জুমবাংলা ডেস্ক : বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে নাজেহাল দেশবাসী। এর মধ্যে আমিষ পণ্য ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা সব জায়গায়। নিত্যপণ্যের বাজার সিন্ডিকেট ভাঙতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করার কথা বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের। কিন্তু এখানে নেই আইন বিশেষজ্ঞ, অর্থনীতিবিদ। বিশেষজ্ঞ জনবলের অভাবে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি রোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারছে না এই কমিশন।
শুধু তাই নয়, অনেক ক্ষেত্রেই এই কমিশনের বিরুদ্ধে বেআইনি কাজ ও ব্যবসায়ীদের অযথা হয়রানিরও অভিযোগ উঠেছে। তাই প্রতিযোগিতা কমিশনের আইনি কাঠামোর সংস্কার দাবি করেছেন আইন বিশেষজ্ঞরা। সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে প্রতিযোগিতা কমিশনের বিভিন্ন ত্রুটি তুলে ধরে তা সংস্কার করতে বলেছেন আইন বিশেষজ্ঞরা।
সংশ্লিষ্টরা বলেন, প্রতিযোগিতা কমিশন সঠিকভাবে কাজ করলে অনেকটাই লাঘব হতে পারতো বাজারে বিদ্যমান বিভিন্ন সমস্যা, দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধি হয়তো নিয়ন্ত্রণ করা যেতো। প্রশ্ন হলো, ডিম ও মুরগির দাম কমাতে আইন মেনে কতটুকু যথার্থভাবে কাজ করছে প্রতিযোগিতা কমিশন।
তাদের মতে, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে হঠাৎ ২০২২ সালের আগস্ট মাসে ঊর্ধ্বমুখী হয় ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের বাজার। বলা হলো সিন্ডিকেটই এই মূল্য বৃদ্ধির কারণ। প্রতিযোগিতা কমিশন বাজার নিয়ন্ত্রণে স্বপ্রণোদিত মামলা দিলো বেশ কয়েকটি শীর্ষস্থানীয় পোলট্রি খামার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। মামলার কার্যক্রম পরিচালনা করার বিধি প্রণয়ন না করেই কমিশনে শুরু হয় মামলার কার্যক্রম। পর্যায়ক্রমে বেশ কয়েকটি দেশি-বিদেশি পোলট্রি খামার প্রতিষ্ঠানকে চাপিয়ে দিল মোট অংকের আর্থিক জরিমানা।
জরিমানার শিকার প্রতিষ্ঠানগুলো উপায়ন্তর না পেয়ে দ্বারস্থ হল সুপ্রিম কোর্টের। প্রতিযোগিতা কমিশনের আদেশে প্রায়োগিক ও পদ্ধতিগত ভুল পরিলক্ষিত হলে, উক্ত আদেশগুলোর বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ দেন হাইকোর্ট।
সম্প্রতি বন্যা, বৃষ্টি, ও গরম আবহাওয়ার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় হাজারো প্রান্তিক খামার, বাজারে দেখা যায় ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের সরবরাহ ঘাটতি। এ অবস্থায় প্রতিযোগিতা কমিশন সমস্যার মূল কারণ চিহ্নিত না করে পোলট্রি খামারি প্রতিষ্ঠান এর বিরুদ্ধে স্বপ্রণোদিত মামলা করে। খামারিদের ডেকে নিয়ে একটি সভা করেন বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন।
সভায় উপস্থিত ছিলেন কমিশনের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন, দুই সদস্য ও অন্যান্য কর্মকর্তাগণ, এবং কমিশনের দেয়া মামলায় অভিযুক্ত পোলট্রি খামারি প্রতিষ্ঠানের মালিকরা।
বাংলাদেশ ব্রিডারস এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি কাজী জাহিন হাসান বলেন, ডিমের বাজারে প্রতিদিন কয়েক হাজার উৎপাদনকারী ও পাইকারি বিক্রেতারা বেচাকেনা করে। এতো সংখ্যক লোক যখন একটা বাজারে বেচাকেনা করে সেই বাজারে কোনো সিন্ডিকেট থাকতে পারে না। তাছাড়া মুরগির খাদ্যের মূল্যও বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি বলেন, ডিমের বাজারে প্রতিদিন কয়েক হাজার উৎপাদনকারী ও পাইকারি বিক্রেতারা বেচাকেনা করে। এতো সংখ্যক লোক যখন একটা বাজারে বেচাকেনা করে সেই বাজারে কোনো সিন্ডিকেট থাকতে পারে না। ডিমের বাজার একটা প্রতিযোগিতাপূর্ণ বাজার। এই বাজারে সিন্ডিকেট কাজ করতে পারে না। বড় খামারিগুলো মোট ডিমের চাহিদার ২০ শতাংশ উৎপাদন করে, আর বাকি ৮০ শতাংশ উৎপাদন করে প্রান্তিক ছোট খামারিগুলো। বন্যা, গরম ও অতিবৃষ্টির কারণে অনেক প্রান্তিক খামার ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। এতে করে ডিমের উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। চাহিদার তুলনায় বাজারে ডিমের যোগান কম। তাছাড়া মুরগির খাদ্যের মূল্যও বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আপনারা দয়া করে একজন কমিশনে একজন অর্থনীতিবিদকে নিয়োগ দিয়ে বাজার বিশ্লেষণ করেন, তাহলে কোথায় সমস্যা আপনারা বুঝতে পারবেন।
