জুমবাংলা ডেস্ক : ‘নাহিদ রেইনস’ নামক সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার বিএনপির বিরুদ্ধে ‘ডিপ ফেইক’ বা সহজে বললে ‘গুজব প্রচার করছে’ বলে অভিযোগ তুলে সেই নাহিদকে নিয়েই ভুলে ভরা তথ্য সংবাদ সম্মেলনে প্রচার করলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসিচব রুহুল কবির রিজভী। তিনি দাবি করেন ‘নাহিদ রেইন একজন দাগী আসামী’।
কিন্তু বাস্তবতা হলো নাহিদ রেইনস কখনো গ্রেফতার হননি। তার বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল রেকর্ডও নেই।
আজ রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী দাবি করেন, নাহিদ রেইনসের নেতৃত্বে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে বিএনপি চেয়ারপার্সনসহ শীর্ষ নেতৃবৃন্দদের নিয়ে ডিপ ফেইক ভিডিও ও অডিও প্রচার করা হচ্ছে।
এ সময় নিজের বক্তব্যের সমর্থনে ডিসেম্বরে প্রকাশিত ফিনান্সিয়াল টাইমসের একটি প্রতিবেদনও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপন করেন তিনি।
রিজভী বলেন, বিবিসিসহ আন্তর্জাতিক ও দেশের বেশ কিছু সুনামধন্য গণমাধ্যমের লোগো ব্যবহার করেও অনেক সময় ডিপ ফেইক ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। আর এসব কিছুই করছে সরকার।
তিনি বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শুধু লন্ডনে বসে প্রযুক্তির সহায়তায় দেশের আনাচে—কানাচে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। এই যোগাযোগের জন্য প্রধানতঃ ব্যবহার করা হয় জুম নামে একটি অ্যাপ। সম্প্রতি সরকারপন্থি কয়েকটি অনলাইন প্লাটফর্ম এবং মিডিয়া আউটলেট থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের জুম মিটিংয়ে দেওয়া বক্তব্যকে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহারের মাধ্যমে বিকৃত ডিপফেইক ভিডিও তৈরি করে দেশ—বিদেশে থাকা বিএনপির শুভানুধ্যায়ীদের কাছে চাঁদাবাজি করা হচ্ছে। আবার সেই চাঁদাবাজির ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে।
রিজভী বলেন, শুধু বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানই নন, জাতীয় স্থায়ী কমিটির সম্মানিত সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ বেশ কয়েকজন সদস্যকে নিয়েও একই ধরনের ডিপফেইক ভিডিও তৈরি করা হয়েছে।
কিন্তু ফিনান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদন ঘুরে দেখা যায়, সেখানে নাহিদ রেইনসের নাম উল্লেখ নেই। উল্টো সম্প্রতি সময়ে ফেসবুকে দৈনিক ১০-৩০টি ভিডিও সম্প্রচার হচ্ছে যা মূলতঃ সরকারকে লক্ষ্য করে মিথ্যা ও ভুল তথ্য দিয়ে তৈরি। এ ভিডিওগুলোতে সিএনএন, বিবিসি, আল-জাজারি বা বাংলাদেশের টেলিভশন সময়, একাত্তর, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভিসহ বিভিন্ন পত্রিকার লোগো নিউজের অংশে ব্যবহৃত হচ্ছে। ফেসবুকে প্রচারিত তেমনি এক ভিডিও এটি (https://www.facebook.com/watch/?v=326426353766196&ref=sharing ) যার শিরোনামে লেখা হয়েছে ‘আঃ লীগ শেষ, নির্বাচন আবার হবে/ সিঙ্গাপুরে গোপন বৈঠক বিএনপি-পিটার হাসের। এ ছাড়াও ইউটিউবে সেনাবাহিনী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোকে নিয়ে এমন অসংখ্য গুজব ভিত্তিক ভিডিও প্রতিদিন প্রকাশিত হচ্ছে, যার আক্রমণের কেন্দ্রে থাকে সরকার এবং সেখানে বিএনপির পক্ষ নিয়ে কথাগুলো বলা হয়।
কিন্তু কেন নাহিদ রেইনসকে লক্ষ্য করে ব্যক্তি আক্রমণে যাচ্ছে একটি দল। সংবাদ সম্মেলন করে কেনো নাহিদ রেইনসের নামে ‘দাগি আসামী’ হবার মিথ্যা অভিযোগ করলো বিএনপি তার অফিসিয়াল সংবাদ সম্মেলনে?
এই প্রশ্ন করা হলে নাহিদ রেইনস জানান, ‘আসলে রিজভী সাহেব সত্য কথাই বলেছেন। আসলেই ইউটিউব এবং ফেসবুকসহ বেশ কিছু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও স্থানীয় গণমাধ্যমের লোগো ব্যবহার করে বা খণ্ড সংবাদ প্রকাশ করে গুজব করা হচ্ছে। কিন্তু তিনি যে বিষয়টি বলতে ভুলে গেছেন তা হলো, এ ধরণের গুজব বিএনপি থেকে করা হচ্ছে বিগত ৬-৭ বছর ধরে এবং এর বিরুদ্ধে আমার লড়াইটাও চলছে তখন থেকে। তাদের এমন অনেক গুজবের দাঁতভাঙ্গা জবাব আমি দিয়েছি আমার দায়বদ্ধতার স্থান থেকে। আর এ কারণেই তারা চাইছে আমি যেনো চুপ হয়ে যাই। কিন্তু আমাকে চুপ করাতে তারা যেই মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে, সেটি দেখে চুপ থাকা সম্ভব নয়। রিজভীয় সাহেবকে প্রমাণ করতে হবে, আমি কোন কোন মামলার আসামী এবং ‘দাগী আসামী’ হিসেবে আমার বিরুদ্ধে কোন কোন মামলা হয়েছে। দলীয় মাইক পেলেই একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে এমন মানহানীকর বক্তব্য দেয়া যাবে, এটা নিশ্চয়ই দেশের আইন সমর্থন করে না। তিনি প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হলে আমি কেন তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেব না সেটাও জানতে চাই।’
নাহিদ রেইনসের ফেসবুক পেজের লাইভে লাগামহীন ও চরম আপত্তিকর বক্তব্য দিয়ে তীব্র রোষানলে পড়তে হয় সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানকে। ওই বক্তব্যগুলোর জেরে তুমুল সমালোচনার মধ্যে পদত্যাগ করেন তিনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।