জুমবাংলা ডেস্ক: নিত্যপণ্য মজুত করে যারা জনগণের পকেট কাটছে তাদের খুঁজে বের করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আজ (৩ নভেম্বর) জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ নির্দেশ দেন।
দ্রব্যমূল্য নিয়ে নানাভাবে চক্রান্ত হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সব কিছুর উৎপাদন বেড়েছে তাহলে কীসের অভাব হবে। এগুলির পেছনে কারা আছে? মজুদ করে রেখে দেবে কিন্তু বাজারে আনবে না। না এনে দাম বাড়িয়ে সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলবে। মালপত্র থাকা সত্ত্বেও বাজারে না এনে যারা জনগণের পকেট কাটার চেষ্টা করে এদের খুঁজে বের করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘উৎপাদন এতটুকু কমেনি। সবকিছুর উৎপাদন বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে অতিরিক্ত দাম দিয়ে আমরা কিনে নিয়ে আসছি। কিন্তু সেটা মানুষের কাছে পৌঁছাবে না কেন?’
এসময় প্রধানমন্ত্রী আগামী নির্বাচনে জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগের পরিবেশ নিশ্চিত করতে ঐক্যবদ্ধ হবার এবং সতর্ক থাকার জন্য তাঁর দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগের প্রত্যেকটি নেতাকর্মীকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে এবং মানুষের ভোটের অধিকার যা অনেক সংগ্রামের মধ্যদিয়ে অর্জিত সেই অধিকার যাতে নিশ্চিত থাকে, মানুষ যেন তার ভোট শান্তিপূর্ণভাবে দিতে পারে- সেই পরিবেশ রাখতে হবে।’
বিএনপি-জামায়াত নির্বাচন বানচাল করার জন্য ষড়যন্ত্র করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন বানচাল করার ষড়যন্ত্রের পিছনে অনেকের হাত রয়েছে এবং তারা অনেক উপায়ে চেষ্টা করবে। আমাদের শক্তি হচ্ছে বাংলাদেশের জনগণ।’
নির্বাচনে আসলে ক্ষমতায় যেতে পারবেনা ভেবে নেতৃত্ববিহীন দল বিএনপি সারাদেশে সন্ত্রাস-নৈরাজ্য-জ্বালাও-পোড়াও করতে মেতে উঠেছে উল্লেখ করে সরকার প্রধান আগুন সন্ত্রাসী ও নৈরাজ্য সৃষ্টিকারিদের ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা যে আদর্শ নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছেন, জাতীয় চারনেতা জীবন দিয়েছেন, সেই আদর্শ নিয়েই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। ঐ সমস্ত দুস্কৃতিকারি কয়েকজনের লাফালাফি এদেশে কোনদিনও নির্বাচন বানচাল করতে পারবেনা। এই দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেওয়া হবে না।
তিনি বলেন, ওরা জানে (বিএনপি) যে নির্বাচন করলে ক্ষমতায় আসতে পারবেনা। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তারা ৩শ’ সিটের মধ্যে মাত্র ৩০টি সিট পেয়েছিল। আর ওদের অপকর্মের জন্য মানুষতো আরো ওদের প্রতি বিমুখ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি আসলে সিট পাবেনা দেখে নির্বাচন করবে কিনা সন্দেহ। আর নির্বাচনে আসলেও আসবে ঐ নমিনেশন বাণিজ্য করার জন্য।
শেখ হাসিনা বলেন, তারা নির্বাচন কাকে নিয়ে করবে? নির্বাচন করলে ওদের নেতা কে? কাকে প্রধানমন্ত্রী করবে? কাকে দিয়ে মন্ত্রিসভা করবে? বিএনপির চেয়ারপার্সন (খালেদা জিয়া) এতিমের অর্থআত্মসাতের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার সাজাপ্রাপ্ত, মানি লন্ডারিংয়ের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত এবং ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলার দায়ে সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী। সে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আর রাজনীতি করবে না বলে মুচলেখা দিয়ে দেশ থেকে পালিয়ে যায়। শোনা যায়, লন্ডনে বসে জুয়া খেলে নাকি কোটি কোটি পাউন্ড কামাই করে। এটাই তার সোর্স অব ইনকাম। আর সেখানে বসে তাঁর করে দেওয়া ডিজিটাল বাংলাদেশের সুযোগ নিয়ে জ¦ালাও পোড়াওয়ের নির্দেশ দেয়।