নিজ সহযোগীকে বাঁচাতে মানসিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে ফাঁসালেন চেয়ারম্যান!
Updated:4 Mins Read
জুমবাংলা ডেস্ক : মাদক মামলা থেকে নিজ সহযোগীকে বাঁচাতে মানসিক প্রতিবন্ধী রোগীকে ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে পাবনার সুজানগরের নাজিরগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মশিউর রহমান খানের বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগীর পরিবারের অভিযোগ, নিজ অনুসারী হালিম শেখ (৫০) গাঁজার গাছসহ গ্রেফতার হলে, তাকে মামলা থেকে বাঁচাতে আফছার মোল্লা (৪০) নামের এক মানসিক রোগীকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন মশিউর চেয়ারম্যান। চেয়ারম্যানের মারধর ও হুমকিতে হালিমের অপরাধ নিজের কাঁধে নিয়ে অসহায় আফছার এখন কারাগারে। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
অভিযুক্ত হালিম শেখ নাজিরগঞ্জ ইউনিয়নের নওয়াগ্রামের মৃত আবদুল মাজেদ শেখের ছেলে ও ভুক্তভোগী আফছার মোল্লা একই গ্রামের মৃত আবদুল আজিজ মোল্লার ছেলে। উভয়েই চেয়ারম্যানের প্রতিবেশী।
এলাকাবাসী ও পরিবারের সদস্যরা জানান, গত শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) ভোরে পার্শ্ববর্তী হালিম শেখের বাড়িতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাকে গাজার গাছসহ আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এদিন দিবাগত রাত ১২টার পর হঠাৎ আফছারের বাড়িতে এসে তাকে হালিমের দোষ স্বীকার করে থানায় জবানবন্দি দিতে বলেন আটক হালিম শেখের ভাই বাদশা, দুই ছেলে তারেক ও নয়ন এবং চেয়ারম্যানের আরেক সহযোগী জদু সরদার। এ জন্য তাকে এক হাজার টাকাও দেন তারা। পরের দিন সকালে রাস্তা থেকে ধরে নিয়ে তারা আফছারকে জোর করে চেয়ারম্যানের বাড়িতে নিয়ে যান তারা। সেখান থেকে চেয়ারম্যান ও তার সহযোগীরা মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে থানায় নিয়ে যান। পুলিশের কাছে আফছার তাদের শেখানো কথা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলে থানা পুলিশ হালিমের সঙ্গে আফছারকেও জেলহাজতে প্রেরণ করে।
আফছার মোল্লার স্ত্রী শাহেদা খাতুন বলেন, রাত ১২টার দিকে হঠাৎ হালিম শেখের ভাই ও ছেলেরা এসে বাড়িতে এসে আমার স্বামীকে ঘুম থেকে ডেকে বলে, ‘হালিমের গাঁজার গাছ তুই লাগিয়েছিস, তুই গাঁজা খাস, তুই স্বীকার গেলে হালিমকে ছেড়ে দেবে আর তুই পাগল তোর কিছু হবে না, পুলিশ তোকে ধরবে না।’ এ সময় আমার স্বামী প্রথমে অস্বীকার গেলে তাকে চড়-থাপ্পড় মারে এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে পরের দিন সকালে তাদের সঙ্গে থানায় যাওয়ার জন্য বলে চলে যান। সকালে আমার স্বামী মাঠে কাজে যাওয়ার পথে জোর করে তারা চেয়ারম্যানের বাড়িতে নিয়ে যান। পরে চেয়ারম্যান নিজে ও তার সহযোগীরা থানায় নিয়ে যান। পরে আমার নির্দোষ স্বামীকেও পুলিশ জেলহাজতে পাঠিয়েছে।
