জুমবাংলা ডেস্ক: গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলায় নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিষমুক্ত নিরাপদ সবজি চাষ করা হচ্ছে। এই উপজেলার ফুলকপির ক্ষেত জুড়ে হলুদ, নীল ও সাদা ফাঁদ।
এসব ফাঁদে যুক্ত করা হয়েছে আঠা। জাব পোকা, মাছিসহ সবজি ক্ষেতের ক্ষতিকর সব পোকা ফাঁদে আঠায় আটকা পড়ে মারা যাচ্ছে। সেই সাথে বসনো হয়েছে সেক্স ফেরোমেন ফাঁদ। এ ফাঁদে পুরুষ পোকা দমন করা হচ্ছে। তাই ক্ষেত বিনষ্টকারী পোকা বংশ বিস্তার করতে পারছে না।
ক্ষেতে ব্যবহার করা হচ্ছে ভার্মিকম্পোস্ট সার। আর জৈব বালাই নাশক দিয়ে অন্যন্য পোকা-মাকড় নিধন করা হচ্ছে। এইসব নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানবদেহের জন্য নিরাপদ বিষমুক্ত সবজি চাষ করা হচ্ছে।
জেলার কোটালীপাড়া উপজেলার কুশলা ইউনিয়নের লাখিরপাড় গ্রামে ১০ জন কৃষক পরীক্ষামূলক ভাবে ৩০০ শতাংশ জমিতে বিষমুক্ত নিরাপদ ফুল কপির আবাদ করেছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বাংলাদেশে বালইনশকের ঝুঁকি হ্রাস প্রকল্পের আওতায় এ সবজির আবাদ হয়েছে। ক্ষেত থেকে ফুলকপি তোলার পর এখানে এ পদ্ধতিতে চিচিঙ্গার আবাদ হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কোটালীপাড়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা দেবাশীষ দাস বলেন, হেক্টরে ফুলকপির গড় ফলন ১৮ মেট্রিক টন। অর্গানিক এ পদ্ধতির চাষাবাদেও হেক্টরে প্রায় ১৮ মেট্রিক টন ফলন পাওয়া গেছে। ভবিষ্যতে আমাদের ক্যান্সার, কিডনীরোগ, লিবার সিরোসিস, হৃদরোগ, ডায়াবেটিসহ জটিল থেকে থেকে সুরক্ষা পেতে নিরাপদ সবজি উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে। নতুন এ পদ্ধতিতে সবজির চাষাবাদ সম্প্রসারিত হলে আমাদের নিরাপদ সবজি উৎপাদন বাড়বে। লাখিরপাড় গ্রামের কৃষকরা নতুন পদ্ধতির ফুলকপির চাষাবাদ দেখে আগামী বছর তারা এ চাষাবাদ সম্প্রসারণের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
লাখিরপাড় গ্রামের কৃষক দলের দল নেতা পুনুরদান ফলিয়া বলেন, এ প্রযুক্তিটি আমাদের কাছে নতুন। ফুলকপি চাষাবাদে ক্ষেতে কেমিক্যাল সারের পরিবর্তে ভার্মি কম্পোষ্ট বা জৈব ব্যবহার করেছি। পোকা মাকড় দমনে কোন বিষ প্রয়োগ করা হয়নি। এখানে ৪ রকমের ফাঁদ ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া কোটালীপাড়া কৃষি অফিস জৈব বালইনাশক তৈরি ও ব্যবহার শিখিয়েছে। এগুলো প্রয়োগ করেছি। তাই কম খরচে উৎপাদিত এ ফুলকপি মানব দেহের জন্য নিরাপদ। খেতে সুস্বাদু। তাই বাজারে ক্রেতা জানান সাথে সাথে একটু বেশি দামে এ ফুলকপি কিনে নেন।
কৃষক আনন্দ বিশ্বাস বলেন, আমি ৫০ শতাংশ জমিতে ফুলকপি আবাদ করছি। এতে খরচ হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার টাকা। এ পর্যন্ত ২শ’ মণ ফুলকপি বিক্রি করেছি। আরো ১০ মণ ফুলকপি বিক্রি করতে পারব। খরচ বাদে এ ফুলকপি থেকে আমি ৫০ হাজার টাকা আয় করব। এ বছর কোটালীপাড়া কৃষি অফিসের পরামর্শে কৃষির এ নতুন প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে ফুলকপিতে সাফল্য পেয়েছি। ফুলকপির মধ্যেই চিচিঙ্গা লাগিয়েছি। চিচিঙ্গা একই পদ্ধতিতে চাষাবাদ হবে। এ পদ্ধতির চাষাবাদে কীটনাশকের খরচ নেই। তাই লাভ বেশি হয়।
একই গ্রামের কৃষাণী সুষমা বলেন, আমাদের ফুলকপি চাষাবাদ দেখে আশপাশের কৃষকরাও আগামীতে এইভাবে ফুলকপি চাষ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কোটালীপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিটুল রায় বলেন, সরকার নিরাপদ সবজি চাষের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। তাই কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তদর নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিরপদ সবজি আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য প্রকল্প গ্রহণ করেছে। আমরা কোটালীপাড়ায় এ প্রথম নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে সফল হয়েছি। কৃষককে আমরা এ প্রযুক্তি সম্পর্কে জানান দিতে পেরেছি। তাদের হাতে কলমে এটি শিখিয়েছি। নিরাপদ সবজির ফলনও ভালো হয়েছে। তাই নিরাপদ সবজির আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে মানুষ এটি নিশ্চিন্তে গ্রহণ করতে পারবেন। জটিল রোগে আক্রন্ত হওয়ার প্রবণতা কমে আসবে। প্রকল্পের উদ্দেশ্য সফল হবে।-বাসস
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।