চাঁদের উদ্দেশে সফলভাবে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে ঘোস্ট রাইডার ইন দ্য স্কাই। ১৬ জানুয়ারি, বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টা ৩ মিনিটে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টারের লঞ্চ কমপ্লেক্স ৩৯এ থেকে উৎক্ষেপণ করা হয় এটি। যুক্তরাষ্ট্রের মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা এবং ইলন মাস্কের স্পেসএক্স যৌথভাবে এই মিশন পরিচালনা করছে।
এর আগে, ১৫ জানুয়ারি এটি উৎক্ষেপণের কথা থাকলেও কর্তৃপক্ষ তা একদিন পরে উৎক্ষেপণের সিদ্ধান্ত নেয়। তবে বৃহস্পতিবার সফলভাবে এটি পৃথিবীর কক্ষপথে পৌঁছে গেছে। এই মিশনে নাসার নেতৃত্বাধীন ১০টি বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা ও পরীক্ষামূলক নতুন প্রযুক্তি চন্দ্রপৃষ্ঠে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এই মিশনে রয়েছে দুটি ল্যান্ডার। মূল ল্যান্ডার হিসেবে রয়েছে ব্লু ঘোস্ট লুনার ল্যান্ডার। সঙ্গে বাড়তি পেলোড হিসেবে আরও রয়েছে জাপানের আইস্পেস নির্মিত রেজিলিয়েন্স লুনার ল্যান্ডার। এই ল্যান্ডারেই ১০টি বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা ও কিছু পরীক্ষামূলক প্রযুক্তি রয়েছে।
ব্লু ঘোস্ট লুনার ল্যান্ডারচাঁদে যাওয়ার আগে ব্লু ঘোস্ট পৃথিবীর চারপাশে ২৫ দিন ব্যয় করবে। এই সময় পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরবে এটি। এর মাধ্যমে অর্জন করবে প্রয়োজনীয় গতিবেগ। তারপর ছুটবে চাঁদের উদ্দেশে। চাঁদের কক্ষপথে ১৬ দিন অতিবাহিত করে চন্দ্রপৃষ্ঠে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নামার প্রস্তুতি নেবে। এই ফ্লাইবাই বা ঘোরার মাধ্যমে চাঁদ ও পৃথিবীর মহাকর্ষ কাজে লাগিয়ে কম জ্বালানি খরচ করেই প্রয়োজনীয় বেগ অর্জন করবে ল্যান্ডারটি। এর লক্ষ্য চাঁদের ‘মেরে ক্রিসিয়াম’ ক্রেটার বা খাদ। এই প্রাচীন গর্তটি গ্রহাণুর আঘাতে সৃষ্টি হয়েছিল। এটি প্রায় ৭৪০ কিলোমিটার প্রশস্ত।
ঠিকভাবে অবতরণের প্রায় ৩০ মিনিটের মধ্যে ল্যান্ডারটি পৃথিবীতে তথ্য পাঠাতে শুরু করবে। চাঁদে রাত নামার আগে মাত্র ১৪ দিন সময় পাবে এটি।আগেই বলেছি, এই মিশনে নাসার নেতৃত্বাধীন ১০টি বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা ও পরীক্ষামূলক প্রযুক্তি চন্দ্রপৃষ্ঠে নিয়ে যাওয়া হবে। এর একটা হলো লুনার এনভায়রনমেন্ট হেলিওস্ফেরিক এক্স-রে ইমেজার বা লেক্সি। এটি পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্র পর্যবেক্ষণ করবে। এই পর্যবেক্ষণের সাহায্যে চৌম্বকমণ্ডলে ঘটে যাওয়া প্রক্রিয়াগুলো পৃথিবীতে বসে দেখতে পারবেন বিজ্ঞানীরা।
আগে কখনো এমনটা করা হয়নি। এ প্রসঙ্গে নাসার কর্মকর্তা হিউনজু বলেন, ‘আমরা প্রথমবারের মতো চৌম্বকমণ্ডলের ‘শ্বাস-প্রশ্বাস’ (অর্থাৎ সংকোচন-প্রসারণ) দেখতে পাব। কারণ, খুব শক্তিশালী সৌরবায়ু চৌম্বকক্ষেত্রে আঘাত করলে এটি সঙ্কুচিত হয়। সৌরবায়ু দূর্বল হয়ে গেলে আবার প্রসারিত হয় এটি।’
এই মিশনে থাকবে প্লাম-সারফেস স্টাডিজ (ক্যাল্পস) নামে দুটি স্টেরিও ক্যামেরা। চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণের দৃশ্য দেখা যাবে এই ক্যামেরার সাহায্যে। ব্লু ঘোস্টের ইঞ্জিন তখন কেমন প্রতিক্রিয়া দেখায়, তা দেখার জন্যই এই ব্যবস্থা। অন্য যন্ত্রগুলো চাঁদের ধূলিকণার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করবে। চেষ্টা করবে চন্দ্রপৃষ্ঠের বিকিরণ পরিমাপের।
এমনকি চাঁদের অভ্যন্তরের বৈদ্যুতিক পরিবাহিতা নিয়েও গবেষণা করবে। স্পেসএক্সের পাশাপাশি এসব যন্ত্রপাতি তৈরিতে ভূমিকা রেখে এ মিশনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে আমাজনখ্যাত জেফ বেজোসের ব্লু অরিজিন, যুক্তরাষ্ট্রের মন্টানা স্টেট ইউনিভার্সিটি এবং সাউথ-ওয়েস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।