জুমবাংলা ডেস্ক : সাত বছর প্রবাসে কাটিয়ে সারা জীবনের কষ্টার্জিত অর্থ পরিবারে পাঠানোর পরও দেশে ফিরে নিজের জন্য জায়গা হলো না। এমনই করুণ পরিণতি হয়েছে ফেনীর পশুরাম উপজেলার পশ্চিম সাহেবনগর গ্রামের ৪২ বছরের রেমিট্যান্স যোদ্ধা আব্দুল হকের। বাংলাভিশনের করা প্রতিবেদন থেকে বিস্তারিত-
সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ফ্লাই দুবাইয়ের একটি ফ্লাইটে সৌদি আরব থেকে দেশে ফেরেন আব্দুল হক। দীর্ঘদিন অসুস্থতায় জর্জরিত এই প্রবাসী বিমানবন্দরে স্ত্রী-সন্তানের অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু তাদের দেখা না পেয়ে হতাশ হয়ে এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ানের (এপিবিএন) কাছে সাহায্য চান।
এপিবিএন অফিস থেকে তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তাদের প্রতিক্রিয়া হৃদয়বিদারক। তারা সাফ জানিয়ে দেন, আব্দুল হকের দায়িত্ব নেওয়ার মতো কেউ নেই পরিবারে। এমনকি তাকে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্যও কেউ বিমানবন্দরে আসতে রাজি হয়নি।
এই অমানবিক পরিস্থিতিতে এপিবিএন কর্মকর্তারা আব্দুল হককে ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের কাছে হস্তান্তর করেন। উদ্দেশ্য, তাঁকে নিরাপদ আশ্রয়ে রাখা এবং পরবর্তীতে পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে সমাধান বের করা। বর্তমানে আব্দুল হক ব্র্যাকের লার্নিং সেন্টারের একটি রুমে অবস্থান করছেন।
২০১৭ সালে সৌদি আরবে হাউজ ড্রাইভারের কাজ নিয়ে পাড়ি জমান আব্দুল হক। তাঁর জীবনের সব উপার্জন তিনি স্ত্রী-সন্তানের কাছে পাঠিয়েছেন। কিন্তু সৌদি আরবে শেষ এক বছরে অসুস্থতার কারণে কাজ করতে পারেননি, ফলে উপার্জনও বন্ধ হয়ে যায়। আর এখান থেকেই শুরু হয় সম্পর্কের অবনতি।
অভিমানের কারণেই দীর্ঘ এক বছর ধরে তিনি পরিবারের সাথে যোগাযোগ করেননি। কিন্তু দেশে ফিরে নিজেই যখন পরিবারের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করলেন, তখন সেই পরিবারই তাঁর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল।
আব্দুল হকের গল্প এক করুণ বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি। প্রবাসীরা দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। তাদের ঘাম-রক্তে দেশের রেমিট্যান্স আয় বৃদ্ধি পায়, পরিবারের জীবনমান উন্নত হয়। অথচ নিজের পরিবারেই যদি তাঁরা আশ্রয় না পান, তবে তাঁদের আর্থিক ও মানসিক সংগ্রামের মূল্য কোথায়?
এখন আব্দুল হক ব্র্যাকের সেইফ হোমে আছেন। তাঁর পরিবার এবং সমাজ কি তাঁকে গ্রহণ করবে, নাকি আরও একটি মানবিক বিপর্যয়ের সাক্ষী হবে আমরা—এমন প্রশ্ন আমাদের সবার জন্যই গুরুত্বপূর্ণ।
এপিবিএন, ব্র্যাক এবং অন্যান্য সংগঠনের সমন্বিত উদ্যোগ হয়তো তাঁকে পরিবারে ফিরিয়ে দিতে সক্ষম হবে। কিন্তু আমাদের সবার উচিত এই প্রবাসী যোদ্ধাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া এবং তাদের কষ্টকে সম্মান জানানো।
আব্দুল হকের গল্প কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটি আমাদের সমাজের মূল্যবোধের একটি আয়না। এই গল্প আমাদের মনে করিয়ে দেয়, প্রবাসীদের অর্থের মূল্যায়ন করি, কিন্তু তাঁদের ব্যক্তি হিসেবে সম্মান করতে শিখি না। আসুন, তাঁদের মানবিক মর্যাদা নিশ্চিত করি এবং তাঁদের পাশে দাঁড়াই।
ইন্টারনেট শাটডাউন বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ধুলায় মিশে দিয়েছিল: জাপানের রাষ্ট্রদূত
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।