আফছারের ভাই খালেক মোল্লা বলেন, আমার ভাই মানসিক রোগী। মাঝেমধ্যে তাকে পায়ে শিকল ও হাতে বেড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। সে নিয়মিত পাবনা মানসিক হাসপাতালের চিকিৎসা নেয় ও ওষুধ খায়। মাঝেমধ্যে যখন সুস্থ থাকে তখন এলাকায় দিনমজুরের কাজ করে। আমরা থানায় গিয়ে পুলিশকে অনুরোধ করেছি, কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। এখন আমরা তার স্ত্রী-শিশুকন্যাকে নিয়ে বড় অসহায় অবস্থায় পড়েছি।
আফছারের ১০ বছরের শিশুকন্যা সাদিয়া খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলে, আমার আব্বু পাগল। আব্বু সেদিন আমার সঙ্গেই ঘুমিয়ে ছিল। পরেরদিন সকালে আব্বুকে জোর করে কিছু মানুষ ধরে নিয়ে থানায় দিয়ে এসেছে। আমি আমার আব্বুর মুক্তি চাই।
স্থানীয় গ্রামপুলিশ ইয়াছিন আলী বলেন, আমার উপস্থিতিতেই হালিম শেখকে তার নিজ বাড়িতে লাগানো গাঁজার গাছসহ আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। পরে চেয়ারম্যানের লোকজন আফছারকে ধরে থানায় নিয়ে গেছে। খবর পেয়ে আমি থানায় গিয়ে দেখি পুলিশ তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে হাজতে পাঠিয়েছে।
আব্দুল মান্নান, ইনামুল হক, মিলন, খাইরুল শেখ, সাহিদা খাতুন ও রোজিনা বেগমসহ অর্ধশতাধিক এলাকাবাসী বলেন, আফছার একজন নিরীহ মানুষ এবং মানসিক রোগী। এমন একজন মানসিক রোগীকে চেয়ারম্যান এভাবে ফাঁসিয়ে দেবে ভাবতেও পারিনি।
থানায় দেওয়ার কথা স্বীকার করে চেয়ারম্যান মশিউর রহমান খান বলেন, গ্রেফতারের পর হালিমের ভাইয়েরা আমার কাছে আসে এবং বলে- ‘তিন মাস আগে তাদের বাড়িতে আফছার ফুলের গাছ মনে করে গাঁজার গাছটি লাগিয়েছিল।’ আমি আফছারকে জিজ্ঞাসা করলে সেও গাছ লাগানোর কথা স্বীকার করে। পরে আমি ও হালিমের লোকজন তাকে নিয়ে থানার ওসির কাছে যাই। আফছার ওসির সামনে সবদোষ নিজেই স্বীকার করলে পুলিশ দুজনকেই হাজতে পাঠায়।
একজন মানসিক রোগী কীভাবে অন্যের বাড়িতে গাছ লাগালেন এবং তিন মাস পরও কেন পরিবারের লোকজন গাঁজার গাছ হিসেবে বুঝতে পারলেন না? এমন প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান বলেন, এই ধরনের প্রশ্ন আমাদের মতো জনপ্রতিনিধি হিসেবে করাটা কঠিন। যেহেতু আফছার নিজে স্বীকার করেছে তাই হালিম যেন একটু লাভবান হয় এ জন্য তাকে আমি থানায় নিয়ে গিয়েছিলাম।
থানায় জোর করে নেওয়া হয়েছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, হালিমের ভাইয়েরা একটু জোরটোর করতে পারে, কিন্তু আমি করিনি।
সুজানগর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হান্নান বলেন, যেহেতু সে নিজে স্বীকার করেছে সেহেতু হালিমের সহযোগী হিসেবে তাকেও (আফছার) জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
চেয়ারম্যান নিজে থানায় নিয়ে যাওয়ার কথা বললেও অস্বীকার যান ওসি। তিনি বলেন, ঘটনাস্থল থেকেই আফছারকে আটক করা হয়েছে। পরে চেয়ারম্যানকে ডাকা হয়েছিল, চেয়ারম্যানের সামনেই সে স্বীকার করেছে। চেয়ারম্যান বা কে কি বলল, সেটা আমার বিষয় নয়। আমার এজাহারে যেটা বলা আছে সেটাই মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। সূত্র : সময়টিভি নিউজ