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, দলের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য শাজাহান খান, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম ও তাজউদ্দিন আহমেদের কন্যা সিমিন হোসেন রিমি, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, দলের কার্যনির্বাহী সদস্য এবং হবিগঞ্চ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডা. মুশফিক হোসেন চৌধুরী, সৈয়দ নজরুল ইসলাম কন্যা ডা. সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মান্নাফী ও উত্তর সভাপতি শেখ বজলুর রহমান অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ এবং উপপ্রচার সম্পাদক সৈয়দ আব্দুল আউয়াল শামীম স্মরণসভাটি সঞ্চালনা করেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে শহীদদের স্মরণে সকলে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করেন।
আজ ৩ নভেম্বর জেলহত্যা দিবস। ইতিহাসের আরেকটি কলঙ্কজনক দিন। ’৭৫ এর ১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকান্ডের পর তিন মাসেরও কমসময়ের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম বীর সেনানী ও চার জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, এএইচএম কামারুজ্জামান এবং ক্যাপ্টেন মনসুর আলীকে এই দিনে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের অভ্যন্তরে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এর আগে ১৫ আগস্টের পর এই চার জাতীয় নেতাকে কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে বিএনপি’র অগ্নিসন্ত্রাসে তাদের বীভৎস চেহারা রেরিয়ে এসেছে। তারা পিটিয়ে পিটিয়ে পুলিশ হত্যা করে। একজন নিরীহ পুলিশ সে চাকরি করছে, তার কি অপরাধ ছিল যে তাকে ঐ অমানবিকভাবে হত্যা করলো? এটা শুধু একবারই নয়, ২০১৩ সালে, ২০১৪ সালে নির্বাচন বানচালের জন্য এবং ২০১৫ সালেও একই ঘটনা তারা ঘটিয়েছে। কিন্তু তারপরেও নির্বাচন থামাতে পারে নাই।
তিনি আরও বলেন, এখানে কারো ওপর নির্ভর করলে হবেনা। জনগণকেই এগিয়ে আসতে হবে। অগ্নিসন্ত্রাস যারা করে, তাদের ধরে যে হাতে আগুন দেয় ওই হাত পুড়িয়ে দিতে হবে। যেমন কুকুর তেমন মুগুর। তা না হলে তাদের শিক্ষা হবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু এই ঢাকা শহর নয়, প্রত্যেক এলাকায় এই প্রতিরোধ গড়তে হবে। যেখানেই তারা অগ্নিসন্ত্রাস করবে সেই এলাকায় কত বিএনপি বা জামায়াত আছে খুঁজে বের করতে হবে। সন্ত্রাসীদের ধরিয়ে দিতে হবে। আর মানুষের জানমালের যেন ক্ষতি করতে না পারে তাদেরকে সুরক্ষা দিতে হবে, এটাই আওয়ামী লীগের দায়িত্ব। কারণ আমাদের আর কিছু নাই, আমাদের কোন মুরুব্বি নাই। আমাদের আছে বাংলাদেশের জনগণ। সেই জনগণ নিয়েই আমাদের চলতে হবে।
এদের আবার অনেকে মদদ দিচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আসলে খুন-সন্ত্রাস ছাড়া এরা অন্য কিছু জানে না। দেশের এতো উন্নয়ন ও অর্জনগুলো এরা ধ্বংস করে দিতে চায়।
৩রা নভেম্বরের শহীদ জাতীয় চারনেতার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে শেখ হাসিনা বলেন, আসুন আজকের দিনে সকলে মিলে এই প্রতিজ্ঞা করি যে রক্ত দিয়ে লাখো শহীদ আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন সেই লাখো শহীদ এবং আমাদের লাখো নির্যাতিতা মা-বোন, ৭৫ এ জাতির পিতা ও বঙ্গমাতা সহ সকল শহীদ, দেশের সকল গণ আন্দোলনের শহীদ এবং অগ্নিসন্ত্রাসে নিহত ও নির্যাতিতদের কথা স্মরণে রেখে শপথ নিয়ে জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করে সুষ্ঠু নির্বাচন করে দেশে গণতান্ত্রিক ধারাটা অব্যাহত রাখার প্রচেষ্টা গ্রহণ করি। যাতে এই দেশের অগ্রযাত্রা আর কেউ ব্যাহত করতে না পারে।-বাসস
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।