জুমবাংলা ডেস্ক : ধান ক্ষেত, বাঁশের ছোট সাঁকো আর পাহাড়ি ঝিড়ি। দুর্গম পথ মাড়িয়ে যেতে হয় ফুটবলের স্বর্ণকন্যা ঋতুপর্না চাকমার বাড়ি। তার অর্জনের পথটি যে মসৃণ ছিল না, সেটাই বলে দিচ্ছে তার গ্রামের বাড়িটি। তবু সে বাড়িটি এখন অন্য আলোয় উজ্বল। ঋতুপর্ণার মতো রূপনার বাড়িও দুর্গম এলাকায়। তবে মেয়ের অভাবনীয় সাফল্যের দিনেও মা কালা সেনা চাকমার ব্যস্ততা ক্ষেত পরিচর্যায়।
বুধবার নেপালের কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে দেশের হয়ে জয়সূচক গোলটি করেন ঋতুপর্না। তাতে গোটা দেশ ভাসছে সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আনন্দে। বাদ যায়নি পাহাড়ি জেলা রাঙামাটিও। এই জেলার মেয়ে ঋতুপর্না, রূপনা আর মনিকাদের নৈপূর্ণ্যে বিজয়ী হয়েছে দেশ। টানা দ্বিতীয়বার নারী ফুটবল সাফ জয়ী হওয়ায় রাঙামাটিতে ঋতুপর্ণা ও রূপনার বাড়িতে আনন্দঘর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। বাড়িতে
প্রতিবেশী ও আত্মীয় স্বজনরা ভিড় করছে। তাদের এমন সাফল্যে গর্বিত স্বজন ও এলাকাবাসী।
তবে বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) বিকেল পর্যন্ত জেলা ক্রীড়া সংস্থা, স্থানীয় বা জেলা প্রশাসনের কেউ তাদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেননি।
ঋতুপর্না চাকমার বাড়ি রাঙামাটি জেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের দুর্গম মগাইছড়ি গ্রামে। যেখানে যাওয়ার জন্য ভালো কোন সড়ক নেই। ধান ক্ষেত্রের ওপর ঘণ্টাখানের হাঁটা পথের গ্রাম থেকে উঠে আসা ঋতুপর্ণা আজ দেশের সাফল্যের তারকা। বাংলাদেশ টানা দ্বিতীয়বার শিরোপা জিতিয়ে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ও হয়েছেন ঋতুপর্ণা চাকমা।
তার মেঝো বোনের জামাই সুদীপ চাকমা জানান, গতকাল সন্ধ্যায় আমরা সবাই একসঙ্গে খেলা দেখেছি। যখন ঋতু গোল করেছে এবং বাংলাদেশ জিতেছে তাতে সকলে অনেক আনন্দিত হয়েছি। খেলা শেষে ঋতু ফোন করেছে সেও খুব খুশি সেরা খেলোয়ার হতে পেরে।
দেশে ফেরার পথে ভিডিও কলে ঋতুপর্না চাকমা তার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে জানান, দক্ষিণ এশিয়ার সেরা খোলোয়ার হতে পেরে অবশ্যই খুশি। এই খুশি প্রকাশ করা কঠিন।
ঋতুপর্ণা চাকমা মা ভূজিপতি চাকমা জানান, আমার মেয়ের খেলা দেখে আমি খুব খুশি। আমি তার জন্য অনেক আর্শিরবাদ করি যাতে সে আরা ভালো খেলতে পারে। তিনি আরও বলেন, গতবার যখন ঋতুরা জিতেছিলো। তখন প্রশাসনের অনেকে আমার বাড়িতে এসেছিলো তখন নতুন বাড়ি, বাড়িতে আসার রাস্তাসহ অনেক কিছু করে দেয়ার কথা বললেও কিছু করে দেয়নি। আমার মেয়েরা দেশের জন্য খেলে যাচ্ছে। সরকার যদি এবার কিছু করে আমাদের জন্য।
সাফজয়ী নারী ফুটবল দলের সেরা গোলরক্ষক রূপনা চাকমা। তার বাড়ি রাঙামাটি জেলার নানিয়ারচর উপজেলার ঘিলাছড়ি ইউনিয়নে ভূঁইয়াদাম গ্রামে। ঢালু পাহাড়ের আঁকাবাঁকা রাস্তা বেয়ে রূপনার বাড়িতে যেতে হয়। একটি জরাজীর্ণ বাড়িতে বসবাস করত রূপনার পরিবার। ২০২২ সালে সেপ্টেম্বরে ফুটবলে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের মেয়েরা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর রূপনা চাকমার জীর্ণ ঘর নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরে গত সেপ্টেম্বরে রূপনার পরিবারের জন্য নতুন ঘর নির্মাণ করে দেয়া হয়। মেয়ের এমন অর্জনে যেন কোন প্রভাব ফেলেনি রূপনার চাকমার মা কালা সেনা চাকমার। অন্য স্বাভাবিক দিনের মত ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তিনি।
রূপনার মা কালা সোনা চাকমা জানান, মেয়ে যখন ফাইনালে উঠেছে এবং খেলায় ২-১ গোল জিতেছে তাতে আমি খুব খুশি। সে যাতে ভবিষ্যতে আরও ভালো খেলতে পারে সেই আর্শিরবাদ করি। তিনি আরও বলেন, রাস্তা করে দেয়ার কথা ছিলো আর হয়নি। কেউ আর যোগাযোগ রাখেনি। কেউ খবরও নেয়নি এতোদিন।
এদিকে, টানা দ্বিতীয় বার সাফ জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় গর্বিত তাদের সাবেক কোচ আর ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।