নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর: নদী যদি হয় এই বাংলা বদ্বীপের প্রাণ, তাহলে কোথাও না কোথাও তার প্রাণের মানুষ আছে নিশ্চই । যিনি নদী ও তার দুই পাশের জনপদকে ভালোবেসেছেন স্বজনের ভালোবাসায়। নদীর সুখ দুঃখ আনন্দ বেদনার নানা গাঁথা যিনি তুলে ধরেছেন জনসমক্ষে। দূষণ দখলের এই দুঃসময়েও বলেছেন নদীর পূনরুজ্জীবনের কথা। এমনই এক নদীপ্রেমী মানুষ মুহাম্মদ মনির হোসেন। নদীর পরিবেশ প্রতিবেশ ও তার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নিরলস কাজ করে যিনি পরিচিতদের কাছ থেকে খেতাব পেয়েছেন নদীযোদ্ধা হিসেবেও।
তিনি যে শুধু ব্যক্তিগতভাবে নদীর হিতাকাঙ্খি হয়ে কাজ করে যাচ্ছেন তা নয়।নদী বাঁচানোর আন্দোলনকে তিনি দিয়েছেন সাংগঠনিক রূপও। নদী বিষয়ে আগ্রহী, উদ্যোগী তরুণদের নিয়ে তিনি গঠন করেছেন বাংলাদেশে নদী পরিব্রাজক দল। নদী, প্রকৃতি, পরিবেশ ও পর্যটন নিয়ে কাজ করা সংগঠনটির তিনি প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও গবেষক দলের অন্যতম সদস্য।
১৯৮৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর জন্ম নেন মুহাম্মদ মনির হোসেন। পৈতৃক নিবাস কুমিল্লা জেলার দাইদকান্দি উপজেলার মজিদপুর ইউনিয়নের শাহপুর গ্রাম হলেও শৈশব কাটে গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলার সনমানিয়া ইউনিয়নের দক্ষিনগাঁও গ্রামে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের লেখাপড়া দক্ষিণগাঁও গ্রামে থেকেই সম্পন্ন করেন। উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেন গাজীপুরের কাজী আজিমউদ্দি কলেজ থেকে। স্নাতক (সম্মান) সম্পন্ন করেন সরকারি তিতুমীর কলেজ থেকে। স্নাতকোত্তর করেন মালয়শিয়ার বিখ্যাত সানওয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। বর্তমানে তিনি গাজীপুর শহরেই বসবাস করছেন। পিতা: মুহাম্মদ মোস্তাক মিয়া ও মাতা: জোসনা বেগম। ছোটবেলা থেকেই নদীর প্রতি অনুভব করতেন অমোঘ টান। তবে ২০০০ সালে পরিবেশ অধিদপ্তর আয়োজিত এক রচনা প্রতেোযাগীতা নদী বিষয়ক রচনা লিখতে গিয়েই জন্ম নেয় এক উপলগ্ধির। যা তাকে নীরবে টেনে নিয়ে গেছে নদী বাঁচানোর আন্দোলনে।
এরপর পদ্মা-মেঘনা-যমুনার কত ঢেউ চলে গেছে সাগরে, কত জোয়ার ভাটার জলে প্লাবিত হয়েছে নদীমাতৃক বাংলা। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে তার নদীপ্রেমও। এর মধ্যেই তরুণদের নিয়ে তিনি শুরু করেন ‘ইয়ূথ ফর রিভার‘ নামে এক বিশেষ ক্যাম্পেইনের। বর্তমানে এ ক্যাম্পেইনের সঙ্গে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার তরুণ যুক্ত থেকে কাজ করে যাচ্ছে নদী নিয়ে।
তিনি ব্যক্তিগতভাবে দেশে ও বিদেশে প্রায় দুই শতাধিক ছোট বড় নদী পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ করেছেন। এর মধ্যে প্রায় ১০০টি নদীর নান্দনিকতা ও সংকট নিয়ে বিভিন্ন দৈনিকে আলাদাভাবে লিখেছেন ফিচার। তৈরি করেছেন অন্তত ১২টি ডকুমেন্টরি। কাজের স্বীকৃতিও এসেছে সে পথ ধরেই। নিজের নির্মিত শঙ্খ নদ : দ্য আমাজন অব বেঙ্গল’ প্রামাণ্যচিত্রের জন্য ২০১৯ সালে ক্রিয়েটিভ ওয়ার্ক ফর ভিজ্যুয়াল মিডিয়া ক্যাটাগরিতে জিতেছেন ইউনিসেফ বাংলাদেশের মিনা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড। এছাড়া সাংগঠনিক বিশেষ ভূমিকার জন্য ২০১৬ সালে পেয়েছেন কালের কণ্ঠ- শুভসংঘ শ্রেষ্ঠ সংগঠক সম্মাননা।
দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত নির্বাচিত ভ্রমণ কাহিনী নিয়ে ২০২১ সনে একটি ভ্রমণ গ্রন্থ- Ôনদী ও জলে ভ্রম’ প্রকাশিত হয়। প্রকাশক: উৎস প্রকাশন।
তার উদ্যোগেই দেশে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হয়েছে জাতীয় নদী সম্মেলন, পার্বত্য নদী সম্মেলন। এছাড়াও নদী-বিষয়ক সেমিনার, নদী-বিষয়ক পাঠচক্র- এসো নদীর গল্প শুনি, নদী পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম, প্রকৃতি পাঠ, অনলাইনভিত্তিক ইনফো-শো ‘রিভারটক’ ও নদী আড্ডা সহ নানা কার্যক্রমের নেতৃত্ব দেন। দায়িত্ব পালন করেছেন বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান হিসেবে। ২০১৮ সালে সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত সিঙ্গাপুর ইন্টারন্যাশনাল ওয়াটার উইকের ইয়াং লিডার সামিটে বাংলাদেশের হয়েও প্রতিনিধিত্ব করেছেন তিনি।
জীবনানন্দ দাশ যেমন বলেছিলেন-নদীর শব্দ শুনি আমি। নদী তুমি কোন কথা কও! জলপ্রেমি মুহাম্মদ মনির হোসেনও ঘুমে জাগরণে শুনতে পান নদীর কুলকুল শব্দ। তাই তো বিরুদ্ধ স্রোতে দাঁড়িয়েও তিনি স্বপ্ন দেখেন এমন এক নদীমাতৃক বাংলার, যেখানে জল ও পলির আশীর্বাদে আবার জনপদ হয়ে উঠবে সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।