নিউট্রিনো নামে এক ধরনের কণা আছে। ছলনাময়ী এই কণারা সহজে ধরা দিতে চায় না। অথচ প্রতিমুহূর্তে শত-সহস্র নিউট্রিনো পৃথিবীর মধ্য দিয়ে, এমনকি মানুষের দেহের মধ্যে দিয়েও ছুটে যাচ্ছে অবিরাম। এদের ধরার জন্য বিজ্ঞানীরা বরফের বুক খুঁড়ে ফাঁদ পাতলেন। বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে বসানো হলো টেলিস্কোপ, বানানো হলো অবজারভেটরি বা পর্যবেক্ষণাগার। নাম দেওয়া হলো আইসকিউব অবজারভেটরি।
বরফের বুকের ভেতরে বসে সেই টেলিস্কোপ পৃথিবীর উল্টো দিকের আকাশে তাকিয়ে রইল। নিউট্রিনোর মতো আর কোনো কণা পৃথিবীকে এমন করে পেরিয়ে যেতে পারে না। মিথস্ক্রিয়া করে সাধারণ বস্তুর সঙ্গে। কাজেই কোনো কণা যদি পৃথিবীর উল্টো দিকের আকাশ থেকে ছুটে এসে আইসকিউব অবজারভেটরির টেলিস্কোপে ধরা পড়ে, তাহলে বোঝা যাবে, এই হলো সেই নিউট্রিনো।
২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে আইসকিউব অবজারভেটরিতে ব্ল্যাজার থেকে ছুটে আসা নিউট্রিনো শনাক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ ব্ল্যাজাররা যখন প্রবল শক্তিতে সোজা আমাদের দিকে তাক করে কামান দাগে, সেই শক্তি থেকে জন্ম নেয় বিপুল শক্তিধর নিউট্রিনো। আলোর বেগে ছুট দেয় নিউট্রিনোর দল।
যেহেতু এরা সহসা কারও সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করে না, ফলে আমাদের দিকে ছুটে আসার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। আর এদের যখন ধরা যায়, জানা যায় দারুণ সব তথ্য। কারণ এই নিউট্রিনোরা কারও সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া না করলেও যে পথ পাড়ি দিয়ে এসেছে, সে পথের সব তথ্য সে নিয়ে আসে সঙ্গে করে। আর যে নিউট্রিনোরা ব্ল্যাজার থেকে আসছে, তারা নিয়ে আসে সেই সক্রিয় গ্যালাক্সি কেন্দ্রের তথ্য। বিজ্ঞানীরা এই তথ্য বিশ্লেষণ করে সংশ্লিষ্ট কৃষ্ণগহ্বরের ব্যাপারে চমৎকার সব তথ্য জানতে পারেন।
সম্প্রতি নভোটেলিস্কোপ ইভেন্ট হরাইজন কৃষ্ণগহ্বরের ব্যাপারে বেশ কিছু তথ্য দিয়েছে। হয়তো বছর শেষ হওয়ার আগে পাওয়া যেতে পারে প্রথম কৃষ্ণগহ্বরের ছবি। তবে এর আগে আমাদের কৃষ্ণগহ্বর জ্ঞানের খুব গুরুত্বপূর্ণ এক উৎস ছিল ব্ল্যাজার থেকে ছুটে আসা এই নিউট্রিনোরা। মহাবিশ্বের সবচেয়ে অন্ধকার জিনিসটির চারপাশ ঘিরে তৈরি হয় মহাবিশ্বের সবচেয়ে উজ্জ্বল জিনিসগুলোর একটি, বাতির নিচে অন্ধকারের এর চেয়ে চমৎকার উদাহরণ আর কয়টি আছে?
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।