নতুন প্রশাসক নিয়োগের এক সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক, যাতে মূল সহায়তা পায় ডাক বিভাগ। এই ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে নগদের কার্যক্রমের উপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সম্প্রতি, প্রশাসক মুহম্মদ বদিউজ্জামান দিদার পোস্ট করেন একটি চিঠিতে যেখানে নগদের বিভিন্ন কাজের ফরেনসিক নিরীক্ষার ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা আছে।
ফরেনসিক নিরীক্ষা ছাড়া এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রমে স্বচ্ছতা আসা প্রায় অসম্ভব। এর ফলে দুটি প্রধান প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কথোপকথন হয়েছে এবং উভয়পক্ষ একমত হয়ে এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে আলোচনা চালাচ্ছে। প্রশাসক বলেন, “নগদের কার্যক্রমের ওপর ফরেনসিক নিরীক্ষা পরিচালনার ব্যাপারে আলোচনা চলছে। নিরীক্ষা হলেই প্রকৃত চিত্র বেরিয়ে আসবে।”
এদিকে, প্রশাসককে হুমকির অভিযোগের কারণে রাজধানীর বনানী থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে, যা নগদের অপারেশনে বিঘ্ন ঘটানোর একটি ভয়াবহ সম্ভাবনার দিকে ইঙ্গিত করে।
ফরেনসিক নিরীক্ষার গুরুত্ব এবং এর প্রভাব
ফরেনসিক নিরীক্ষা শুধু নগদের নয়, বরং বাংলাদেশের ব্যাংকিং সাফল্যের অন্যতম একটি মাধ্যম, যা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে স্বচ্ছতা এবং সঠিকতা নিশ্চিত করে। সাধারণত, নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকে নিরীক্ষার মাধ্যমে আলোকপাত করতে বলা হয়। এতে টাকার অপব্যবহার এবং দুর্নীতির সমাধান করা সম্ভব হয়।
এছাড়া, পূর্ববর্তী সরকারের সময় থেকে ‘নগদ’ সম্পর্কিত যে কোনও ন্যায্য তদন্ত কোনো মনোযোগ পায়নি। এটি এ দেশের মানুষের মধ্যে আর্থিক ব্যবস্থা ও নীতিগত সরকারের উপর আস্থা হারানোর কারণ।
গত বছরগুলোর ক্ষেত্রে ‘নগদ’ প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমে খোঁজ নিয়ে দেখা যায় যে, সেখানে ধীরে ধীরে অনিয়ম এবং অস্বচ্ছতার ধারা প্রবাহিত হচ্ছে। আবেদনকারীরা দাবি করেছেন যে, সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা থাকায় এই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
আগামী দিনগুলি
ফরেনসিক নিরীক্ষা শুরু হলে, এটি নিশ্চিত করবে যে, নগদের সকল কাজ সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে কিনা তা বোঝা যাবে। এটি দেশের অন্যান্য ডিজিটাল আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি উদাহরণ হবে। অর্থনীতির প্রধান চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করার জন্য সরকারের ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার উচিত স্বচ্ছতার খাতিরে জরুরি পরিকল্পনা নির্ধারণ করা।
দেশের মানুষের মনে দাবি তৈরি হয়েছে যে, সঠিক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে দেশের আর্থিক ব্যবস্থা আরো কার্যকর হবে। মানুষ সরকারের প্রতি আশাবাদী, যে উক্ত দুর্নীতির মামলায় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে তারা দেশের উন্নয়নে প্রভাব ফেলা সম্ভব হবে।
নাগরিকদের আশার আলো
নগদের কার্যক্রমের স্বচ্ছতা বিধান করা শুধুমাত্র প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্ব নয়, বরং সরকারেরও কর্তব্য। সুতরাং, ফরেনসিক অডিটের মাধ্যমে মানুষের হাতে স্বচ্ছতার দায়িত্ব গ্রহণ ত্বরান্বিত হতে পারে। তবে, এই প্রক্রিয়ায় সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং সঠিক তথ্য প্রকাশ করা জরুরি।
FAQs
১. ফরেনসিক নিরীক্ষা কি?
ফরেনসিক নিরীক্ষা হলো একটি কার্যক্রম যা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক লেনদেনের বিশ্লেষণে সহায়ক এবং এতে জালিয়াতি, অনিয়ম বের করতে সাহায্য করে।
২. নগদের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো কি কি?
নগদের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো অনেক, যার মধ্যে আর্থিক অনিয়ম, স্বচ্ছতার অভাব এবং দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।
৩. ফরেনসিক নিরীক্ষার ফলাফল কিভাবে প্রকাশ হবে?
ফরেনসিক নিরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হলে সেটা সরাসরি আদালতের মাধ্যমে প্রচারিত হবে এবং সরকারের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
৪. বাংলাদেশে ফরেনসিক নিরীক্ষার গুরুত্ব কি?
ফরেনসিক নিরীক্ষার মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও নীতিমালাকে রক্ষা করা হয়, যা বিপুল পরিমাণ আর্থিক ব্যবস্থার নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
৫. সরকারের কি ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত?
সরকারের উচিত স্থির পদক্ষেপ গ্রহণ করে আর্থিক অনিয়মের কার্যকর তদন্ত এবং স্বচ্ছতার জন্য নীতিমালা প্রণয়ন করা।
৬. নগদের প্রশাসক পদে বর্তমানে কে আছেন?
বর্তমানে মুহম্মদ বদিউজ্জামান দিদার নগদের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।