প্রতিযোগিতা কমিশনের দুর্বলতা নিয়ে জানতে চাইলে কমিশনের সাবেক পরিচালক খালিদ এ নাসের বলেন, প্রতিযোগিতা কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো বাজার এনালাইসিস করা। কেন নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি হলো, এর পেছনে কি কি কারণ থাকতে পারে, সেটা খুঁজে বের করা। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য প্রতিযোগিতা কমিশনে বাজার গবেষণা করার জন্য একজন অর্থনীতিবিদও নেই। আবার এই কমিশনে একজন আইন বিশেষজ্ঞ নেই। আমি মনে করি প্রতিযোগিতা কমিশনকে যথাযথ ভূমিকা রাখতে হলে এখানে অর্থনীতিবিদ প্রয়োজন। আইনি কাঠামো স্বচ্ছ করা প্রয়োজন।
আইনি কাঠামোর সংস্কার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার নাজিয়া কবির বলেন, সত্যিকার অর্থে স্বচ্ছতা ও ন্যয়বিচার প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে প্রতিযোগিতা কমিশন আইন ২০১২ এর ৩৭ (২) ধারা অবিলম্বে বাতিল পূর্বক প্রতিযোগীতা আইন, ২০১২ সংস্কার করা জরুরি। তা না হলে কমিশনের ও সরকারের উপর জনগণের এবং অংশীজনদের আস্থার সংকট বাড়বে।
এদিকে কমিশনের একাধিক আদেশ হাইকোর্ট স্থগিত করেছেন। তাছাড়া কমিশনের আর্থিক বিষয় নিয়ে জনস্বার্থে মামলা করা হয়েছে, যেগুলো এখনো বিচারাধীন। কমিশনের নিজের কাছেও রয়েছে বিচারাধীন কয়েক ডজন মামলা। এমতাবস্থায় প্রতিযোগিতা কমিশন বা তার কোনো সদস্যের যাকে তাকে মামলা দিয়ে হয়রানি করা কতটুকু আইনসম্মত সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রতিযোগীতা আইনবিদ সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার হামিদুল মিসবাহ।
তিনি বলেন, আইন অনুযায়ী কমিশন গঠন করতে হবে অর্থনীতি, আইন, ও বাজার বিষয়ে অনুন্য ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের সমন্বয়ে। কিন্তু ২০১৯ সাল থেকে কখনোই অর্থনীতি, আইন, বা বাজার বিষয়ে অনুন্য ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কোনো ব্যক্তিদের নিয়ে কমিশন গঠিত হয়নি। যার ফলে প্রতিযোগিতা কমিশন তার করণীয় কার্যক্রম ভুলভাবে সম্পাদন করেছে পাশাপাশি আইন ভঙ্গ করেছে এবং কমিশনের অনেক কার্যক্রমও যে বেআইনি তা স্পষ্ট পরিলক্ষিত হচ্ছে।
আইনসম্মতভাবে কমিশন গঠন না করা, মামলা কিভাবে পরিচালন হবে সে বিষয়ে কোনো বিধি না করেই মামলার কার্যক্রম পরিচালনা করা, অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ না করে তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে বিবাদীকে জরিমানা আরোপ করে আদেশ প্রদান করা, এগুলো সবই বেআইনী যা কমিশন একের পর এক করে গেছে এবং এখনো করছে। সঙ্গত কারণেই হাইকোর্ট কমিশনের বেশ কয়েকটি আদেশের বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ দিয়েছেন।
ব্যারিস্টার হামিদুল মিসবাহ বলেন, আমি মনে করি দেশের ও জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে প্রতিযোগিতা কমিশনকে আইনে উল্লেখিত পন্থায় পুনর্গঠন করতে হবে এবং কারও বিরুদ্ধে মামলা করতে হলে বা শাস্তি দিতে হলে তা আইন মেনে করতে হবে। মামলার কার্যক্রম ভুলভাবে পরিচালনা করা বন্ধ করতে হবে। তা না হলে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ থেকে বিরত থাকবে। এর ফলে বাজারে পণ্যের যোগানে ঘাটতি দেখা দিবে এবং পণ্যের মূল্য বাড়তে থাকবে। এতে অস্থিতিশীল হবে বাজার। আর এর খেসারত দিতে হবে দেশের জনগণ ও অর্থনীতিকে।
তিনি বলেন, প্রতিযোগিতা কমিশনকে সংস্কার করে নতুন রূপে গঠন ও আইনসম্মতভাবে কার্যাবলি সম্পাদন নিশ্চিতকরণে জাতীয়স্বার্থে হাইকোর্ট বিশেষ দিকনির্দেশনামূলক আদেশ প্রদান করতে পারেন। প্রয়োজনে আমরা এ বিষয়ে হাইকোর্টের দৃষ্টিতে আনব।
মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী কাউকে শান্তিরক্ষা মিশনে পাঠানো হবে না: সেনাপ্রধান
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।