কেরামত উল্লাহ বিপ্লব: কুইন্স হাসপাতালের বিছানা থেকে কাঁপা কাঁপা গলায় বলছিলো- ফরিদ আলম । হোয়াটসআপ কলে। ক’দিন ধরেই কল করছিলাম। কতোবার টেক্সট ম্যাসেজ দিয়েছি । কোন জবাব নেই। সাড়া নেই।
ফরিদ আলম আমার কে ? তার সাথে আমার কি সম্পর্ক ঢাকার সাংবাদিক মহলে অনেকেই তা জানেন। আমরা দু’জনেই ছিলাম মফঃস্বলের সাংবাদিক। আমি রংপুরে, ফরিদ টাঙ্গাইলে । ঢাকাতেও আমাদের কর্মজীবন অনেকদিন একসাথে। বাংলাবাজার পত্রিকা, চ্যানেল ওয়ান। দশ বছরেরও বেশি সময় দিনরাত এক সাথে।
চ্যানেল ওয়ান টেলিভিশনটা মুলত ফরিদ আলমের হাতে গড়া। আমার টেলিভিশন সাংবাদিকতা শেখাও সেখানে। আমার সেই বন্ধু-সেই ভাই ফরিদ অভিমান করে পরে দেশ ছেড়েছিলেন। আমেরিকায় গেলেন। রাগই করলাম। যোগাযোগ হয়নি কয়েক বছর। তারপর আবার কথা হলো। হতেই থাকলো। সেই বন্ধু আমার নিউইয়র্কের কুইন্স হাসপাতালে আজ ৫ দিন। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। গেলো কয়েকদিন মনটা খুব খারাপ ছিলো ফরিদের জন্য। আজ অনেকটাই হালকা হয়ে গেলো। ৫৭ সেকেন্ড ফোনে কথা বলেছে । দুর্বল স্বর। কিন্ত তাতেও মনে হলো ও যুদ্ধে জিতে গেছে। ফরিদের সেই কথাটাই কানে বাঁজছে- ‘নিউইয়র্কের অবস্থা ইম্পোসিবল বিপ্লব ভাই।’
আমি জানি ওখানে, ওই দেশে কি হচ্ছে। প্রতি মিনিটে হচ্ছে মৃত্যু। হাসপাতালের কোন বিছানা খালি নেই। রাস্তায় চিকিৎসা চলছে। অসহায়ত্ব জানাচ্ছেন বিশে^ও নামকরা সব চিকিৎসা বিজ্ঞানী- ডাক্তাররা। খোদ হোয়াইট হাউজ বলছে যুক্তরাষ্ট্রে এই মহামারীতে ৮২ হাজার মানুষের মৃত্যু হতে পারে। চিকিৎসকরা বলছেন ১ লাখের বেশি। কোথায় এ পরিস্থিতি গিয়ে ঠেকবে কেউ জানিনা। শুধু জানি পরম করুণাময় খুব শিগগির এই ভয়াল মহামারী থেকে আমাদের মুক্তি দেবেন। ফরিদের সাথে আবার দেখা হবে জ্যাকসন হাইটস কিংবা ম্যানহাটনে। আমরা আবার নতুন কোন পরিকল্পনা করবো। অনেক রাত অবধি আড্ডা দেবো। ভালো কিছু করার উদ্যোগ নেবো।
নোট : এই মুহুর্ত পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসে ৩৫৪১ জন মারা গেছে । আক্রান্ত দুই লাখের কাছাকাছি। এর অর্ধেকেরও বেশি নিউইয়র্কে। এই শহরে এরিমধ্যে মৃতের তালিকায় যুক্ত হয়েছে ৩৩ জন বাংলাদেশী। মৃত্যুর সাথে হাসপাতালে পাঞ্জা লড়ছেন ২শ’রও বেশি পরিচিতজন।
হে মহান আল্লাহ, আপনি আমাদের মাফ করে দিন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।