জুমবাংলা ডেস্ক : নিজগ্রামে ‘ফেরেশতা’ হিসেবে বেশ পরিচিত সৈয়দ আবেদ আলী জীবন। শুধু নিজগ্রামেই নয়, উপজেলাজুড়ে ছিল তার বিচরণ। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো ছিল তার লক্ষ্য। এর অন্যতম কারণ আসছে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীর ঘোষণা দেন আবেদ আলী। অসহায় মানুষকে সাহায্য করে মন জয় করে নেবার আপ্রাণ চেষ্টার কমতি রাখেননি তিনি।
এই চেষ্টায় যোগ দেন তার বড় ছেলে সৈয়দ সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়াম। এছাড়া ঈদ ও পুজাকে ঘিরে কয়েক হাজার শাড়ি-লুঙ্গি, নগদ টাকাও বিতরণ করছেন আবেদ আলী। কিন্তু প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় বাবা ও ছেলে গ্রেফতারের পর বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে থলের বিড়াল।
সরেজমিন ঘুরে ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নির্বাচনকে সামনে রেখে পৈতৃক ভিটার পাশে জমি কিনে নির্মাণ করেছেন আধুনিক বাড়ি। বর্তমানে সেটি এখন তালাবদ্ধ। কয়দিন আগেও গ্রাম থেকে পাড়ামহল্লা, সবখানেই বিচরণ ছিল সৈয়দ আবেদ আলীর। মাদারীপুরের ডাসার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে চষে বেড়িয়েছেন সর্বত্র। রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়ায় নিজগ্রামে কয়েক কোটি টাকা খরচ করে নির্মাণ করেছেন আলিশান বাড়ি। সপরিবারে করেছেন হজও। বিসিএস’সহ বেশ কয়েকটি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় সম্প্রতি আলোচনায় আবেদ আলী। কুলি থেকে কোটিপতি হওয়ার গল্পে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসীও।
স্থানীয়রা জানান, ৬ষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়া আবেদ আলীর বাবা সৈয়দ আব্দুর রহমান মারা যাবার পর রাজধানী ঢাকায় কুলির কাজ করতেন। বহুরাত ঘুমিয়েছেন রেলস্টেশনেও। খাবার হোটেলের প্লেট ধোঁয়া, রিকশা চালানোসহ নানা কাজ করেছেন তিনি। এরপর গাড়ি চালানো শিখে পিএসসি’র চেয়ারম্যানের চালক হিসেবে যোগ নেন। এতেই ভাগ্য খুলে যায় আবেদ আলীর।
অভিযোগ আছে, বিসিএস’সহ বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করে এখন কোটি কোটি টাকার মালিক। পৈতৃক ভিটার পাশেই জমি কিনে নির্মাণ করেছেন তিনতলা বিশিষ্ট দৃষ্টিনদন বাড়ি। পাশেই গড়ে তুলেছেন সৈয়দ আবেদ আলী কেন্দ্রীয় মসজিদ ও ঈদগাহ মাঠ। আছে বিভিন্ন গাছের বাগান। পরিবারের নামে কিনেছেন কয়েকশ’ একর জমি। মাদারীপুরের ডাসার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বেশ প্রচার-প্রচারণাও চালাচ্ছেন তিনি।
কর্মী-সমর্থকদের জন্য খরচ করার পাশাপাশি অসহায়দের দান করেছেন লাখ লাখ টাকা। বড় ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়ামকে পড়ালেখা করিয়েছেন ভারতের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। পরিবারের সদস্যদের জন্য আছে কোটি টাকা মূল্যের আলাদা গাড়িও। এত টাকার জোগান কোথা থেকে এলে জনমনে নানা প্রশ্নের থাকলেও আস্তে তা পরিষ্কার হতে শুরু করেছে। মুখ খুলতে শুরু করেছেন এলাকাবাসীও।
আবেদ আলীর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক থেকে জানা যায়, তার মুখে ছিল সততার বানী। ১০ বছর আগেও সৈয়দ আবেদ আলীর ছিল না কোনো সম্পত্তি। অথচ দুর্নীতি করে কামিয়েছেন শত কোটি টাকা। হঠাৎ আবেদ আলী আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার হতবাক এলাকাবাসীও।
পশ্চিম বোতলা গ্রামের বাসিন্দা আসাদুজ্জামান সরদার বলেন, ‘এত সম্পত্তির মালিক কীভাবে হলো সেই প্রশ্ন সবার। মানুষকে লাখ লাখ টাকা দান করতেছে। এলাকায় বাড়ি করছে, মসজিদ করেছে। কেউ সৎভাবে উপার্জন করে অল্পদিনে কোটি কোটি টাকার মালিক হতে পারে না। এর তদন্ত হওয়া দরকার। এলাকাবাসী হিসেবে আমরা এর তদন্ত চাই।’
আরিফ মোল্লা নামে এক যুবক বলেন, ‘এক বছর আগে এই নতুন বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। মাসে দুই একবার তিনি এলাকায় আসেন। শুনতেছি ডাসার উপজেলা পরিষদ নির্মাণও করবেন তিনি। এলাকায় অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতো তাকে ফেরেশতা হিসেবেই চেনে অনেকেই।’
আটিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা কালু তালুকদার বলেন, ‘সড়কের পাশে গরুর ফার্ম নির্মাণ করছেন আবেদ আলী। এলাকাবাসী কেউ জানতো না, এত টাকা কোথা থেকে আসতো, তবে বাবা ও ছেলে গ্রেফতারের পর বিষয়টি সবার বুঝতে বাকি নেই।’
আরেকজন বাসিন্দা বলেন, ‘বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করে সে কোটি টাকার মালিক হয়েছে। তিনি একজন চালক ছিলেন, তখনই এত টাকা কামিয়েছেন।’
মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মারুফুর রশিদ খান জানান, ‘এরইমধ্যে মাঠে নেমেছে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা। দোষ প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া এ ব্যাপারে আদালত থেকে কোনো নির্দেশনা এলে সেটিও বাস্তবায়ন করা হবে।’
মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার পশ্চিম বোতলা গ্রামের সৈয়দ আবেদ আলী ও তার বড় ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়াম প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় গ্রেফতার হয় রাজধানী ঢাকায়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।