জুমবাংলা ডেস্ক: নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে সেলিনা হায়াত আইভীর জয়ের পেছনে বড় দুই কারণ রয়েছে বলে মনে করছেন তাঁর নির্বাচন পরিচালনায় জড়িত নেতারা। তাঁদের মতে, ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে তিনি সাধারণ ভোটারদের আকৃষ্ট করতে পেরেছেন। আবার দলের বিভেদ নিরসনসহ নির্বাচনের আনুষঙ্গিক বিষয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের কঠোর নজরদারি ছিল। দৈনিক কালের কণ্ঠের প্রতিনিধি তৈমুর ফারুক তুষার-এর প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেন, টানা তৃতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় রয়েছে। আইভীও গত ১০ বছর নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। দল সরকারে থাকায় তিনি নারায়ণগঞ্জে বড় ধরনের উন্নয়নকাজ করতে পেরেছেন। সাধারণ ভোটাররা তাঁর উন্নয়নের প্রতিদান দিয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই বলেন, আইভী মেয়র থাকাকালে বেশ কয়েকটি বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন, যা নারায়ণগঞ্জের চেহারা বদলে দিয়েছে। সাধারণ মানুষ এগুলো দেখে আইভীকে ভোট দিয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ভবানী শঙ্কর রায় নির্বাচনে আইভীর প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তিনি বলেন, আইভী আসলে গণমানুষের নেতা। জয়ের পেছনে দলের চেয়ে তাঁর নিজের কৃতিত্বই বেশি।
তবে আইভীর ব্যক্তিগত ভোটব্যাংক নয়, নৌকা প্রতীকের কারণে আইভী জয় পেয়েছেন বলে মনে করে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের একাংশ। দলের মহানগর সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার নারায়ণগঞ্জে ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। এ উন্নয়নের ধারা জনগণ অব্যাহত রাখতে চেয়েছে।’
স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেন, নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশ আইভীবিরোধী হিসেবে পরিচিত। দলের এই অংশ এবারের নির্বাচনে আইভীর বিরুদ্ধে ভূমিকা রাখতে পারেনি। কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে বিষয়টি শক্তভাবে দেখা হয়েছে। দলীয় নেতাকর্মীদের কেউ নৌকার বিরুদ্ধে ভূমিকা রাখার চেষ্টা করলে তাঁকে কেন্দ্রীয় নেতা ও প্রশাসনের মাধ্যমে চাপ দেওয়া হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ভবানী শঙ্কর রায় আরো বলেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা মাঠে ছিলেন। তাঁরা কোনো কোন্দল মাথাচাড়া দিতে দেননি।
নাসিক নির্বাচন উপলক্ষে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানককে সমন্বয়ক করে একটি নির্বাচন পরিচালনা কমিটি করা হয়। এ কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিলেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম। এ ছাড়া দলের ১৬ জন কেন্দ্রীয় নেতা ২৭টি ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালন করেন। ফলে আইভীবিরোধী নেতারা ছিলেন কঠোর নজরদারিতে। তাঁরা নৌকার বিরুদ্ধে কোনো কাজ করার চেষ্টা করলে কেন্দ্রীয় নেতারা তা দ্রুত জেনে যেতেন।
প্রশাসনের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। নির্বাচনী প্রচারের শেষ দিনে জাহাঙ্গীর কবির নানকসহ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
জানতে চাইলে আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, নারায়ণগঞ্জের মানুষ ভয়ভীতি, অপরাজনীতি কোনো কিছুর পরোয়া না করে আইভীকে ভোট দিয়েছে। আইভী সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে এবং সুশাসনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। সে জন্য তিনি হয়ে উঠেছেন মাটি ও মানুষের নেতা।
এক দশকের বেশি সময় ধরে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড কমিটি নেই। প্রতিটি ওয়ার্ডে একজন কেন্দ্রীয় নেতা নিয়মিত উপস্থিত থেকে নির্বাচনী কর্মকাণ্ড দেখভাল করেন। বিবদমান নেতাকর্মীদের নিয়ে বসে অভ্যন্তরীণ সমস্যা নিরসনের চেষ্টা করেন। ভোটের দিনও এসব কেন্দ্রীয় নেতা দায়িত্বপ্রাপ্ত ওয়ার্ডে উপস্থিত থেকে নৌকার পক্ষে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ রাখেন।
নৌকার পক্ষে মাঠে না নামায় নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটি। গত রবিবার ভোটের দিনে স্বেচ্ছাসেবক লীগের মহানগর ও জেলা কমিটি এবং অধীন থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন কমিটিগুলো বিলুপ্ত ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় কমিটি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।