জুমবাংলা ডেস্ক : একজন নারী চিকিৎসকের নরসুন্দর ছেলের সঙ্গে পালিয়ে বিয়ে করা নিয়ে সিআইডির রংপুরের পুলিশ সুপার মিলু মিয়া বিশ্বাসের বক্তব্য ‘অফিসিয়াল বক্তব্য’ ছিলো না বলে জানিয়েছে সংস্থাটির অন্য কর্মকর্তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা বলেন, সেদিন ব্রিফিংয়ের পর উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে চা পানের সময় একেবারে ব্যক্তিগত পর্যায়ের আলাপচারিতায় তিনি কথাগুলো বলেছিলেন। কিন্তু একটি বেসরকারি টেলিভিশনের ক্যামেরাপার্সন ক্যামেরায় সেই কথোপকথন রেকর্ড করায় বিষয়টি নিয়ে চ্যালেঞ্জেও যেতে পারছেন না জ্যেষ্ঠ এ সিআইডি কর্মকর্তা।
তবে এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের প্রেক্ষিতে একটি লিখিত ব্যাখ্যায় পুলিশ সুপার মিলু বলেছেন, কোন পেশা বা পেশার মানুষকে ছোট করার উদ্দেশ্যে কথাগুলো বলিনি। শুধু সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি ও দেশের সংস্কৃতিতে এ ধরণের অসামঞ্জস্য কেউ মেনে নেয় না, সে কথাই বলেছি।
তারপরও কেউ কষ্ট পেয়ে থাকলে তিনি ক্ষমা প্রার্থনা করেন। কিন্তু নাপিতের সঙ্গে চিকিৎসকের বিয়ে তিনি মেনে নিতে পারেননি-এ কথা তিনি বলেননি বলে জোর দাবি জানিয়েছেন।
গত ২৩ ডিসেম্বর মিলু মিয়া বিশ্বাস রংপুর সিআইডি কার্যালয়ে একটি সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে এক নারী চিকিৎসক ও তার নাপিত স্বামী ও দুই সন্তানকে উপস্থিত করা হয়। তবে প্রাপ্তবয়স্ক একজন নারী কাকে বিয়ে করেছেন- সিআইডির সংবাদ সম্মেলনে সে বিষয় তোলা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনার জন্ম দেয়।
ওই সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, ওই নারী চিকিৎসকের বাবা আব্দুল গফুর তার মেয়ে আয়শা সিদ্দিকা মিতু অপহৃত হয়েছে বলে ২১ মাস আগে রংপুর কোতয়ালী থানায় একটি মামলা করেছিলেন। তদন্ত করে কোতয়ালী থানা মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়। এতে ওই চিকিৎসক মিতুর বাবা আব্দুল গফুর চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি করলে আদালত মামলাটি সিআইডিতে দেন।
পরে রংপুরের সিআইডির একটি টিম গত ২২ ডিসেম্বর ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে মামলার একমাত্র আসামি রফিকুল ইসলাম বাপ্পীকে গ্রেফতার করে। এ সময় মিতু ও তার বর্তমান স্বামীর একটি ও আগের স্বামীর আরেক শিশুকে সন্তানকে উদ্ধার করা হয়।
মিলু বিশ্বাসের দাবি, যথাযথ মানবাধিকার মেনে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
মিডিয়ায় নারী ও শিশুকে এভাবে উপস্থাপনের মাধ্যমে আদালতে তোলার আগেই মিডিয়া ট্রায়ালের অভিযোগ তোলা হয় পুলিশের এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। সে প্রসঙ্গে সিআইডির এ এসপি বলেন, ‘আমি নারী ও শিশু অধিকার বিষয়ে সচেতন হয়ে নারীকে সম্মানিত করে সোফায় বসতে দিয়েছি। ভদ্র ও শালীন আচরণ করেছি, শিশুদের খাবার খাইয়ে শিশু অধিকার ও আচরণ সম্পর্কে সতর্কভাবে দায়িত্ব পালন করেছি।
মিলু মিয়া বিশ্বাস তার ব্যাখ্যায় আরো বলেন, গ্রেপ্তারকৃত বাপ্পীর বিরুদ্ধে নিজের প্রথম স্ত্রীকে হত্যায় প্ররোচনা ও মাদক মামলাসহ একাধিক মামলা আছে।
চিকিৎসক নারীর বাবা তার মেয়ে ও নাতিকে উদ্ধার করা হচ্ছে না বলে বিভিন্ন মহলে সিআইডির বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। তাছাড়াও চিকিৎসকের আগের স্বামী আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১০০ ধারা অনুযায়ী ছেলেকে পাওয়ার জন্য তল্লাশি পরোয়ানার আবেদন করেন। কিন্তু আগের তদন্তকারী কর্মকর্তা তাদের উদ্ধার করতে পারেননি বলে জানান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদ সম্মেলন প্রসঙ্গে সিআইডির অন্যান্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ডাক্তার মিতুর বাবা এই মামলাটি নিয়ে সকল মহলে সিআইডি-পুলিশের বিরুদ্ধে অনেক অসত্য অভিযোগ ও বিষদগার করেছেন। বিভিন্নভাবে তিনি চাপ ও প্রভাব বিস্তার করেছেন। ফলে মামলাটি পুলিশের কাছে অনেক দিন ধরে চরম অসস্তির কারণ ছিলো। আর এ কারণে অতি উৎসাহী হয়ে সংবাদ সম্মেলনটি আয়োজন করা হয়েছিলো কী না- সেই প্রশ্নের অবশ্য উত্তর কারও কাছে পাওয়া যায়নি।
স্বামী-সংসার ফেলে এর আগেও বাপ্পীর সঙ্গে আরও একবার পালানো মেয়েকে ফিরে পেতে ‘অপহরণ মামলা’ করা আব্দুল গফর সম্পর্কেও সমালোচনা করছেন অনেকে। নিজের সামাজিক অবস্থান ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে তিনি অনৈতিকভাবে ব্যবহার করেছেন বলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা হচ্ছে মিতুর বাবা আব্দুল গফুরকে নিয়ে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।