বরফের বুকে বসানো হয়েছে টেলিস্কোপ। ভূতুড়ে কণা নিউট্রিনোর খোঁজ করে চলেছে। বিজ্ঞানের সপ্তম আশ্চার্যের একটি বলে একে আখ্যা দিয়েছে সায়েন্টিফিক আমেরিকান। নিউট্রিনো নামে একধরনের কণা আছে, যারা সাধারণ কণার সঙ্গে খুব সামান্য মিথষ্ক্রিয়া করে। এদের কোনো ধরনের বৈদ্যুতিক চার্জ নেই, ভরও প্রায় নেই বললেই চলে।
ইংরেজিতে এগুলোকে বলে ঘোস্ট পার্টিকেল, বাংলায় বলা যায় প্রেতাত্মা-কণা! একটু ওভারড্রামাটিক হয়ে গেল বোধ হয়। তবে প্রচলিতভাবেও এদের ‘ভুতুড়ে কণা’ বলা হয়। এমনটা বলার পেছনে কারণও আছে। এরা কোনোভাবেই ধরা দিতে চায় না। যে ধরা দিতে চায় না, তাকে নিয়ে এত চিন্তা কেন? বলছি। সে জন্য শুরুটা করতে হবে সূর্য থেকে।
সূর্যের কেন্দ্রে প্রতি মুহূর্তে ঘটে চলেছে ফিউশন বিক্রিয়া। এ বিক্রিয়ায় দুটো হাইড্রোজেনের নিউক্লিয়াস একীভূত হয়ে তৈরি করে হিলিয়াম। প্রতিবার যখন হাইড্রোজেন থেকে হিলিয়াম নিউক্লিয়াস তৈরি হয়, তখন প্রতিটি হিলিয়ামের জন্য তৈরি হয় দুটো করে নিউট্রিনো। সূর্য নিজেই এদের ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়।
কাজেই, প্রতি মুহূর্তে প্রচুর পরিমাণ নিউট্রিনোর প্যাকেট (বিজ্ঞানের ভাষায় বলে নিউট্রিনো ফ্লাস্ক) সূর্যের সীমানা ছাড়িয়ে বেরিয়ে পড়ে, আলোর কাছাকাছি বেগে ছুটে চলে মহাশূন্যের ভ্যাকুয়ামের মধ্য দিয়ে। চলার পথে পৃথিবীকে এরা এমনভাবে পেরিয়ে যায় যেন পৃথিবী বলে কোনো কিছুর অস্তিত্বই নেই! সরল কথায়, দিন-রাত চব্বিশ ঘণ্টার প্রতি মুহূর্তে একশ বিলিয়নের মতো নিউট্রিনো আপনার দেহের প্রতি বর্গ ইঞ্চির মধ্য দিয়ে ছুটে যায়। অথচ কখনোই এরা আপনার দেহের কোনো পরমাণুর সঙ্গে কোনো ধরনের মিথস্ক্রিয়া করে না।
এ তো গেল কেবল সূর্যের কথা। এ ছাড়াও অন্যান্য নক্ষত্র, নিউট্রন স্টার এবং বিশেষ করে বিস্ফোরণের মাধ্যমে যেসব নক্ষত্র আত্মহুতি দেয় (যেমন সুপারনোভা)—তাদের বুকেও প্রতিনিয়ত তৈরি হয় নিউট্রিনো। এ ছাড়াও গ্যালাক্সিদের মধ্যে সংঘর্ষের ফলে গামা রশ্মি উৎপন্ন হয়। এ সময়ও তৈরি হয় নিউট্রিনো।
সবচেয়ে বড় কথা, নিউট্রিনো যেহেতু সহজে কারো সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করে না, সহস্র কোটি বছর ধরে মহাকাশের বুকে ছুটে চলার সময় এগুলো যেসব এলাকার মধ্যে দিয়ে গেছে, এই সব তথ্য জমা থাকে তার বুকে। ফলে ছলনাময়ী নিউট্রিনোকে কোনোভাবে শনাক্ত করা গেলে মহাকাশের অজানা অনেক কিছু জানার নতুন এক দরজা খুলে যাবে আমাদের সামনে।
হিসেব-নিকেশ করে এমন একটি কণা যে আছে, বিজ্ঞানীরা তা বেশ ভালোই বুঝতে পারছিলেন, কিন্তু এদের শনাক্ত করার উপায় খুঁজে বের করতে পারছিলেন না কিছুতেই। প্রথম এ কণার অস্তিত্ব সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন বিজ্ঞানী উলফগ্যাং পাউলি। সেটা ১৯৩০ সালের কথা।
বিটা ক্ষয়ে আপাত শক্তির হারিয়ে যাওয়া ব্যাখ্যা করতে নিউট্রিনো কণার অস্তিত্বের অনুমান করেন তিনি। পাউলি প্রস্তাব করেন, একটা চার্জ নিরপেক্ষ কণা বিটা ক্ষয় প্রক্রিয়ায় পরমাণুর বাইরে শক্তি নিয়ে যায়। পরে সেই কণাটির নাম দেওয়া হয় নিউট্রিনো। কণাটির নামকরণ রাখেন ইতালীয় পদার্থবিদ এনরিকো ফার্মি। এ শব্দের অর্থ, ছোট্ট অচার্জিত কণা। বিজ্ঞানী জেমস চ্যাডউইক আবিষ্কৃত চার্জ নিরপেক্ষ ভারী নিউট্রনের সঙ্গে পার্থক্য করতেই এমন নাম।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।